জাতীয়

`আইন-কানুনে চলে না কোনো সাব-রেজিস্ট্রি অফিস’

ভূমি ব্যবস্থাপনা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত মন্তব্য করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস কোনো আইন, নিয়ম-কানুনে চলে না। তারা নিজস্ব গতিতে খামখেয়ালিভাবে চলে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলোর সঙ্গে দুদকের মতবিনিময় সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন। সভায় ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ভূমি সচিব মো. আবদুল জলিল উপস্থিত ছিলেন।

দুদকের কমিশনার বলেন, মাঠ পর্যায়ে ৭০টি গণশুনানি এবং বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে ১৩টি কর্মশালা করেছি। সব কিছু মিলিয়ে আমরা বলেছি ভূমি ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট দুর্নীতি আছে। দুর্নীতি থেকে উত্তরণে ভূমি মন্ত্রণালয়কে ছয়টি সুপারিশও দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি তহশিল অফিসগুলো সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত। সাব-রেজিস্ট্রার অফিস কোনো আইন, নিয়ম-কানুনে চলে না। তারা নিজস্ব গতিতে খামখেয়ালিভাবে চলে। কোনো একটি সাব রেজিস্ট্রার অফিস পাইনি যারা স্বচ্ছভাবে কাজ করে।

Advertisement

বর্তমান ভূমি ব্যবস্থাপনায় আপনি সন্তুষ্ট কি-না জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সন্তুষ্ট নই। এখানে অনেক কিছু করার আছে। দুদকের স্যাটিসফাইড হওয়ার কিছু নেই। জনগণ সন্তুষ্ট কি-না, সাধারণভাবে বললে বলতে হয় জনগণ সন্তুষ্ট নয়।

দুদক দুর্নীতি প্রতিরোধে বেশি জোর দিচ্ছে জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, দুর্নীতির বিষয়ে যদি প্রমাণসহ তথ্য থাকে তবে সে ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেব না। সে যেই হোক, পরিচয় জানতে চাইব না। আমরা সেই ম্যাসেজও তাদের (ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট) দিয়েছি। আমরা দুর্নীতি প্রতিরোধ ও প্রতিকার দুটো নিয়েই কাজ করি।’

তিনি আরও বলেন, ভূমি সার্ভে ও সেটেলমেন্ট এবং নামজারি জমা খারিজ, বিস্তারিত আমরা তাদের (ভূমি মন্ত্রণালয়) দিয়েছি। আমরা বড় সাজেশন দিয়েছি যে, আসলে ভূমি সমস্যার জন্য একটা হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ দরকার। ল্যান্ড ম্যানজেমেন্ট বলতে শুধু মিউটেশন ও সার্ভে সেটেলমেন্ট নয়। এখানে ভূমি রেজিস্ট্রেশনও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে তিনটি বিষয় একই জায়গায় থাকতে হবে এবং সেটা ভূমি মন্ত্রণালয়ে। সাব-রেজিস্ট্রার অফিস আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে। মতবিনিময় করে জানলাম, তারাও (ভূমি মন্ত্রণালয়) বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতি নিয়ে তারা কাজ করছেন। নাসির উদ্দিন বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি আছে, যেটা সাধারণ মানুষ চোখের জল ফেলে আমাদের বলেছেন। বিভিন্ন জায়গায় আমরা এটার প্রমাণও পেয়েছি। ভূমির বিষয়ে আইনি অনেক জটিলতা আছে। এখানে অনেক ধরনের বিষয় আছে।

‘তারা (ভূমি মন্ত্রণালয়) ডিজিটাল ম্যাপিংয়ের কথা বলেছেন। আমরা উদ্ধুদ্ধ হয়েছি। কিন্তু আমরা দেখতে চাই গ্রামের একজন সাধারণ মানুষও যেন চোখের জল না ফেলে। আমরা দেখব মানুষের হাসিমুখ। সে খাজনা দিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়নি।

Advertisement

দুদক কমিশনার বলেন, ভূমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। দলিল লেখকদের প্রচুর হয়রানি। দলিল লেখকদের প্রতি পৃষ্ঠা ১৫ টাকা কিন্তু কোথাও লেখা নেই।

ভূমিমন্ত্রী বলেন, তারা (দুদক) যে সুপারিশগুলো দিয়েছে সেগুলো আমাদের সমৃদ্ধ করবে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিছু কিছু সুপারিশ বাস্তব সম্মত।

শামসুর রহমান বলেন, দুর্নীতি আসে মানুষের ভোগান্তি ও লোভ থেকে। ভোগান্তি দূর না হওয়া পর্যন্ত শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থা আশা করা যায় না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স। আজ দুর্নীতি রোধে দুদকের কাছ থেকে কিছু ব্যতিক্রমী সুপারিশ পেয়েছি।

বর্তমান ভূমি ব্যবস্থাপনা এসেছে ব্রিটিশ ও মুঘল আমল থেকে। এছাড়া জঙ্গি ও সামরিক শাসনের কারণে দেশের স্থায়ী ক্ষতিটা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাইজেশনের কাজ চলছে জানিয়ে শামসুর রহমান শরীফ বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে অনেকখানি কাজ শেষ করে ফেলতে পারব। আমরা শিগগিরই ভূমি ব্যবস্থাপনা থেকে দুর্নীতিকে মুক্ত করে ছাড়ব।

ভূমি সচিব মো. আবদুল জলিল বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত মাঠ পর্যায়ে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এমন কানুনগো, সার্ভেয়ার বা তহশিলদারদের বিরুদ্ধে এ বছরে ৭৫টি মামলা করেছি। যার ২৫টি মামলায় শাস্তি দিয়েছি। জরিপের ক্ষেত্রে ১৫৫টি মামলা হয়েছে, এর মধ্যে ৫৭টিতে শাস্তি দেয়া হয়েছে। ৬৩টি অনিস্পন্ন আছে, বাকিগুলোতে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে দাবি করে সচিব বলেন, প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সিস্টেম ডেভেলপ করে কীভাবে মানুষকে সেবা দেয়া যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দু-এক দিনের মধ্যে দুদকের কাছে পাঠিয়ে দেব।

তিনি আরও বলেন, দলিলের সঠিকতা না থাকলে ভূমির মালিকানার সঠিকতা থাকবে না। ফলে অপদখলকারীরা সুযোগ পেয়ে যায়। এ জন্য সচেতন থাকতে হবে।

সভায় দুদকের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরএমএম/এএইচ/আইআই