রাজধানীর দক্ষিণ বাড্ডায় বিপিএল খেলাকে ঘিরে চলা জুয়ায় বাধা দেয়ায় মানারাত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র নাসিম আহমেদ এমাজ উদ্দিনকে (২৪) ছুরিকাঘাতে খুন করে আসিফ শিকদার। তবে ঘটনার তিনদিন অতিবাহিত হলেও নাসিম হত্যার মূলহোতা আসিফকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
Advertisement
হত্যাকাণ্ডের পর একটি বাসায় লাগানো ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করে র্যাব। পরে ওই ভিডিও দেখে পরিবার ও স্থানীয়দের দেয়া তথ্যে আসিফকে শনাক্ত করেছে র্যাব-পুলিশ। নাসিমকে ছুরিকাঘাত করার পর রক্তাক্ত ছুরি হাতে আসিফকে গলি পথ থেকে বের হয়ে যেতে দেখা যায় ভিডিওতে। ওই ভিডিও ফুটেজও রয়েছে জাগো নিউজের কাছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার পর নাসিম হত্যার মূলহোতা আসিফ এলাকাতেই ছিলেন। আরও ২-৩ জন তাকে সহযোগিতা করেছিল। রাতে জানাজা নামাজের পর আত্মগোপনে যান আসিফ। ওই সময় গ্রেফতার করলে পালাতে পারত না আসিফ। শুধু আসিফ নয় মামলার সব আসাসি এখন পলাতক।
নিহত ছাত্র নাসিম আহমেদ এমাজ উদ্দিন।
Advertisement
তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নাসিম হত্যায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি আসিফ। আসিফসহ অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চলছে।
গত সোমবার সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর বাড্ডা থানাধীন পোস্ট অফিসের গলির ৩৭৫নং দাগের ৪নং নিজ বাসার সামনে নাসিমের গলায় ও কোমড়ে তিনটি স্থানে ছুরিকাঘাত করেন আসামিরা। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পুলিশ, র্যাব, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও ডিবি পুলিশ কর্মকর্তারা।
নিহত নাসিম বেসরকারি মানারত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বাবা আলী আহমেদ সাইফ উদ্দীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সে চাকরি করেন। মাত্র নয় মাস আগে বিয়ে করেন নাসিম।
হত্যা মামলার প্রধান আসামি আসিফ শিকদার। ছবি প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে সংগৃহীত।
Advertisement
ঘটনার দিন (সোমবার) রাতেই বাড্ডা থানায় ৩০২/৩৪ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা আলী আহমেদ সাইফ উদ্দীন। মামলা নং ৭।
মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩-৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলায় প্রধান আসামি আসিফ শিকদার (২১)। বাবার নাম সবুজ শিকদার। তার বাড়ি বারিশালের বাকেরগঞ্জের মঙ্গলচি গ্রামে। তিনি বাড্ডায় বসবাস করতেন। দ্বিতীয় আসামি রজমান আলী (৩৮) ও তৃতীয় আবদুর রশিদ (৫০)।
নিহতের ছোট ভাই ইম্পেরিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র নাবিল আহমেদ জানান, বিপিএল খেলা নিয়ে বোর্ড (ক্যারাম বোর্ড) ঘরে রমরমা জুয়ার আসর চলছিল। সেখানে সন্ধ্যার পর ক্যারাম খেলতেন ভাই নাসিম। গত রাতে নাসিম ক্যারাম খেলতে গিয়ে দেখেন বিপিএলের ম্যাচ নিয়ে মোটা অঙ্কের জুয়া চলছে।
এতে বাধা দেন নাসিম। বাধার মুখে রমজান আলী, আসিফ, রশিদ, শহীদুল ও রফিক নামে স্থানীয়দের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয় নাসিমের। ঘটনা হাতাহাতি পর্যন্তও গড়ায়।
নাবিল জানান, বিষয়টি আপস করতে গেলে রমজান ও রশিদ মারধর করেন নাসিমের বাবাকে। মহল্লার বড়ভাইরা ঘটনার দিন বসে বিষয়টি মীমাংসা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এদিন সকালে ভাইকে বাসার নিচে ছুরিকাঘাত করে আসিফ, সহযোগিতা করে রমজান ও রশিদ।
হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ও নাসিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছিলেন নাসিমের বড় ভাই ফাহিমের বন্ধু লিমন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনার দিন আমি সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে নাসিমদের বাসার দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ নাসিমের চিৎকার। কাছাকাছি যাবার পর দেখি আসিফ দৌড়ে পালাচ্ছে। আর নাসিম রক্তাক্ত। কিছুটা পথ আমি আসিফকে ধাওয়া করি। কিন্তু নাসিমকে হাসপাতালে নেয়া জরুরি মনে করায় ফিরে আসি।
নিহত ছাত্র নাসিমের পরিবারের আহাজারি।
লিমন বলেন, আসিফই নাসিমকে ছুরিকাঘাত করেছে। ভিডিও ফুটেজেও সেটা স্পষ্ট হয়েছে। আর অন্যরা প্ররোচিত করেছে। অথচ এখন পর্যন্ত আসিফকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
নাসিমের স্ত্রী শামীমা জাহান অন্তী জাগো নিউজকে বলেন, যারা আমার স্বামীকে খুন করেছে, আমাকে বিধবা করেছে তাদের কঠিন শাস্তি দেখতে চাই।
নিহত নাসিমের বাবা আলী আহমেদ সাইফ উদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনার পরই জানা যায় কে বা কারা এ ঘটনায় জড়িত। মামলাতেও তাদের নাম এসেছে। কিন্তু আসামিরা পালিয়ে গেল, কাউকে আটক করা গেল না, এটা মানা যায় না।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, উদ্ধার করা ভিডিও ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে নাসিম হত্যায় মূলহোতা আসিফ। ফুটেজে রক্তাক্ত ছুরি হাতে গলি পথ থেকে বের হতে দেখা গেছে আসিফকে।
তিনি বলেন, ‘শুধু আসিফ নয়, আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সব আসামিকে ধরার চেষ্টা করছি। খুব শিগগিরই ধরে ফেলব।’
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জাগো নিউজকে বলেন, তদন্ত চলছে। জড়িতদের গ্রেফতারে জোর প্রচেষ্টা চলছে। তাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে মূল কারণ বেরিয়ে আসবে।
জেইউ/জেডএ/জেআইএম