বোর্ড থেকে এখনো কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। পদত্যাগ করা চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আর বাংলাদেশের কোচ থাকছেন না- এমন কথাও বোর্ড থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। জাগো নিউজের পাঠকরা আগের দিনই জেনে গেছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে। ভেতরের খবর, শুধু পদত্যাগপত্র জমা দেয়াই নয়, হাথুরু না করে দিয়েছেন; ‘তিনি আর বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে কোচিং করাবেন না।’
Advertisement
যেহেতু বোর্ড থেকে হাথুরুকে ১৫ নভেম্বর আসতে বলা হয়েছে, তাই সে পর্যন্ত আপাতত অপেক্ষা। হাথুরু না আসলে হয়ত আগামী পরশু বিকেল বা সন্ধ্যা নাগাদই বিসিবি থেকে আসবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
এদিকে যেহেতু ভিতরে ভিতরে হাথুরু অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে ধরেই পরবতী করণীয় ঠিক করার তোড়জোড় বিসিবিতে। তাই জানা গেছে, নীরবে সতর্ক এবং সাবধানে কোচ খোঁজার মিশনও শুরু হয়ে গেছে। তা যে হয়েছে, তার আগাম ইঙ্গিতও আছে। ৪৮ ঘণ্টা আগে বিসিবি পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস আকার ইঙ্গিতে বলেও দিয়েছেন, বিদেশি কোচ খোঁজা হচ্ছে, তবে সেটা চট-জলদি মানে এখনই নয়।
এবার জাতীয় দলের হেড কোচ নিয়োগে একটু ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করবে বিসিবি। সামনের হোম সিরিজে একজন দেশি কোচকে দিয়ে কাজ চালানোর চিন্তাই চলছে। এরপর একজন ভালো মানের বিদেশি কোচ নিয়োগ দেয়ার চেষ্টাও চলবে। তবে জালাল ইউনুসের কথা শুনে মনে হচ্ছে ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির কথা ভেবে এবার অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে উপমহাদেশের কোচদের কথাই ভাবা হচ্ছে বেশি।
Advertisement
একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকায় বিপিএলে খুলনা টাইটান্সের কোচ হিসেবে আসা সাবেক লঙ্কান অধিনায়ক মাহেলা জয়বর্ধনেকে নাকি ইতোমধ্যেই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আরেক লঙ্কান তারকা ও সাবেক অধিনায়ক কুমারা সাঙ্গাকারার নামও নাকি আছে সম্ভাব্য বিদেশি কোচের তালিকায়।
এদিকে ক্রিকেট পাড়ায় আরও খবরও চাউর হয়েছে। সেটা হলো- বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক এবং বর্তমান বোর্ড পরিচালক ও টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনও নাকি আছেন বিশেষ বিবেচনায়। এমন খবরও ছড়িয়ে পড়েছে, ‘জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়কও হেড কোচ হয়ে যেতে পারেন।’
প্রসঙ্গতঃ জাতীয় দল থেকে অবসরের পর বাংলাদেশ জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্টের অংশ হয়ে গেছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। ক্লাব ও বিপিএলে কোচিং করানোর পাশাপাশি জাতীয় দলের সহকারী কোচ ও গত চার-পাঁচ বছরের বেশিরভাগ সময় টিম বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যানেজারের দায়িত্বও পালন করেছেন সুজন।
ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট ও বিপিএলকে সাফল্যের নিয়ামক ধরলে, খালেদ মাহমুদ সুজন গত কয়েক বছরে দেশের সফলতম কোচ। তার কোচিংয়ে ঢাকা ডায়নামাইটস গতবারের বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন। এবারের প্রিমিয়ার লিগে না পারলেও গতবারের প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর কোচ ছিলেন সুজন।
Advertisement
