ইরাক-ইরান সীমান্তবর্তী এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই শতাধিক। ভূমিকম্পে আহত হয়েছে আরো ১৭শ মানুষ। রোববার রাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাগদাদ ও ইরানের পশ্চিমাঞ্চল। খবর এএফপি।
Advertisement
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৩। ইরাকের হালাবজা শহর থেকে ২১ মাইল দক্ষিণে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। লোকজন আতঙ্কে বাড়িঘর থেকে রাস্তায় নেমে আসে। ইসরায়েল এবং কুয়েতেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।
রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ইরানের কমপক্ষে আটটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পের পর ভূমিধসের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
ইরানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপণা সংস্থার মুখপাত্র বেহনাম সাইদি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ইরাকেই কমপক্ষে ১৪১ জন নিহত হয়েছে। সেখানে আরো ৮৫০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
Advertisement
ইরানের বেশ কয়েকটি প্রদেশে ভূমিকম্পের সময় প্রচণ্ড কম্পন অনুভূত হয়েছে। তবে কারমানসাহ প্রদেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেখানে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
ইরাক সীমান্ত থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কারমানসাহ প্রদেশ। সেখানকার সারপোল- ই জাহাব শহরে ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৯৭ জন নিহত হয়েছে। শহরের প্রধান হাসপাতালটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে শত শত আহত মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
কুর্দিশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরাকে কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরো কমপক্ষে ৫০ জন। ইরাকের আবহাওয়া কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরান সীমান্তের কাছে অবস্থিত কুর্দিস্তান অধ্যুষিত সুলাইমানিয়াহ প্রদেশের পেনজয়িনে ৬ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
ইরাক এবং ইরানের বেশ কিছু শহর বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। ভূমিকম্পের পর বেশ কিছু তীব্র কম্পনে কেঁপে উঠেছে বিভিন্ন এলাকা। ভূমিকম্পের আঘাতে বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দু’দেশের কয়েক হাজার মানুষকে এই তীব্র শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Advertisement
ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল রেজা রাহমানি ফাজলি এক টেলিভিশন সাক্ষাতকারে বলেন, রাতের বেলা হেলিকপ্টারে করে দুর্ঘটনা কবলিত এলাকায় পৌঁছানোটা কঠিন হয়ে পড়েছে। বেশ কিছু রাস্তা-ঘাটও বন্ধ হয়ে গেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজনের জন্য আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।
ইরানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেশিরভাগ বাড়ি-ঘরই কাদামাটি বা ইটের তৈরি। এগুলো ভূমিকম্পে খুব সহজেই ধসে পড়ে। সাধারণ মানুষকে সহায়তা করতে ইতোমধ্যেই সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
অপরদিকে, ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইরাকের দারবানদিখান শহর। কর্দিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী রেকাওয়াত হামা রাসেদ জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে শহরের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জেলার প্রধান হাসপাতালটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সেখানে বিদ্যুৎ নেই বলে আহতদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে সুলাইমানিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাসেদ।
টিটিএন/জেআইএম