অবশেষে আমন ধান ঘরে তুলতে শুরু করেছেন নড়াইলের কৃষকরা। আমন ধানের সোঁদা গন্ধে ভরে উঠছে আবহমান গ্রামীণ জনপদ। সোনালি মাঠ এখন হেমন্তের পাকা ধানে ভরপুর। মাঠে মাঠে শুরু হয়েছে ধান কাটার উৎসব।
Advertisement
এরপর হবে কৃষকের আঙিনায় সোনারাঙা ধানের ছড়াছড়ি, গোলাভরা ধান এবং ধান থেকে চাল। তারপর নানা রকম পিঠা-পুলি বানানো আর খাওয়ার ধুম। ইতোমধ্যে হাট-বাজারে নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে। তবে কৃষকের আশঙ্কা পাটের মতো ধানের বাজার দমে যাবে কিনা!
অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম, নলদী, কাশিপুর, লাহুড়িয়া, শালনগর, সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলে কমপক্ষে ২শ একর জমিতে বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণে কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ রক্ষা পেতে ১৮ অক্টোবর নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের রায়গ্রাম মাঠে তাবু পেতে কোরআন খানি, মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠান এবং তবারক বিতরণ করে। এরপর ১৯ অক্টোবর থেকে তিনদিনের টানা বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়ায় ১৬শ হেক্টর জমির আধা পাকা রোপা আমন ধান এবং ১২০ হেক্টর জমির সবজি ও মসলা জাতীয় শস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সম্প্রতি জেলার মাছের ভাণ্ডার বলে খ্যাত লোহাগড়ার বাড়িভাঙ্গা খাল এবং সদরের হাড়িভাঙ্গা খাল থেকে অবৈধভাবে মাছ ধরার জন্য একটি চক্র কয়েকদিন স্লুইচ গেট বন্ধ করে দেয়। এতে বিলের পানি দ্রুত অপসারণ না হওয়ায় এ অঞ্চলের আমন, রবি এবং বোরো আবাদ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
Advertisement
সদরের উজিরপুর গ্রামের কৃষক রহমান ফকির (৫৭) বলেন, এবার দেড় একর জমিতে চিকন ক্ষীরকোন এবং মোটা মাছরাঙ্গা ধানের চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। তবে প্রকৃত দাম পাব কিনা সেটাই আশঙ্কা। পাট চাষ করে দাম পাইনি। এখন যদি ধানের দাম না পাই তাহলে সংসার চালাব কিভাবে?
সদরের ধোপাখোলা গ্রামের কৃষক শংকর বিশ্বাস বলেন, ৫ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। ৮০ শতক জমির ধান পচন রোগে নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও ফলন খারাপ হয়নি। তবে আশঙ্কা রয়েছে ধানের মূল্য কমার।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৪০ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন এবং ৫ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে বোনা আমন ধানের চাষ হয়েছে।
শহরের রূপগঞ্জ বাজারের ধান ব্যবসায়ী উজ্জল কুন্ডু বলেন, বাজারে সবেমাত্র ধান উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে চিকন ব্রি-৩৯ ও বীনা-৭ সাড়ে ৮শ থেকে ৯শ টাকায় এবং মোটা স্বর্ণা ৮শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
Advertisement
কৃষি অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, এবার ৮৬ হাজার ৬৮৬ মে.টন চালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করা যায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। পোকার আক্রমণ এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগে ধান কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা গণনার মধ্যে আসেনি। কৃষক আমন ফলনে খুশি।
হাফিজূল নিলু/এফএ/এমএস