আন্তর্জাতিক

জিম্বাবুয়েতে উত্তেজনা কেন?

জিম্বাবুয়ের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল জানু-পিএফের যুব শাখা বলছে, দলের কর্মীরা প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের জন্য মরতে প্রস্তুত আছে। মুগাবে নেতৃত্বাধীন জানু-পিএফে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপের পর দলটির নেতারা এই ঘোষণা দেন।

Advertisement

জানু-পিএফ’র যুব শাখার নেতা কুদজাই চিপাঙ্গা বলেছেন, দেশের নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারা সেনাবাহিনীকে নাক গলানোর সুযোগ দেবেন না। মুগাবে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতচ্যুত করার পর সেনা অভ্যুত্থানের শঙ্কা তৈরি হয়েছে জিম্বাবুয়েতে।

সামরিক পদক্ষেপে দ্বিধা নয়; হুমকি সেনাবাহিনীর

দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর সরাসরি সম্প্রচারিত এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট মুগাবের আশ-পাশের অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে সেনাবাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত বাসভবনের কাছে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। তবে অভ্যুত্থানের কথা উড়িয়ে দিয়ে সেনাবাহিনী বলছে, প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপদে আছেন।

Advertisement

আল-জাজিরা বলছে, জিম্বাবুয়ে সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল এসবি মোয়ো জাতীয় টেলিভিশনের নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনী নেয়ার পর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। তার এই ভাষণের পর রাজধানী হারারেতে অবস্থিত সরকারি বিভিন্ন কার্যালয়মুখী সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

রাজধানী হারারেতে এক সংবাদ সম্মেলনে কুদজাই চিপাঙ্গা বলেছেন, ‘সংবিধানে চিড় ধরার জন্য সেনাবাহিনীর পদক্ষেপে আমরা হাত গুটিয়ে থাকবো না।’ দেশটির সেনাপ্রধান কন্সট্যান্টিনো চিওয়েংগা বিরল এক বিবৃতিতে ক্ষমতাসীন জানু-পিএএফ পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেয়ার একদিন পর চিপাঙ্গা ওই মন্তব্য করেন।

জিম্বাবুয়ের এই সঙ্কটের সূত্রপাত হয়েছে ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন এমন্যানগ্যাগওয়াকে বরখাস্ত করার পর। এমারসনের সঙ্গে সেনাবাহিনী প্রধান ও দেশটির স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন প্রবীণ এক নেতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ৯৩ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট মুগাবের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে গত সপ্তাহে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ফার্স্ট লেডি গ্রেসি মুগাবেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার পথ পরিষ্কার করা হয়েছে বলে দেশটির রাজনীতিকরা বলছেন। এমন্যানগ্যাগওয়াকে সরিয়ে দেয়ার পর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফার্স্ট লেডিকে সমর্থন দিচ্ছে জানু-পিএএফ যুব লীগ।

Advertisement

তবে সেনা অভ্যুত্থানের শঙ্কা দেখা দিলেও জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট মুগাবে এবং ফার্স্ট লেডি গ্রেসি মুগাবে এখন পর্যন্ত জনসম্মুখে আসেননি। গত ৩৭ বছর ধরে দেশটির শাসন ক্ষমতায় থাকা মুগাবের নেতৃত্ব হুমকিতে রয়েছে।

সেনাবাহিনীর হুমকির পর দেশটির বিরোধী দল মুভমেন্ট ফর ডেমোক্রেটিক চেইঞ্জ (এমডিসি) দেশটির বেসামরিক শাসন রক্ষায় জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

নেতৃত্বের লড়াই

ব্রিটেনভিত্তিক সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ল্যান্স গুমা জিম্বাবুয়ে সঙ্কটের ব্যাপারে বলেন, ক্ষমতার চার দশকের মধ্যে মুগাবে এই প্রথম বড় ধরনের সামরিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। সেনাবাহিনী পেশিশক্তির প্রদর্শন করছে।

গুমা বলেন, ‘তারা (সেনাবাহিনী) বেসামরিক সরকারকে বলছে, সেনাবাহিনীই দেশের প্রকৃত শক্তি। কিন্তু আমি মনে করি না যে, সেখানে অভ্যুত্থানের শঙ্কা আছে। ওই অঞ্চল সেনাবাহিনীর এ ধরনের কর্মকাণ্ড মেনে নেবে না।’

১৯৮০ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে জিম্বাবুয়ে শাসন করছে জানু-পিএফ। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটির শাসন-ক্ষমতায় পরিবর্তন খুব সহজ হবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জর্জ শায়ার বলেন, জিম্বাবুয়ের রাজনৈতিক পরিসরে জানু-পিএফের আধিপত্য প্রশ্নাতীত। আপনি যা দেখছেন; তা হলো রাজনৈতিক নেতৃত্বের লড়াই, যা চলছে হারারের নিজস্ব ঢংয়ে।

এসআইএস/আইআই