দেশজুড়ে

ফেলানী হত্যা : মঙ্গলবার আবার বসছে ভারতের বিশেষ আদালত

বহুল আলোচিত ফেলানী হত্যার পুনর্বিচার কার্যক্রম ৩ মাস ৫ দিন মুলতবি থাকার পর ৩০ জুন ভারতের বিশেষ আদালত বসবে। তবে বারবার তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে আদালত মুলতবির ঘটনায় ফেলানী হত্যার ন্যায় বিচার পাওয়ার ব্যাপারে সংশয় দেখা দিয়েছে। আসামি ও বিচারকের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আর যেন রায়ের তারিখ পেছানো না হয় এ দাবি ফেলানীর মা জাহানার বেগম ও বাবা নুর ইসলাম নুরুর। ভারতের কোচবিহারে বিএসএফ সেক্টর সদর দফতরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্টে ফেলানী হত্যার পুনর্বিচার কার্যক্রমের এখন রায় ঘোষণার অপেক্ষা। ৫ সদস্যের বিচারক মণ্ডলির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করার তারিখ নির্ধারণ করা হয় গত ২৬ মার্চ আদালত মুলতবির সময়। সেদিন ভারতের সরকারি আইনজীবী বিপিং কুমার অসুস্থতার কারণে আদালতে উপস্থিত হতে না পারায় দীর্ঘদিনের জন্য আদালত মুলতবি ঘোষণা করা হয়।কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের বাসিন্দা ফেলানী। জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফর হাতে নির্মম হত্যার শিকার হয়। ফেলানী হত্যার বিচারের জন্য দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম আর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপের মুখে দীর্ঘ আড়াই বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ফেলানী হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। কোচবিহারে বিএসএফ এর সদর দফতরে স্থাপিত বিশেষ আদালতে। ওই বছরের ১৮ আগস্ট ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ও মামা হানিফ সাক্ষ্য শেষে দেশে ফেরেন ২০ আগস্ট। একই বছর ৬ সেপ্টেম্বর বিএসএফ এর বিশেষ আদালত আসামি অমীয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেন। এতে করে বিচারিক কার্যক্রম নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় আন্তর্জাতিক মহলে। মেয়ে হত্যার ন্যায় বিচার পেতে ফেলানীর বাবা ১১ সেপ্টেম্বর ভারতীয় হাই কমিশনারের কাছে আবেদন করেন। এরই প্রেক্ষিতে ১৩ সেপ্টেম্বর বিএসএফ রিভিশন ট্রায়াল করার ঘোষণা দেন। ঘোষণার এক বছর পরে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর পুনর্বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে বিশেষ আদালত। সাক্ষী ছাড়াই ৩ দিন চলে আদালত। ২৬ সেপ্টেম্বরে পুনরায় সাক্ষ্য প্রদানের জন্য ডাক পরে ফেলানীর বাবা ও মামা হানিফের। হঠাৎ করে ৩ দিনের জন্য আদালত মুলতবি হওয়ায় মাঝ পথ থেকে ফেরত আসতে হয় তাদের। এরপর শুধুমাত্র ফেলানীর বাবা পুনরায় সাক্ষ্য প্রদানের জন্য ১৬ অক্টোবর গিয়ে সাক্ষী দিয়ে দেশে আসেন ১৭ অক্টোবর মধ্যরাতে। ফেলানী হত্যার মামলার রায় শোনার জন্য সারা বিশ্ব যখন তাকিয়ে ভারতের দিকে ঠিক তখনি আদালত ২০ অক্টোবর আসামি অশীয় ঘোষ অসুস্থতার কারণে এ বছরের ২৪ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন। মুলতবি শেষে ২৫ মার্চ সকাল ১০টায় ভারতের কোচবিহারে বিএসএফ সেক্টর সদর দফতরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স আদালতে ফেলানী হত্যার পুনর্বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এবার ৫ সদস্যের বিচারক মণ্ডলি উপস্থিত থাকলেও অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হতে পারেননি ভারতের সরকারি আইনজীবী। এ কারণে আদালতের কার্যক্রম আবারো স্থগিত করে পরেরদিন বৃহস্পতিবার আদালত বসার দিন ধার্য করেন। কিন্তু একই কারণে ওই দিনও আদালতের কার্যক্রম শুরু করতে পারেননি বিচারক। এজন্য আদালত এ বছরের ২৯ জুন পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। নিহত ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম নুরু আবেগে আপ্লুত কণ্ঠে জাগো নিউজকে বলেন, ভারত সরকার ফেলানী হত্যার বিচার নিয়ে তামাশা শুরু করেছে। খুনি বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ নিজের দোষ স্বীকার করার পরও প্রথম দফা বিচারে তাকে খালাস দেয়া হয়। অনেক আবেদন নিবেদন করার পর পুনর্বিচার শুরু হলেও সাক্ষ্য নিয়েও তালবাহানা করে। এখন শুধু রায় ঘোষণার পালা। অথচ একের পর এক অজুহাত দাঁড় করিয়ে ব্যহত করছে বিচার কার্যক্রম। এসব ঘটনায় ন্যায় বিচার পাবো কী না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। মা জাহানারা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে জাগো নিউজকে বলেন, মোর কলিজার টুকরা মাইয়াক যাই গুলি করি মারছে তার ফাঁসি চাও। বিএসএফের হাবিলদার অমিয় ঘোষ আত্মস্বীকৃত খুনি। তার ফাঁসির দাবি ফেলানীর গ্রামের সব মানুষের। কুড়িগ্রাম ৪৫বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল জাকির হোসেন জাগো নিউজকে জানান, ফেলানী হত্যা মামলার বিশেষ আদালত ২৯ জুন পর্যন্ত মুলতবি থেকে ৩০ জুন আবার বসবে। এ বিষয়টি তাকে নিশ্চিত করেন ভারতের ৪২ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডেন্ট ভিপি বাদলা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, বিএসএফের হাবিলদার অমিয় ঘোষ আত্মস্বীকৃত খুনি। দ্বিতীয় দফা বিচারেও অমিয় ঘোষ তার অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন এবং সাক্ষ্য প্রমাণেও প্রমাণিত নিরস্ত্র ফেলানীকে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এখন শুধু রায় ঘোষণার পালা। ঠিক সেসময় বিচার বিলম্বিত করা মানেই ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়া। এ মামলায় সহায়তাকারী বাংলাদেশের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস, এম, আব্রাহাম লিংকন জাগো নিউজকে বলেন, বিচারের রায় বিলম্বিত করা হতাশাব্যঞ্জক। বিলম্বিত বিচার ন্যায় বিচার প্রাপ্তির প্রধান অন্তরায়। শুধুমাত্র আসামির অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এর আগে ৪ মাস আদালতের কার্যক্রম পেছানো হয়। এখন আবার আইনজীবী অসুস্থ। তাই তিন মাস আদালত মুলতবি। এটা দুঃখজনক। তবে আদালতের যুক্তিযুক্ত কারণ থাকলে ভিন্ন কথা। তিনি আরো বলেন, ভারত সরকার পুনর্বিচার কার্যক্রম শুরু করেই স্বীকার করে নিয়েছে প্রথম দফায় অনুষ্ঠিত ফেলানী হত্যার রায় সঠিক হয়নি। সে রায়ে অবিচার সাধিত হয়েছিল। পুনর্বিচার ফেলানীর পরিবার তথা বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যার ন্যায় বিচার পাবার পথ প্রশস্ত করেছে। কারণ ইতোপূর্বে দেয়া তথ্য উপাত্ত এবং সাক্ষ্য সব কিছুই ন্যায় বিচার পাবার অনুকূলে।  নাজমুল হোসেন/এমজেড/পিআর

Advertisement