জাতীয়

কোরআন সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন নয় : আইনমন্ত্রী

আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, কোরআন সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন প্রণয়ণ না করা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে পুত্র সন্তান না থাকলে এবং একাধিক কন্যা সন্তান থাকলে সেক্ষেত্রে কন্যা সন্তানদের চাচা বা চাচাত ভাইদের সম্পত্তির অংশ পাওয়া সংক্রান্ত বিদ্যমান নিয়ম পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই ।মঙ্গলবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে  মো. শওকত চৌধুরীর (নীলফামারী-৪) লিখিত প্রশ্নের জবাবে আইন মন্ত্রী একথা জানান। স্পিকার  ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়। আইন মন্ত্রী বলেন, মুসলিম পারসনাল ‘ল (শরীয়াহ) এপ্লিকেশন অ্যাক্ট ১৯৩৭ অনুয়ায়ী  মুসলিমদের ক্ষেত্রে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী একজন মৃত মুসলমান ব্যক্তির ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পত্তির বিলি বণ্টন হয়ে থাকে। কোনো মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া ওয়ারিশদের মধ্যে পুত্র সন্তান না থাকলে এবং শুধুমাত্র একাধিক কন্যা সন্তান থাকলে ওই কন্যা সন্তানদের চাচা বা চাচাত ভাইরা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির তিন ভাগের একভাগের মালিক হতে পারে যদি মৃত ব্যক্তির পিতা জীবিত না থাকে। মন্ত্রী বলেন, মুসলিম আইন অনুয়ায়ী কন্যা সন্তানদের জন্য নির্ধারিত সম্পূর্ণ অংশই যেহেতু কন্যা সন্তানরা পাচ্ছে সেক্ষেত্রে তারা তিনভাগের এক ভাগ সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হচ্ছে মর্মে ভাবার কোনো অবকাশ নেই। যেহেতু মুসলিম  উত্তরাধিকার আইনের বিধান অনুযায়ী  সম্পত্তির এরূপ বিলি বণ্টন ব্যবস্থা, সেক্ষেত্রে  সরকরের ভিন্নরূপ কোনো সিদ্ধান্ত নেই। বিদ্যমান নিয়ম পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করে কোনো অধ্যাদেশ জারি করার পরিকল্পনা সরকারে নেই। মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীনমো. ইসরাফিল আলমের (নওগাঁ-৬) এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী  বলেন, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ অনুয়ায়ী মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি জানান, মানব পাচার সম্পর্কিত মামলাগুলোর বিচার দ্রুত নিস্পত্তির লক্ষ্যে সরকর ৭টি বিভাগীয় শহরে ৭টি মানব পাচার অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে ৭টি ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব ২৭ মে জন প্রশাসন মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা হযেছে। তবে, উক্ত আইনের  ধারা ২১(২) এর বিধান অনুযায়ী মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার প্রত্যেক জেলার  নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে উক্ত জেলার মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইুব্যুনাল হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছেন। ইতোমধ্যে উক্ত ট্রাইব্যুনালগুলো  মানব পাচার অপরাধের বিচারকার্য পরিচালনা করছে। মন্ত্রী আরো জানান, ২২জুন ২০১৫ তারিখ পর্যন্ত মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের অধীনে  মোট ২০৩৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে  ৪১৯টি  মামলা নিস্পত্তি হয়েছে এবং বর্তমানে ১৬১৬টি মামলা বিচারাধীন আছে। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় ৪৫৯টি মামলার মধ্যে  ১৫০টি নিস্পত্তি এবং ৩০৯টি বিচারাধীন, কক্সবাজারে ১৭৩টির মধ্যে ১৪টি নিস্পত্তি ও ১৬২টি বিচারাধীন, সাতক্ষীরায় ১১৮টির মধ্যে ১৬টি নিস্পত্তি ও ১০২টি বিচারাধীন, যশোরে ৪২২টির মধ্যে ১২৬টি নিস্পত্তি ও ২৯৬টি বিচারাধীন রয়েছে। বিচারক কম হওয়ায় উচ্চ আদালতে মামলা জট বেগম সালমা ইসলামের  প্রশ্নের জবাবে আইন মন্ত্রী বলেন, যে পরিমান মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন আছে  সে তুলনায় বিচারক সংখ্যা কম হওয়ায় মামলা জট সৃষ্টি হয়। নিম্ন আদালতে যেহেতেু মামলার সংখ্যা অত্যাধিক সে কারণে নিম্ন আদালতের মামলার বিভিন্ন আদেশ ও রায়ের বিরুদ্ধে সঙ্গত কারণেই উচ্চ আদালতে দেওয়ানী ও ফৌজদারি আপীল বা রিভিশন দায়ের হয়।  এছাড়া রিট মামলাসহ মূল এখতিয়ারের  অন্যান্য মামলা উচ্চ আদালতে দায়ের হয়। ফলে উচ্চ আদালতে মামলার সংখ্যা বেড়ে যায়। মন্ত্রী আরো জানান, অধিক সংখ্যক বিচারক নিয়োগসহ অবকাটামোগত উন্নয়নের বিষয়টি সরকরের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।  তাছাড়া বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিস্পত্তির মাধ্যমে মামলাজট কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতি জেলায় কেস ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠনের মাধ্যমে মামলা দ্রুত নিস্পত্তির পদক্ষেপ হাতে নেয়া হযেছে। হরতাল  অবরোধ বন্ধে আইনের পরিকল্পনা নেইতালুকদার মো. ইউনুসের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী  বলেন, হরতাল ও অবরোধ বন্ধ করার  লক্ষ্যে  কোনো আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা আতাতত সরকারের নেই।  হরতাল অবরোধ ও বিভিন্ন প্রকার নাশকতার নামে দেশের জনসাধারণ ও তাদের জানমাল যারা ধংস করেছে তাদেরকে বিদ্যমান সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ এর আওতায় এনে শাস্তির বিধান রয়েছে। উক্ত আইনের বিধান অনুযায়ী বিগত দিনগুলোতে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের জন্য সারাদেশে মামলা দায়ের করা হযেছে। উক্ত মামলা সমুহের বিচার কার্য যাতে  থেমে না থাকে সেজন্য  সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ এর ধারা ২৮ এর উপধারা-(১) ও (২) এর বিধান অনুযায়ী  সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনাল গঠন ও বিচারক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত  উক্ত আইনের ধারা ২৭ এর বিধান অনুযাযী দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ কর্তৃক মামলার বিচারকার্য  পরিচালনার জন্য ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি আইন বিচার বিভাগ ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় হতে পরিপত্র জারি করে সকল জেলা ও দায়রা জজকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আবুল কালামের লিখিত প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী  বলেন, সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ এর  আওতায় পেট্রোল বোমা দিয়ে যারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে তাদের বিচার করা হবে। আখম জাহাঙ্গীর হোসাইনের এক প্রশ্নের জবাবে আইন মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে মুসলিম সম্প্রদাযের জন্য ৬হাজার ২৪৯জন নিকাহ রেজিস্টার এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য ৫১৬জন বিবাহ নিবন্ধন আছে। এইচএসি/এসকেডি/পিআর

Advertisement