দেশজুড়ে

কেউ জানেন না এ অচিন গাছের নাম

গাছটির নাম নেই। কত বছর আগে এর জন্ম তাও জানেন না কেউ। সবাই এ গাছকে অচিন গাছ বলেই জানেন। কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ওমর মজিদ ইউনিয়নের জয়দেব হায়াত গ্রামে মৃত দর্পণ নারায়নের বাড়িতে বিশাল আকৃতির এ গাছ দাঁড়িয়ে আছে। বয়সের ভারে নুয়ে গেছেন এমন অনেকে বলেছেন, গাছটির বয়স প্রায় ৫শ বছররেও বেশি। তিন পুরুষ এ গাছের জন্ম বৃত্তান্ত সর্ম্পকে কিছুই বলতে পারেননি। ওই গ্রামের পৈতৃক সূত্রে পাওয়া নরেন চন্দ্র রায়ের (৮৫) সঙ্গে কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলনে, আমার তিন পুরুষ পর্যন্ত এ গাছটির বিষয়ে কোনো পরিচয় জানেন না। আমি আমার বাপ-দাদার কাছ থেকে গাছটির বয়স কমপক্ষে ৫শ বছর হবে বলে শুনেছি। বৃটিশ আমলেই `অচিন গাছ` হিসেবে গাছটির নামকরণ করা হয়। এর আগে গাছটির শাখা-প্রশাখা প্রায় ২০ শতক জমি জুড়ে বেশ বিস্তীর্ণ ছিল। গাছের ডালপালার জন্য রোদ পাওয়া যেত না পাশের বাড়িগুলোতে। ফলে প্রতিবেশীরা দূর-দূরান্তে ধান-পাট শুকাতেন। সময়ের পরিবর্তনে গাছটির বর্তমান শাখা-প্রশাখা কমে গেছে। বর্তমানে গাছটি প্রায় ১০ শতাংশেরও কম জমির আয়তন ঘিরে রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কখনো গাছটির ডাল ভেঙে পড়ার কথা এলাকার লোকজন জানেন না। গাছটিতে পাইকোর ফলের মতো গোটা গোটা ফল ধরে এবং এসব ফল পশু-পাখি খায়। এ গাছ থেকে ফল মাটিতে পড়লেও কোনো ফল থেকে নতুন গাছ জন্মায় না। অনেক আগে গাছটিতে বিশাল আকৃতির বিষাক্ত সাপ বসবাস করতো। কিন্তু এসব সাপ মানুষের কোনো ক্ষতি করেনি। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পার্শ্ববর্তী ও দূর-দুরান্তের সনাতন ধর্মের লোকজন মানত করে গাছটির গোড়ায় এসে পূজা-অর্চনা করে দান বাক্সে দক্ষিণা দিয়ে যেতেন। দান বাক্সে লেখা রয়েছে গাছটির পাতা কেউ ছিঁড়বেন না।  সনাতন ধর্মাবলম্বীরা গাছটি সংলগ্ন একটি মন্দির নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করছেন বলে সনাতন ধর্মের লোকজন জানিয়েছেন। বর্তমানে গাছটির অযত্ন, অবহলো আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চারদিক জঙ্গলে পরিপূর্ণ হয়েছে। গাছটির পাতা সবুজ। তবে পাতাগুলো ডুমুর পাতার মতো হলেও তত খসখসে নয়, মসৃণ। সারা বছর ধরে গাছে পাতা দেখতে পাওয়া যায়। কথিত আছে, পুরনো পাতাগুলো রাতারাতি নতুন পাতায় রূপান্তরিত হয়। এ গাছের পাতার রস সাদা বর্ণের। সারা বছর গাছটি সুশীতল ছায়া দিয়ে থাকে। কালের সাক্ষী হয়ে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে আজো জবুথবুভাবে দাঁড়িয়ে আছে এ গাছটি। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটির রক্ষণাবেক্ষণ অতিব জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রায় ১৫ থেকে ১৬ বছর আগে রাজারহাট উপজেলার ইউএনওর পক্ষ থেকে গাছটির গোড়া পাকা করে দেন। মৃত দর্পণ নারায়নের নাতিরা বর্তমানে গাছটির খোঁজ খবর রাখছেন। এলাকার মানুষের দাবি ঐতিহ্যবাহী গাছটিকে রক্ষা ও গবেষণা করে এর রহস্য উম্মোচন করা হোক। গাছটির অজানা রহস্য জানতে গিয়ে কিছু পুরনো কথা আর কিছু মুখরোচক গল্প-কাহিনী ছাড়া কিছুই জানা যায়নি। এলাকার বয়স্কদের ধারণা, বর্তমান ভারতের আসাম রাজ্যের কামরূপ-কামাখ্যা থেকে আগত একদল জাদুকর এ গাছটি চোখের পলকে উড়িয়ে এনে বর্তমান স্থানে লাগিয়ে দেন। গাছটির নাম কেউ জানতেন না। তখন থেকেই এ গাছটি ‘অচিন গাছ’ নামে পরিচিত। অপর এক পৌরাণিক কাহিনী থেকে জানা যায়, কোনো এক অজানা পীর সুদূর পশ্চিম দিক থেকে গাছটির চারা এনে এখানে রোপণ করেছিলেন। সে কারণেই গাছটি কেউ চিনছেন না। তবে গাছটির যে একটি ঐতিহাসিক রহস্য রয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায় গাছটির গোড়ায় প্রতিনিয়ত পূজা-পার্বণ করে থাকেন। তবে দু’বছর পর পর জাঁকজমকপূর্ণভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূঁজা-অর্চনা করেন। এলাকার লোকের কাছে পূজা করার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, আমাদের পূর্ব-বংশধররা পূজা করেছিলেন। তাই আমরাও পূজা করে আসছি। যে উদ্দ্যেশে পূজা করি সেটা সফল হয়। এ গাছটি মানুষের কাছে আজো রহস্যময় গাছ হিসেবে রয়ে গেছে। এমজেড/এমআরআই

Advertisement