বিয়ের আট বছর পর জানাজানি হয় বিয়ে করেছন শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। চলতি বছরের এপ্রিলে পুত্রসহ প্রকাশ্যে আসেন অপু। সেখানেই তিনি জানান, ২০০৮ সালে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন তারা। এরপর সমালোচনার মুখে পড়ে অনেক জলঘোলা করে স্ত্রী-পুত্রকে স্বীকৃতি দেন শাকিব। তাদের সঙ্গে সুখী দাম্পত্যের প্রমাণ দিতে গণমাধ্যমেও আসেন তিনি। দোয়া চান দেশবাসীর কাছে।
Advertisement
কিন্তু ডিভোর্সের কানাঘুষা চলছিল সেই এপ্রিল থেকেই। কারণ, প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে স্ত্রী-পুত্রকে মেনে নিলেও গেল পহেলা বৈশাখের পর অপুর সঙ্গে দেখা করেননি একবারের জন্যও। দুটি ঈদ পেরিয়ে গেলেও স্বামী-স্ত্রীর চোখের দেখা হয়নি। এমনকি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে দু’জন উপস্থিত থেকেও দেখা হয়নি। নিজের পুরস্কার বুঝে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার আগেই তিনি বের হয়ে গিয়েছিলেন। চারপাশে সমালোচনা চলছিল, অপু বিশ্বাসের নাচ দেখতে হবে বলেই শাকিব থাকলেন না।
তবে এইসব বিষয় প্রকাশ্যে এড়িয়ে চলেছেন দুজনই। দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়ে দুজনের অবস্থানই ছিল ভিন্ন। অপু সংসার নিয়ে সুখে আছেন দাবি করেছেন সামাজিক মর্যাদার দিকে তাকিয়ে। ছেলে যেন পিতৃ স্নেহ থেকে বঞ্চিত না হয় সেই চেষ্টাই তিনি করে যাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন অনেকবার। আর শাকিবও দেখিয়েছেন ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা না বলতে চাওয়ার অজুহাত। সবখানে বলেছেন, সাংসারিক ব্যয় তো মেটাচ্ছেন, ভরণপোষণ দিচ্ছেন। এর বেশি কিছু তিনি বলতে নারাজ সংসার জীবন নিয়ে। কিন্তু এ দুই তারকার কাছের মানুষরা ঠিকই জানেন, তাদের ভেতরে দূরত্ব হাজার মাইলের। অনেকে চেষ্টাও করেছেন তাদের এক করার, কিন্তু সেটা হয়নি।
অপু কোনো অনুষ্ঠানে গেলে শাকিব খান সেখানে যান না। বেশ কিছু গণমাধ্যম নানা ইস্যু ও উৎসবে শাকিব-অপু দম্পতিকে নিয়ে অনুষ্ঠানসহ নানা ফিচারের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শাকিবের আপত্তিতেই সেগুলো হয়ে উঠেনি। বেশ কিছু সিনেমাতে অনেক আগে থেকেই জুটিবদ্ধ ছিলেন শাকিব ও অপু। কিন্তু বিয়ের খবর প্রকাশ হবার পর থেকে অপুর সঙ্গে কোনো ছবির শুটিংয়েই অংশ নিতে নারাজ শাকিব। তাদের খামখেয়ালির খেসারত দিয়েছেন সেইসব ছবির প্রযোজকরা। অপু নিজ উদ্যোগে কয়েকটি ছবির ডাবিং ও শুটিং শেষ করে দিলেও শাকিবের কারণে আটকে আছে ছবিগুলোর কাজ। যে সিনেমার হাত ধরেই প্রেম ও বিয়ে সেই সিনেমাও পারেনি শাকিব-অপুকে এক ফ্রেমে দাঁড় করাতে, একসঙ্গে বসাতে।
Advertisement
এমনকি একমাত্র পুত্রের জন্মদিনও এক করতে পারেনি তার বাবা-মাকে। জন্মদিনের পার্টিতে শোবিজের নানা অঙ্গনের তারকারা এসেছিলেন অপুর নিমন্ত্রণে। সেটির আয়োজকও ছিলেন তিনি। সেখানে শাকিব আসেননি। পরদিন এ চিত্রনায়ক গণমাধ্যমে না আসার কারণ দেখিয়েছেন তার টাকাতে অনুষ্ঠান হলেও দাওয়াত পত্রে তার ছবি ছিল না। সেজন্য তিনি মনোকষ্ট নিয়ে পার্টিতে আসেননি। কিন্তু তিনি উত্তর দিতে পারেননি এমন প্রশ্নের- তার টাকার অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র অপুকে কেন ছাপাতে হলো? অনুষ্ঠানের আয়োজন কেন অপুকে করতে হলো? প্রথম সন্তানের জন্মদিনের আয়োজক তো বাবা-মা দুজন মিলেই হবার কথা ছিল।
এইসব প্রশ্ন এড়িয়ে তিনি জন্মদিনের বিকেলে গুলশানের মসজিদে ছেলের জন্য দোয়া প্রার্থনা করে, এতিমদের সাহায্য দিয়ে বাবা হিসেবে বাহবা নিয়েছেন। অবাক করা ব্যাপার হলো, শাকিবের পরিবারও বরাবর বাড়ির স্ত্রী হিসেবে অপু বিশ্বাসের প্রতি উদাসীন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাকিবের মতের বাইরে গিয়ে কিছু বলার সাহস নেই তার পরিবারের কোনো সদস্যের। তাই তিনি যেভাবে চাইছেন সেভাবেই চলছে তার দাম্পত্য জীবন। তবে দুজনের মধ্যে বনিবনা যে নেই সেটা প্রমাণ হতে চললো বুঝি।
এরইমধ্যে গেল আগস্ট মাসের শেষদিকে হঠাৎ করে গুঞ্জন ছড়ায় অপুকে ডিভোর্স দিচ্ছেন শাকিব। সে জন্য অপুর অভিভাকদের নিয়ে মিটিংয়ে বসতে চেয়েছেন শাকিব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই গুঞ্জনটি আর সত্যে পরিণত হয়নি। অপুও তাতে খুশি হয়ে নতুন করে বুক বেধেছিলেন কোনো একদিন ঠিকই স্ত্রী হিসেবে মন থেকে তাকে মেনে নেবেন শাকিব।
