ধর্ম

যে ধৈর্যের মাধ্যমে অর্জিত হবে ইসলামের প্রকৃত বিজয়

ইসলাম ধৈর্য ও সহমর্মিতার এক অন্যতম জীবন ব্যবস্থা। চরম বিপদ-আপদ, জুলুম-নির্যাতনের মাঝেও ধৈর্য ধারণ করা ঈমানদারের প্রকৃত গুণ। এ ধৈর্য ধারণের মাধ্যমেই অর্জিত হয় দুনিয়া ও পরকালের কাঙ্ক্ষিত বিজয়।

Advertisement

ইসলামের জন্য মানুষের জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম, দ্বীন প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করা সব মুসলমানের ঈমানের দাবি। যারা ইসলামের জন্য দুনিয়ার যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট ও নির্যাতনে ধৈর্য ধারণ করবে তাদের জন্য দুনিয়া ও পরকালে রয়েছে মহাপ্রতিদান। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করবে। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; যদি তোমরা বুঝতে পার।

তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আর তোমাদেরকে এমন সব জান্নাতে প্রবেশ করাবেন; যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে এবং তাদেরকে প্রবেশ করানো হবে সেই চিরস্থায়ী জান্নাতসমূহে। (সুরা সফ : আয়াত ১১-১২)

Advertisement

ঈমানের এ অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন হজরত খাব্বাব, হজরত বেলাল, হরজত আম্মার, হজরত সুমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাইনসহ অসংখ্য সাহাবা। আল্লাহর দ্বীনের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবি-রাসুলও আত্মত্যাগ করেছিলেন তাদের নবুয়তি জীবনে।

যুগে যুগে নমরুদ, ফেরাউন, হামান, কারুন, সাদ্দাদের নির্যাতন যেমন অব্যাহত ছিল তেমিন প্রিয়নবির আমলেও আবু জেহেল, আবু লাহাব এবং উতবা-শয়বারাও অত্যাচার নির্যাতনে সরব ছিল। যে ধারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে আজও বিদ্যমান। যার কিছু নমুনা পরিলক্ষিত হয় রাখাইন, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, বসনিয়া, চেচনিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বে।

এ সব বিপদে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধৈর্য ধারণের মাধ্যমে পরিপূর্ণ ঈমানদারের গুণে গুণাম্বিত হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন। যে ধৈর্য ধারণে আসবে ইসলামের প্রকৃত বিজয়। হাদিসে এসেছে-

হজরত খাব্বাব ইবনে আরাত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে গেলাম। তখন তিনি কাবা শরিফের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবেন না? (আমরাতো চরমভাবে নির্যাতিত)

Advertisement

আমাদের কথা শুনে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমাদের আগে যারা এ জমিনে দ্বীনের দাওয়াত দিতে এসেছিল; তাদেরকে (ইসলাম বিরোধী সমাজ ও রাষ্ট্র শক্তি)নির্যাতন করতো। তাদের জন্য জমিনে গর্ত করে সে গর্তে জীবন্ত কবর দেয়া হতো।

তাদের মাথার ওপর থেকে করাত দিয়ে জীবন্ত মানুষকে চিরে দ্বিখণ্ডিত করা হতো। এতো নির্যাতনের পরেও তাদেরকে আল্লাহর দ্বীন থেকে একচুল পরিমাণও সরানো সম্ভব হয়নি।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে লোহার চিরুনি দিয়ে তাদের শরীরের হাড় থেকে মাংসগুলো আলাদা করা হতো। তারপরও তাদেরকে আল্লাহর দ্বীন থেকে সরানো সম্ভব হয়নি।

(হে খাব্বাব, শুনে রাখ!) আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, এমন এক সময় আসবে যখন সানা থেকে হাজারামাউত পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় মানুষ বিচরণ করবে। এ মানুষগেোর মনের মধ্যে আল্লাহর ভয় ছাড়া অন্য কোনো ভয় থাকবে না।

আর মেষ পালের জন্য বাঘের আক্রমণের ভয় ছাড়া অন্য কোনো ভয়ও থাকবে না। অথচ তোমরা খুবই তাড়াহুড়ো করছ।’ (বুখারি)

পরিশেষে...বিপদে ধৈর্য ধারণের মাধ্যমে সফলতা লাভের উপায় সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি ভেবেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ এখনো তোমাদের নিকট তাদের মত কিছু আসেনি, যারা তোমাদের আগে বিগত হয়েছে। তাদেরকে স্পর্শ করেছিল কষ্ট ও দুর্দশা এবং তারা কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তার সাথী মু’মিনগণ বলেছিল, ‘কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য? জেনে রেখ! নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২১৪)

প্রিয়নবির হাদিসেও ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘বিপদ-আপদ ও পরীক্ষা যত কঠিন হবে তার প্রতিদানও তত মূল্যবান হবে। আর আল্লাহ যখন কোন জাতিকে ভালোবাসেন তখন অধিক যাচাই-বাচাই ও সংশোধনের জন্য তাদেরকে বিপদ-আপদ ও পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। অতঃপর যারা আল্লাহর সিদ্ধান্তকে খুশি মনে মেনে নেয় এবং ধৈর্যধারণ করে, আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হন। আর যারা এ বিপদ ও পরীক্ষায় আল্লাহর উপর অসন্তুষ্ট হয় আল্লাহও তাদের উপর অসন্তুষ্ট হন।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইসলাম বিজয় ও কল্যাণ দানে ধৈর্যের সর্বোচ্চ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফিক দান করুন। চরম বিপদ-আপদেও ইসলামের বিধি-বিধান বাস্তবায়নে একনিষ্ঠ থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম