দুই বলে দরকার চার। বোলার খুলনা টাইটান্স পেসার কার্লোস ব্রাথওয়েট । স্ট্রাইকে ঢাকা ডায়নামাইটসের জহুরুল ইসলাম অমি। শেরে বাংলায় টান টান উত্তেজনা। গ্যালারিতে দুই দলের ভক্ত ও সমর্থকরা নিজ দলের ক্রিকেটারদের সমর্থন, করতালি আর স্লোগান বাদ দিয়ে সৃষ্টিকর্তার আনুকুল্যর আশায়।
Advertisement
এমন পরিস্থিতিতে ব্রাথওয়েটের ফুললেন্থ ডেলিভারি , জহুরুল রিভার্স সুইপ খেললেন । বল শর্ট থার্ডম্যান ফিল্ডারের নাগালের বাইরে দিয়ে চলে গেলো সীমানার ওপারে। এরই সঙ্গে ৪ উইকেটের দারুণ এক জয়ের আনন্দে মাতলো সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটস।
বিপিএল জমছে না , এবারের আসর ঠিক আলো ছড়াতে পারছেনা-যখন এ কথাগুলো সবার মুখে মুখে ঠিক তখনই এবারের বিপিএলের সবচেয়ে জমজমাট ও রুদ্ধশ্বাস প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঠাসা লড়াই হলো ঢাকা ডায়নামাইটস ও খুলনা টাইটান্সের।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের দুই সেরা ও বিপজ্জনক উইলোবাজ ক্রিস গেইল আর ব্র্যান্ডন মাককালাম এখনো আসেননি। তবে জানা গেছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের গেইল আর নিউজিল্যান্ড তারকা ম্যাককালাম আসছেন আগামী ১৮ নভেম্বর।
Advertisement
এছাড়া পাকিস্তানের আলোচিত পারফরমার মোহাম্মদ আমির,বাবর আজম ও হাসান আলী এবং শোয়েব মালিকও আসেননি। তারাও ১৮ নভেম্বর নাগাদ চলে আসবেন। এই নামী তারকারা ছাড়াও ইতিমধ্যেই এক ঝাঁক নামী-দামি তারকা ঠিকই খেলছেন। তারপরও কেনো যেন সেভাবে আলো ছড়াতে পারছিলো না এবারের বিপিএল।
সিলেটের আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে প্রথম পর্বটা মোটামুটি জমজমাট ও আকর্ষণীয় হলেও হোম অফ ক্রিকেট শেরে বাংলায় এসে বিপিএল আলো ছড়ানোর বদলে উল্টো যেন কেমন ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে পড়েছিল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই দর্শক বিনোদন। চার-ছক্কার ফুলঝুরি। রানের ফলগুধারা আর জমজমাট লড়াই। তার অনেকটাই ছিল অনুপস্থিত।
তবে আজ দুপুরের ম্যাচে মিললো সে দর্শক বিনোদনের খোরাক। ছক্কার অবাধ প্রদর্শনী হলো। দুই ক্যারিবীয়ান কার্লোস ব্রাথওয়েট আর কাইরন পোলার্ডের ব্যাট থেকে গুণে গুণে এক ডজন ছক্কার মার দেখলেন দর্শক, ভক্ত, সমর্থকরা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ মূল দলের হয়ে খেলা এই দুই দীর্ঘ দেহী হার্ডহিটারের বিগ হিটিং প্রাণ ভরে উপভোগ করেছেন দর্শকরা। আর সে কারণেই ঢাকা ডায়নামাইটস ও খুলনা টাইটান্সের ম্যাচটি হয়ে উঠেছিল উপভোগ্য।
Advertisement
টান টান উত্তেজনার ম্যাচে শেষ হাসি ঢাকা ডায়নামাইটসের। ম্যাচের প্রথম অংশের হিরো খুলনা টাইটান্সের অলরাউন্ডার ব্রাথওয়েট।
শুরু থেকেই তার দল ব্যাকফুটে। ৫ ওভার , ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে আর ইনিংসের মাঝামাঝি খুলনার স্কোর ছিল খুবই কম। ১০ ওভার শেষে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাহিনীর রান ৩ উইকেটে ৪৭। এমনকি ১৫ ওভার শেষেও স্কোরবোর্ডের জীর্ন দশা ; ৯৩/৪। সেখান থেকে ২০ ওভার শেষে রান গিয়ে ঠেকলো ১৫৬/৫ ‘তে।