এ ফাঁকে নিজের মতো করে নিজের ক্যারিয়ার ও সংসার চালিয়ে যাচ্ছিলেন অপু বিশ্বাস। হুট করেই আবারও ছড়ালো তাদের বিচ্ছেদের খবর। সেই খবর সত্যি না মিথ্যে সে নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ, আলোচনা-সমালোচনা। কারণ, যিনি বিচ্ছেদ দিচ্ছেন তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি ডিভোর্সের নিশ্চয়তা নিয়ে। শাকিব ব্যাংককে রয়েছেন সিনেমার শুটিংয়ে। বলা হচ্ছে তিনি দেশে ফিরলে ডিভোর্সের আনুষ্ঠানিকতা সারবেন। তার ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
Advertisement
এদিকে দেশে থাকলেও অপু বিশ্বাস ডিভোর্সের খবরটির নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কেন এ ধরনের খবর প্রকাশ হচ্ছে। আমার সঙ্গে কেউ কোনো কথা বলে এসব নিউজ ছাপেনি। আর যারা ছেপেছেন তারা আমার স্বামীরও কোনো নিশ্চিত বক্তব্য দিতে পারেননি। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে ডিভোর্সের কারণ হিসেবে যা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হাস্যকর। বলা হচ্ছে আমি শাকিবের শত্রুদের সঙ্গে উঠবস করি। আমার প্রশ্ন হলো শাকিবের শত্রু কারা? কয়দিন আগে তো শাকিব নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন সব ঝামেলার অবসান হয়েছে। এফডিসিতে এসেছে, শিল্পী সমিতিতে গিয়েছে। সব মিটমাটের পর শত্রুর প্রশ্ন আসবে কেন। বোঝাই যাচ্ছে, কেউ কেউ আড়ালে থেকে এ ডিভোর্স করানোর চেষ্টা করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শাকিব ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর নায়ক। তার স্ত্রী হিসেবে আমার পরিচয়ের পাশাপাশি আমিও ইন্ডাস্ট্রির নায়িকা। শাকিবের সঙ্গে জুটি বেঁধে যেমন আমার উত্থান তেমনি আমার সঙ্গে জুটি বেঁধেই তো শাকিবেরও উত্থান। আমরা দুজনই কাজের লোক। ইন্ডাস্ট্রির এ ক্লান্তিলগ্নে সিনিয়র অভিনেত্রী হিসেবে আমাকে অনেকেই সিনেমা করতে বলছেন। আমি গল্প ও চরিত্র বাছাই করে কাজ করছি। সেটা তো অন্যায় কিছু নয়। বিয়ের পর শাকিবের সিনেমা করা অন্যায় না হলে আমার হবে কেন। আর যদি হয়ই সেটা শাকিব আমাকে না করতে পারে। তার কথার বাইরে গিয়ে আমি কাজ কেন করবো। কিন্তু সে তো আমাকে না করেনি।’
এদিকে শাকিবের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কোনোভাবেই শাকিব-অপুর সম্পর্কের উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাই বিবাহবিচ্ছেদই দুজনের জন্য উত্তম বলে মনে করা হচ্ছে। যত দূর শোনা যাচ্ছে, অপুর সব পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতিও চলছে। শাকিব এরই মধ্যে অপুকে ডিভোর্স দেয়ার জন্য আইনজীবীর সঙ্গেও আলাপ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজনের আরেকটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, ‘অপু বিশ্বাসের ওপর ভীষণ নাখোশ শাকিব। আর দিনের পর দিন তা বেড়েই চলেছে। তা ছাড়া শাকিব যে কাজ পছন্দ করেন না, অপু নাকি প্রতিনিয়ত সেসব করে চলছেন। শুধু কি তা-ই, মিডিয়ায় শাকিবকে যারা পছন্দ করেন না, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন অপু। সবকিছু মিলিয়ে নাকি অপুর ওপর শাকিব খুব বিরক্ত।
তবে অনেকেরই মত, অপু বিশ্বাস প্রকাশ্যে বিয়ের খবর প্রকাশ করাতেই তার ওপর নাখোশ হন শাকিব। তিনি চেয়েছিলেন, অপুকে সবরকম আলোচনার বাইরে রেখে দাম্পত্য জীবন চালিয়ে যেতে। তবে চিত্রনায়িকা বুবলীর সঙ্গে শাকিবের মেলামেশা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আড়াল ভেঙে প্রকাশ্যে আসেন অপু। আর সেটাই মেনে নিতে পারেননি শাকিব।
২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের বিয়ে হয়। বিয়ের ব্যাপারটি কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে রেখে তারা দুজন সমানতালে ছবিতে কাজ করছিলেন। এ বছর ১০ এপ্রিল একটি টেলিভিশন চ্যানেলে ছয় মাস বয়সের ছেলে আব্রামকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হন অপু। তখন অপু জানান, গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর কলকাতার একটি ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে জয়ের জন্ম হয়।
এলএ