বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ঢাকাগামী গণপরিবহন চলাচলে বাধা দেয়া হয়েছে। রোববার সকাল থেকে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় ঢাকাগামী বাস চলাচলে বাধা দেয়া হচ্ছে। এতে ঢাকাগামী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
Advertisement
জাগো নিউজের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, সকাল থেকে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে আসা যাত্রীবাহী বাসগুলোকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা মোড় ও ভোগড়া বাইপাস মোড়ে পুলিশ ও স্থানীয় কিছু লোকজন আটকে দেয়। ফলে ঢাকাগামী যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েন। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা সবচে বেশী দুর্ভোগ পড়েন।
ময়মনসিংহ থেকে আসা যাত্রী আরমান মিয়া জানান, তার বৃদ্ধা মাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসছিলেন। চান্দনা চৌরাস্তায় বাস আসার পর লাঠি হাতে লোকজন বাস থেকে সব যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। তার অসুস্থ্য মাকে এখন কীভাবে ঢাকায় বড় ভাইয়ের বাসায় নিয়ে যাবেন তা নিয়ে চিন্তিত তিনি।
গাজীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক সাখাওয়াৎ হোসেন সবুজ জানান, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সমাবেশে জনসমাগম ঠেকাতে আওয়ামী লীগ পুলিশ ও দলীয় ক্যাডার দিয়ে যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছে।
Advertisement
এ ব্যাপারে গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের এএসপি সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, তারা কোনো গাড়িকে বাধা দিচ্ছেন না। পরিবহনের লোকেরাই গাড়ি নিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছেন না। তবে কী কারণে তারা গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে না সে ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
এদিকে ঢাকায় বিএনপির জনসমাবেশের আগের রাতে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার নামে গাজীপুরে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের ২৯ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
টঙ্গী থানা পুলিশের ওসি মো. ফিরোজ তালুকদার জানান, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতে যুবদল নেতা আমজাদ হোসেন ঝুনাসহ বিএনপির সাত নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
এছাড়া কালিয়াকৈর থেকে ১১জন, শ্রীপুর থেকে পাঁচজন, কাপাসিয়া থেকে চারজন, এবং কালীগঞ্জ থেকে দুইজন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।
Advertisement
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ঢাকামুখী যানবাহন প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ ছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন কাঁচপুরে অবস্থান করে পুলিশের সহযোগিতায় যানবাহন বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশ বলছে, মহাসড়কে যানবাহন বন্ধ ছিল না। অন্যদিনের চেয়ে আজকে একটু যানবাহন কম চলাচল করছে।
এদিকে কাঁচপুর থেকে ঢাকামুখী সব ধরনের যানবাহন প্রবেশ করতে না পাড়ায় ঢাকা-চট্রগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকামুখী গণপরিবহন প্রবেশ করতে না পাড়ায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
চট্টগ্রাম হতে আসা সোহাগ পরিবহনের যাত্রী নাজমুল জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কাঁচপুর এসে আটকা পড়তে হয়েছে। স্থানীয় কিছু লোকজন রাস্তায় অবস্থান করে কাঁচপুর ব্রিজ দিয়ে ঢাকার দিকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। তাদের আশে পাশে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলেও নীরব ছিল।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি কাইয়ুম আলী সরকার জানান, মহাসড়কে কোনো ধরনের যানবাহন বন্ধ ছিল না। সকাল থেকে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। রাস্তায় যানবাহন চলাচলে যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় আমাদের পুলিশ কাজ করছেন।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, রোববার সকাল ৭টা থেকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাট এলাকার বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকামুখী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।
ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীদের গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে দেখা গেছে । অপরদিকে ঢাকা থেকে শিমুলিয়ামুখী বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে চলাচলকারী ইলিশ, গুধুলী, আপনসহ বিভিন্ন পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কারও সঙ্গে কথা বলা যায়নি। কেন তারা পরিবহন বন্ধ রেখেছে তাও যানা যায়নি।
লৌহজং থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান জানান, অভ্যন্তরীণ ঢাকাগামী সকল বাস বন্ধ রয়েছে। এ রুটে মোট ১৩টি পরিবহন কোম্পানি যাত্রী পারাপার করে থাকে। কিন্তু সকাল থেকে বাস মালিক সমিতি কেন বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে তা এখনো জানতে পারিনি। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অভ্যন্তরীণ বাস মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানিয়েছে- তাদের সেন্ট্রাল কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ঢাকা থেকে স্ব-স্ব গন্তব্যে বাস ছেড়ে যাচ্ছে।
আমিনুল/শাহাদাত/নুপুর/আরএআর/এমএস