বিনোদন

সুরে নয়, শ্রোতায় মজেছিল ফোক ফেস্ট

‘দিনে দিনে খসিয়া পড়িবে রঙ্গিলা দালানের মাটি লো সাঁইজী’ আসামের বিখ্যাত শিল্পী পাপনের কণ্ঠে গানটি শোনার জন্য তখন আকাশও যেন কান পেতে আছে। ফোক ফেস্টের মধুলগ্ন তখন। মূলত মধ্যরাতেই জমে ওঠে বাউলের আসর।

Advertisement

তারুণ্যের সুর তরঙ্গে ঢেউ তুলে মধ্যরাতেই এলেন ভারতের বাঙালি শিল্পী পাপন। শুরু করলেন ‘দিনে দিনে খসিয়া পড়িবে রঙ্গিলা দালানের মাটি লো সাঁইজী’গানটি দিয়েই। তবে পাপনের নাম শুনে য ঢেউ উঠেছিল বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে, তা যেন নিমিশেই নেতিয়ে গেল। ফোক ফেস্টের প্রথম দিনে ঠিক জমাতে পারেননি পাপনও। তাই শেষ বেলাতেও হতাশায় ফিরতে হয়েছে শ্রোতাদের।

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টের প্রথম দিনে গান শুনে শ্রোতারা লোকো উৎসবে মাততে পারেননি তেমন। প্রায় বিরক্ত সুর আর শিল্পীদের পরিবেশনায়। শিল্পীদের সুরে নয়, নিজেদের গল্পকথা আর আড্ডা নিয়েই মজে ছিলেন শ্রোতারা।

উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় লোকসংগীতের ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্ট’ তৃতীয় আসরের বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী দিনে দর্শক-শ্রোতায় ভরে যায় বনানী আর্মি স্টেডিয়াম। বিকালের পর থেকেই স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভরতে থাকে। সন্ধ্যার পর তিল ধরার আর ঠাঁই ছিল না।

Advertisement

তবে বাউলের এ আসরে শ্রোতাদের আবেগের কমতি না থাকলেও সে আবেগ শিল্পীরা ধারণ করতে পারেনি বলেই অনেকে মনে করছেন। মাঠের শ্রোতারা যেমন বিরক্ত ছিলেন, নিরাশ হয়েছেন টেলিভিশনের শ্রোতারাও। অনেকেই অনুষ্ঠান শেষ না করেই আসর ছেড়ে চলে গেছেন, যা আগের দু’বছরে হয়নি।

গতকাল অনুষ্ঠানের শুরুতেই লালনের গানে স্বাগত জানায় ম্যাজিক বাউলিয়ানার শিল্পীরা। লালনের গানে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের চাইতে পশ্চিমা বাদ্যযন্ত্রের আধিক্য থাকায় দর্শকের মনে দাগ কাটতে পারেনি। এরপর ফোক শিল্পী ফকির শাহাবুদ্দিনও হতাশ করেন শ্রোতাদের। যে কয়টি জনপ্রিয় ফোক গান গেয়েছেন শাহাবুদ্দিন, তা বাদ্যযন্ত্রের বিড়ম্বনায় তাল পায়নি।

তবে ফকির শাহাবুদ্দিনের পর দেশীয় যন্ত্র আর ঢংয়ে ব্রাজিলের লোকোশিল্পী মোরিসিও টিজুমবাহ ও সেক্সটেট মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন খানিক সময়। টিজুমবাহর গানই ছিল গতকালের আসরের বিশেষত্ব। এরপর তিব্বতের শিল্পী তেনজিন চো’য়েগালও তেমন জমাতে পারেনি। শেষ বেলায় শ্রোতারা পাপনে ভরসা রাখলেও, তা আর হয়নি।

আলভী নামের এক বাউল শিল্পীও এসেছিলেন গান শুনতে। বলেন, এর আগে প্রতিটি আসরেই এসেছি। আজ খুব ভালো লেগেছে, তা বলা যাবে না। কেন যেন মনে ধরল না।

Advertisement

আলভীর বন্ধু রতি বলেন, ব্রাজিলের লোকোশিল্পী মোরিসিও টিজুমবাহ ও সেক্সটেট-এর পরিবেশনাটিই ছিল অনবদ্য। অন্যগুলো ঠিক মনে রাখার মতো নয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে সান কমিউনিকেশন ও মাছরাঙা টেলিভিশন আয়োজন করেছে তিন দিনব্যাপী এ লোক সংগীতের আসর। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত চলবে এ অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ ছাড়াও উৎসবে গান পরিবেশন করবেন ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ইরান, ব্রাজিল, মালি, ফ্রান্স, জাপানের ১৪০ জন সংগীতশিল্পী।

এএসএস/এএইচ/এমএস