ছয় নম্বরের উইকেটে যাওয়ায় ব্রাথওয়েট শেষ ৫ ওভারে উইকেটের চারিদিকে ছক্কার নহর বইয়ে উপহার দিলেন ২৯ বলে ৬৪ রানের ঝড়ো ইনিংস। যার মাঝে ছিল ছয় ছয়টি বিশাল ছক্কার মার।
১৫ ওভার শেষে খুলনার রুসোর রান ছিল ২০ বলে ২০। আর ব্রাথ্রয়েটের ব্যক্তিগত সংগ্রহ ছিল ১৩ বলে ১৯। সেখান থেকে শেষ ১৬ বলে ৪৫ রান করেন ব্রাথওয়েট।
খুলনা ইনিংসের চেহারা পাল্টাকে শুরু করে ১৫ নম্বর ওভারে ; শহীদ আফ্রিদীর এক ওভারে দুই ছক্কা সহ ১৪ রান তোলেন ব্রাথওয়েট। প্রথমে সোজা ব্যাটে পরের বার ডিপ মিড উইকেট দিয়ে। এরপর ১৬ নম্বর ওভারে সাকিবও বেদম মার খান ব্রাথওয়েটের হাতে দুই বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ১৭ রান তুলে নেন ক্যারিবীয় ব্রাথওয়েট।
১৯ নম্বর ওভারে স্বদেশী সুনিল নারিন (১৫ রান) আর ২০ নম্বর ওভারে পেসার অাবু হায়দার রনিকে বেধরক পিটিয়ে ( দুই ছক্কা সহ ১৬ রান) স্কোর ১৫০ পার করে দেন ব্রাথওয়েট।
পাল্টা ব্যাটিংয়ে নেমে প্রায় একই অবস্থা ঢাকারও। আগের ম্যাচের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ আফ্রিদি এক রানে আউট। সুনিল নারিনও সুবিধা করতে পারেননি। সে কারণেই ১০ ওভার শেষে খুলনা ( ৪৭/৩) আর ঢাকা ( ৪৮/৫) ছিল প্রায় সমান সমান অবস্থান। বরং ঢাকা দুই উইকেট বেশী খুইয়ে ফেলেছিল।
অধিনায়ক আশা জাগাচ্ছিলেন। প্রথমে কভার ড্রাইভ , পরে পয়েন্ট দিয়ে একজোড়া বাউন্ডারি হাকিয়ে মাঠ গরম করা সাকিব আউট হন খুলনা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অফস্পিনে পুল করতে গিয়ে। এরপরই শুরু হয় কাইরন পোলার্ড ঝড়।
ঢাকা ইনিংসের সব দায় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে উইকেটের সামনে ও দুদিকে ছক্কা আর চারের নহর বইয়ে দেন এ দীর্ঘদেহী ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলরাউন্ডার। পোলার্ডের ব্যাটিং তান্ডবে ১১ থেকে ১৫; এই ৫ ওভারে ওঠে ৬৭ রান। যার মধ্যে পোলার্ড একাই করেন ৫২। ৪৮ রান আসে শুধু ছক্কা ও চার দিয়ে।
১১ নম্বর ওভারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ওপর ভীষণ বেগে চড়াও হয়ে খেলার চিত্র পাল্টে দেন পোলার্ড। ঐ ওভারে চার ছক্কা হাকিয়ে ২৫ রান তুলে নেন পোলার্ড। দ্বিতীয় , তৃতীয় , পঞ্চম ও ষষ্ঠ বলে ছক্কা খান মাহমুদউল্লাহ।
এরপর ব্রাথওয়েটের করা ১৩ নম্বর ওভারে দুই ছক্কা ও দুই বাউন্ডারিতে ২০ রান তুলে নেন পোলার্ড। শেষ পর্যন্ত তাকে ফেরান শফিউল। ১৫ নম্বর ওভারের চার নম্বর ডেলিভারিতে শফিউলের স্লো শর্ট ডেলিভারি পুল করতে গিয়ে মিসটাইমিং হলে উইকেট কিপার ধীমান দৌড়ে আকাশে ওঠা ক্যাচ ধরে পোলার্ডকে ফেরান।
২৪ বলে ছয় ছক্কা ও তিন বাউন্ডারিতে সাজানো ৫৫ রানের হ্যারিক্যান ইনিংসটিই ঢাকাকে জয়ের পথ দেখায়। পোলার্ড বিদায় নেবার পর ৩২ বলে ঢাকার প্রয়োজন পড়ে ৪৩ রানের। হাতে চার উইকেট। এমন অবস্থায় দরকার ছিল ঠান্ডা মাথায় খেলা। সেই কাজটি দারুণ দক্ষতার সাথে সম্পাদন করেন জহুরুল ইসলাম অমি।
একদিক আগলে রাখার পাশাপাশি ওভার পিছু প্রয়োজনীয় রান তুলে নেবার কাজটিও বেশ ভালো ভাবেই করে দেখান জহুরুল। ৩৯ বলে ৪৫ রানের হার না মানা ইনিংসটিই শেষ পর্যন্ত এক বল আগে ঢাকাকে পৌছে দেয় জয়ের বন্দরে।
ব্রাথওয়েট আর পোলার্ডের ঝড়ো ও উত্তাল উইলোবাজির পরও শেষ পর্যন্ত তাই ম্যাচ সেরা জহুরুল।
এমএমআর/এমএস