লালমনিরহাটের অভ্যন্তরে বিলুপ্ত ছিটমহলের নতুন বাংলাদেশিদের কাছে জমির চূড়ান্ত খতিয়ান বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিলুপ্ত ছিটমহলের অধিবাসীদের জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে এখন আর কোনো বাধা থাকল না। জমির চূড়ান্ত খতিয়ান পেয়ে নতুন বাংলাদেশিরা অনেক খুশি।
Advertisement
সোমবার সকালে হাতীবান্ধা উপজেলার সেটেলমেন্ট অফিস বিলুপ্ত ছিটমহল বাসিন্দার কাছে জমির চূড়ান্ত খতিয়ান বিতরণ করেন। এর আগে রোববার থেকে জমির চূড়ান্ত খতিয়ান প্রদান শুরু হয়।
লালমনিরহাট সেটেলমেন্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট সদর উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল বাঁশপচাই পরিবর্তন হয়ে ধাইরখাতা মৌজার অধীনে ২৬৯টি খতিয়ান সংযুক্ত হয়েছে। এছাড়া বোয়ালমারী বাঁশপচাই পরিবর্তন হয়ে বনগ্রাম মৌজার অধীনে সংযুক্ত করা হয়েছে ৪৭৯টি খতিয়ান। পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ও পাটগ্রাম পৌরসভা ছাড়া ৭টি ইউনিয়নের মোট ২১টি মৌজার অধীনে ৪ হাজার ২৭৬টি মূল খতিয়ান সংযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারি ইউনিয়নের অভ্যন্তরে বিলুপ্ত উত্তর গোতামারি ১৩৫ ও ১৩৬ নম্বর ছিটমহল দুটির জমি উত্তর গোতামারি মৌজার অধীনে মোট ২৮৯টি মূল খতিয়ানে সংযুক্ত করা হয়েছে।
Advertisement
দীর্ঘ ৬৭ বছর পর ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় হলে বিলুপ্ত ছিটমহলে বসবাসরত লোকজনের ভূমি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে সরকার। এতদিন জমির মালিকানা ছিল না এসব অধিবাসীর। ভারত-বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২টি ছিটমহলের বসবাসকারী অধিবাসীরা জানতো না তারা কোন দেশের নাগরিক। তাদের সেই পরিচয়ও ছিল না। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ছিটমহল বিনিময় হলে এসব ভূখণ্ডে বসবাসকারী অধিবাসীরা পরিচয় পান।
এরপর বদলে যেতে থাকে তাদের ভাগ্য। জাতীয় পরিচয়পত্র বুঝে পাওয়ার পর ভোটাধিকারও প্রয়োগের সুযোগ পান তারা। এবার পেলেন জমির মালিকানা।
আগামী ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিলুপ্ত ছিটমহলের নতুন বাংলাদেশিদের মধ্যে জমির মূল খতিয়ান ও নকশা বিতরণ অব্যাহত থাকবে। জেলার সদর উপজেলায় ৭৪৮টি, হাতীবান্ধায় ২৮৯টি ও পাটগ্রামে ৪ হাজার ২৭৬টি খতিয়ান বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
হাতীবান্ধা উত্তর গোতামারী বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, অনেক দিন পর জমির মালিকানা পেয়েছি। আমরা সকলেই খুশি।
Advertisement
উত্তর গোতামারী বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দা ছকবার আলী (৬০) বলেছেন, এতদিন আমাদের জমি থাকলেও কাগজ ছিল না। তাই কেনাবেচা করতে পারিনি। আজ আমরা নাগরিকত্ব ও জমির মালিকানা পেয়েছি।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, এসব খতিয়ান বিতরণ কার্যক্রমও শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। যদি কোনো ব্যক্তির কোনো আপত্তি বা অভিযোগ থাকে তাহলে গেজেট প্রকাশের পর তা নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনাল আদালতে নালিশ করতে পারবেন।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর কুতুবুল আলম বলেন, বিলুপ্ত ছিটমহলের এই অধিবাসীরা জমি ভোগদখল করলেও কেনাবেচা করতে পারতেন না। এসব বাংলাদেশি লোকজনের নামে জমির মালিকানা স্বরূপ দেয়া হচ্ছে মূল খতিয়ান। এখন তাদের জায়গা-জমি কেনাবেচনা করতে আর কোনো বাধা নেই। এমনকি ব্যাংক ঋণ পেতেও কোনো সমস্যা হবে না।
লালমনিরহাট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আহসান হাবীব বলেন, এসব খতিয়ানে কোনো ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করে সরকারিভাবে চূড়ান্ত ভলিউম বই প্রকাশ হবে গেজেট আকারে। গেজেট প্রকাশের দিন থেকে দুই বছরের মধ্যে কারো কোনো সমস্যা বা আপত্তি থাকলে তা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে নালিশ করে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি স্বত্ত প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।
রবিউল হাসান/এফএ/এমএস