চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত প্রত্যেক রোহিঙ্গার পেছনে ৫ হাজার ৯৩৯ টাকা করে ব্যয় হবে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।
Advertisement
শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সেমিনার সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
এতে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার ডেবিট এসলে, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার শাখাওয়াত হোসেন, বিশ্ব বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি ড. সুকমল বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহাম্মেদ প্রমুখ।
এর আগে অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য ৭ হাজার ১২৬ কোটি টাকা প্রয়োজন। এটা আমাদের চলতি বাজেটের প্রায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ। দেশের মোট রাজস্ব আয়ের ২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ১৩ শতাংশের ও বেশি।
Advertisement
এটা দীর্ঘমেয়াদি হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশাল চাপ সৃষ্টি করবে। তাই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে ৬টি প্রস্তাব করে সিপিডি। এগুলো হচ্ছে- ‘বিমসটেক’ ও ‘বিসিআইএম’ এর মতো আঞ্চলিক জোটের মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা। অতিরিক্ত আঞ্চলিক জোট যেমন ‘আসিয়ান’ এর মতো জোটকে জড়িত করে সমস্যা সমাধানে কাজ করা।
রোহিঙ্গাদের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সম্পদের যোগানের ব্যবস্থা করতে হবে। জেনেভা বৈঠক পরবর্তী ফলো-আপ মিটিং করে অর্থ সংগ্রহে এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের মতো দাতা সংস্থার কাছ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য শুধুমাত্র অনুদান হিসেবে সহায়তা সংগ্রহ এবং রোহিঙ্গা ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নিরাপত্ত ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
রোহিঙ্গা সংকটের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশ বহুমাত্রিক সমস্যায় পড়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশের ওপর। এই তিন খাতে বাংলাদেশ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ায় জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সংকট তৈরি হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ফাহমিদা খাতুন বলেন, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সামাজিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জনসংখ্য বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সমস্যা, স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা দেখা দিয়েছে।
Advertisement
রোহিঙ্গা সংকটে পরিবেশের ওপর প্রভাব তুলে ধরে তিনি বলেন, কক্সবাজারে মোট বনভূমির পরিমাণ ২০ লাখ ৯২ হাজার ১৬ একর। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে এরইমধ্যে ৩হাজার ৫০০ একর বনভূমির ক্ষতি হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী অধ্যুষিত এলাকায় বায়ু দূষণ, ভূমিধসের মতো ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে জীবন-জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সিপিডির পক্ষ থেকে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরে ফাহমিদা খাতুন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
এমএ/এসআই/এমআরএম/ওআর