রাজনীতি

খালেদা জিয়ার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন গয়েশ্বর

‘আমি শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

Advertisement

তিনি তার ব্যাখ্যায় বলেছেন, বিদেশের কূটনৈতিকরা মাঝে মাঝে বলে থাকেন, শেখ হাসিনার জন্য একটা কমফরটেবল এক্সিট ফর প্রেজেন্ট গভর্মেন্ট, অর্থাৎ আরামদায়ক দরজা তৈরি করা, যেটা দিয়ে শেখ হাসিনা যেতে (ক্ষমতা ছাড়ার দিকে ইঙ্গিত করে) পারেন। এই কথার উত্তর গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমাদের নেত্রী দিয়েছেন। উনি বলেছেন ‘আমি শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি’।

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তণে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই ব্যাখ্যা দেন। সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সংগ্রামী দল কেন্দ্রীয় কমিটি।’

গয়েশ্বর বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এ কথা বলেছেন এজন্য যে, তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, ‘আমি (খালেদা জিয়া) প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমি কারোর সঙ্গে অশোভন আচারণ করব না’, সেটা শেখ হাসিনার নাম ধরেই তিনি বলেছেন।

Advertisement

‘খালেদা জিয়ার ওই কথা বলার কারণটা হচ্ছে শেখ হাসিনার ভেতর একটি ভয় কাজ করছে, বেগম জিয়াকে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছেন, নানানভাবে হয়রানি করেছেন, বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে গুম, খুন, নির্যাতন, জেল-জুলুম করে তার অপকর্মের বোঝা এতো বেশি হয়ে গেছে যে সেই বোঝা মাথায় নিয়ে ভবিষ্যতে চলা আরামদায়ক মনে করছেন না। তাই তিনি দেখছেন জোর-জুলুম করে যতক্ষণ ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় সেটাই তিনি করছেন’-বলেন গয়েশ্বর।

গণতন্ত্রের পথ খুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বস্তিতে ঘুমানোর পরামর্শ দিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনার ভালোর জন্য গণতন্ত্রের দরজা খুলুন। আপনার যারা পাতিনেতা, এই নেতা সেই নেতা মুখ ফস্কায়া যেসব কথা বলছে সেগুলো হিসেব করুন।

তিনি বলেন, ‘ইনুর (তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু) মতো অনেকেই কিন্তু বলে আপনি শোনেন না। আপনার দলের অপকর্ম করা নেতাদের বাঁচাতে গিয়ে গণতন্ত্রের দরজা বন্ধ করবেন না। আপনি নিজে বাঁচার জন্য গণতন্ত্রের পথ খুলে দিন। আপনি নিজে বাঁচুন, দেশকে বাঁচান। দেশের মানুষককে স্বস্তিতে থাকতে দেন। আপনিও স্বস্তিতে ঘুমান।’

গয়েশ্বর বলেন, ‘দেশের মানুষদের অস্বস্তিতে রেখে আমাদের জেলখানায় রেখে আপনি বেশি দিন স্বস্তিতে থাকবেন বলে আমার মনে হয় না, আপনারও মনে হয় না। আপনার মুক্তির পথ বেগম খালেদা জিয়া বলে (আদালতের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে) দিয়েছেন। আপনি সে কথাটা অনুসরণ করেন, তার কথা বিশ্বাস করেন। আসেন আমরা একতাবদ্ধভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা করি।’

Advertisement

তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনাই হলো গণতন্ত্র। সেই গণতন্ত্রকে নির্বাসনে দিয়ে, রুগ্ন করে, অসুস্থ করে, এস কে সিনহার মতো ছুটি দিয়ে কোনোদিন ভালো কিছু আশা করা যায় না।

আয়োজক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সঞ্চালনায় এবং সভাপতি ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. ফারহানা জাহান নিপার সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দিতে গিয়ে আদালতকে খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমার ও শহীদ জিয়ার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার ক্রমাগত অশোভন উক্তি, প্রতিহিংসামূলক বৈরী আচরণ সত্ত্বেও আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি তার প্রতি কোনো প্রতিহিংসামূলক আচরণ করব না।’

এমএম/জেডএ/এমএস