এবারো ঢাকা ডায়নামাইটসে তার অধীনে বাংলাদেশের তথা বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অন্যতম শীর্ষ তারকা সাকিব আল হাসান, শ্রীলঙ্কান তারকা কুমারা সাঙ্গাকারা, পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহিদ আফ্রিদি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনিল নারিন, কাইরণ পোলার্ড ও এভিন লুইসের মতো ক্রিকেটাররা খেলছেন।
এসব বড় বড় তারকাদের সামলানো, লক্ষ্য-পরিকল্পনা স্থির করার পাশাপাশি কৌশল আঁটা ও ছক কষার গুরুত্বপূর্ণ কাজ দক্ষতার সঙ্গেই সামলাচ্ছেন সুজন। মোট কথা, খেলোয়াড়ি জীবন থেকে ‘লড়াকু’ উপাধি গায়ে আঁটা সুজনের প্রশিক্ষণ ক্ষমতাও প্রমাণিত। তাই তার নাম সম্ভাব্য কোচের তালিকায় থাকতেই পারে এবং আছেও।
তারপরও তিনি শেষ পর্যন্ত কোচ হবেন কি-না? তা নিয়ে আছে বড় ধরনের সংশয়। কারণ বোর্ডের নীতি নির্ধারকদের একটা অংশ নাকি বিদেশি কোচের ওপর দায়িত্ব দিতে আগ্রহী। তাদের কথা, ‘সিনিয়র ক্রিকেটাররা স্থানীয় কোচদের সেভাবে মানতে চায় না। স্থানীয় কোচদের পক্ষে সিনিয়র ক্রিকেটরদের সামলানো কঠিন। এ চিন্তায় খালেদ মাহমুদ সুজনের চেয়ে বিদেশি কোচের কথা ভাবা হচ্ছে বেশি।’
তবে তাকে আগামী ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার সাথে হোম সিরিজ এবং একই সময় বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে সম্ভাব্য তিন জাতি টুর্নামেন্টেও কোচের দায়িত্ব দেয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। যাকে নিয়ে এতো চিন্তা-ভাবনা ও কথা-বার্তা, সেই খালেদ মাহমুদ সুজন কি ভাবছেন এসব নিয়ে? তিনি কি জাতীয় দলের হেড কোচ হতে আগ্রহী? নাকি ম্যানেজরের দায়িত্ব পালন করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন?
জাগো নিউজের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, মূলতঃ খালেদ মাহমুদ সুজন কায়মনোবাক্যে চান জাতীয় দলের হেড কোচ হতে। প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি কি জাতীয় দলের প্রধান প্রশিক্ষক হতে আগ্রহী?। জাগো নিউজের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন রাখা হলে খালেদ মাহমুদ সুজনের প্রত্যয়ী জবাব, ‘বোর্ড আমার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখলে আমি অবশ্যই জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। তবে সেটা হতে হবে দীর্ঘ মেয়াদে। আমাকে কোচ হিসেবে অফার করা হলে, তা সানন্দে গ্রহণ করবো। আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন, জাতীয় দলের কোচ হওয়া। আমি মনে মনে, এ স্বপ্নই লালন করি। নিজেকে সেভাবে তৈরির চেষ্টাও করছি। এখনো করি। আমার বিশ্বাস, আমাকে দায়িত্ব দেয়া হলে তা পালন করতে পারবো।’
জাতীয় দলের কোচ হবার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও খালেদ মাহমুদ সুজন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, সেটা হতে হবে দীর্ঘ মেয়াদের। স্বল্প সময়ের জন্য বা কোন সিরিজে ঠেকা কাজ চালানোর দায়িত্ব নিতে তেমন একটা উৎসাহি নন তিনি। তার কথা, ‘দীর্ঘ মেয়াদে কোচের দায়িত্ব পালন করার প্রস্তাব ছাড়া আমি স্বল্প মেয়াদে কোচিং করাবো কি না? তা এখনো ঠিক করিনি। করবো না, তা যেমন নিশ্চিত করে বলতে পারছি না, আবার করবোই- তাও জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।’
অনেকেই ভাবছেন, শেষ পর্যন্ত একজন হাই প্রোফাইল বিদেশি কাচের হাতে জাতীয় দল পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে হয়তো খালেদ মাহমুদ সুজনকে বিদেশি কোচ আসার আগের সময়টায় কোচের দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হবে। তবে সুজনের কথা-বার্তায় এবং শরীরি অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট বোঝা গেছে, তিনি সে প্রস্তাবে নাও রাজি হতে পারেন। আর সে কারণেই জাগো নিউজকে তিনি বলেছেন, ‘এবার আমি ছাড়া অন্য কাউকেও মধ্যবর্তী কোচের ভূমিকায় দেখা যেতে পারে।’
এআরবি/আইএইচএস/আইআই