দেশজুড়ে

নামেই মিনিবাস!

রাজশাহীর সড়ক-মহাসড়কে নামেই চলছে মিনিবাস। রাস্তায় নামার আগেই কাঠামো পরিবর্তন করে মিনিবাসগুলো হয়ে যাচ্ছে বাস। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরডিএ) অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলছে এ কারবার। তবে তা মানতে নারাজ বিআরটিএ।

Advertisement

নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন বডি মিস্ত্র জানান, মালিকরা চালকের আসনসহ ৩২ আসনের চ্যাসিস নিয়ে আসেন। ইচ্ছেমত ৪২ থেকে ৪৬ আসনের বডি তৈরি করে নেন তারা। কেবল মজুরি পেলেই মিস্ত্রিরা তৈরি করে দেন এসব বডি। ক্ষেত্র বিশেষে মজুরি গুনতে হয় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন রাজশাহীর কয়েকজন বাস মালিক। নাম প্রকাশ না করে তাদের কয়েকজন জানান, বড়ি তৈরির আগে নিবন্ধন দেয় বিআরটিএ। একই সঙ্গে ফিটনেস সনদ ও রুটপরমিটও দেয়। নির্ধারিত ফি বাদে কেবল ফিটনেস সনদ নিতেই গুনতে হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। রুট পারমিট নিতে গুনতে হয় আরো অন্তত ১০ হাজার টাকা। নতুন-পুরাতন বাসের ফিটনেস সনদ নিতে হয় প্রতিবছরই। আর রুট পারমিট নিতে হয় তিন বছর পরপর। কাঠামো পাল্টেও বিআরটিএকে ম্যানেজ করে রাস্তায় চলছে যানবাহন। নানান প্রতিকূলতায় ব্যবসা টেকাতে তারা এ টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

তবে মালিকদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাজশাহী বিআরটিএর সহকারী প্রকৌশলী (ইঞ্জিন) এএসএম কামরুল হাসান। তিনি দাবি করেন, নিয়ম মেনেই তারা যান চলাচলের বৈধতা দেন। কাঠামো পাল্টে ফেলা যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। আটক করে মোটরযান অধ্যাদেশে মামলা দেয়া হচ্ছে। আদায় করা হচ্ছে জরিমানা। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে এসব অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।

Advertisement

রাজশাহীতে ফিটনেসবিহীন যানবাহন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেগুলো আছে সেগুলোর বিআরটিএর চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে। তবে আর সেই সুযোগ নেই। ১০ বছরের উপরে অধিক সময়ের ফিটনেসবিহীন মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের পর থেকে এ কার্যক্রম শুরু হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলের সড়কে চলাচল করছে বিআরটিএর অর্ন্তভূক্ত ৫৭৬ মিনিবাস ও ৩৫০ বাস। এছাড়াও রয়েছে ৪১০ মাইক্রোবাস, ৯৪৯ প্রাইভেট কার, ২৯৪ জিপ, এক হাজার ১১৯ ট্রাক, ১৩১ মিনি ট্রাক, ২১৯ পিকআপ, ২৯৬ হিউম্যান হলার এবং ৮০ হাজার মোটরসাইকেল।

রাজশাহী বিআরটিএর হিসাবে, গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত এ অঞ্চলে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২০৪টি। এতে মারা গেছেন ২৫০ জন। আহত হয়েছেন ৩৯৫ জন। দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ সড়কে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল।

এদিকে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দফতর জানিয়েছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেবল রাজশাহী জেলায় মোটরযান অধ্যাদেশে অভিযান চালানো হয়েছে ২২৬টি। এক হাজার ২৪৪ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা হয়েছে। আদায় করা হয়েছে ৬ লাখ ৩২ হাজার ৫০ টাকা জরিমানা। তবে এর মধ্যে কতগুলো অভিযোগ বাসের কাঠামো পরিবর্তনের তা নিশ্চিত করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

ফেরদৌস সিদ্দিক/এফএ/জেআইএম