রমজান মানে হচ্ছে প্রত্যেক বান্দাহ তার দুনিয়ার সকল প্রকার খারাবি লোভ-লালসা, চাওয়া-পাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রেখে খাঁটি মুমিন হিসেবে তৈরি করে। তখনই বান্দা আল্লাহর মনের অবস্থা বুঝে তাকে রহমত দান করে সিক্ত করেন। সেই রহমতের দশক পেরিয়ে আমরা অতিক্রম করছি মাগফিরাতের দশক। এ দশকের গুরুত্ব অত্যাধিক। প্রথম দশকে আল্লাহ রহমতের ধারা বর্ষণ করেন বান্দার উপর। রহমত লাভে বান্দা যখন নিজেকে আল্লাহমুখী করে; বিনয়-নম্রতা লাভ করে তখনই কেবল আল্লাহর দরবারে স্বাচ্ছন্দে উৎফুল্ল হৃদয় নিয়ে মাগফেরাত কামনা করতে পারে। তাইতো আল্লাহ রোজা ফরজ করার সময়ই বলেছেন- হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনি তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারো। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)এই আয়াতের ভিত্তিতে আল্লাহ তাআলা ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক দ্বিতীয় হিজরিতে রমজান মাসের রোজা পালনের বিধান জারি করেছেন। যার ফলশ্রæতিতে আমরা রমজানের ফরজ বিধান আদায় করছি। আল্লাহ যখন তার প্রিয় বান্দাকে কোনো কিছু দান করার ইচ্ছা পোষন করেন; তখন তাকে পরীক্ষা করেন যে, আল্লাহর প্রতি তার কতটুকু মহব্বত বা আনুগত্য রয়েছে তাও দেখেন।যেমন পরীক্ষা করেছিলেন হযরত মুসা আলাইহিস সালামকে। আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেন- ‘মুসা (আলাইহিস সালাম)কে আমি ত্রিশ রাত-দিনের জন্য (সিনাই পর্বতের উপর) ডাকলাম এবং পরের দশ দিন আরও বাড়িয়ে দিলাম। এভাবেতার রবের নির্ধারিত সময় পূর্ণ চল্লিশ দিন হয়ে গেলো। (সুরা আরাফ : আয়াত ১৪২) প্রখ্যাত মুফাস্সির হযরত আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হযরত মুসা আলাইহিস সালাম জিলক্বদ মাসের ত্রিশ দিন এবং জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন রোজা পালন করে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হন এবং তাওরাত কিতাব লাভ করেন। হযরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার শা’বানের শেষ দিনে আমাদেরকে উপদেশ দিয়ে বলেন, হে লোক সকল! একটি মহান মাস, একটি কল্যাণবহ মাস তোমাদের কাছে সমাগত, এটি এমন একটি মাস যাতে একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আলাহ তাআলা এই মাসের (দিনের বেলায়) রোজা ফরজ করেছেন এবং (রাতের বেলায়) নামাজ আদায়কে পুণ্যের কাজ বলে ঘোষণা নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নফল কাজ করবে সে ওই ব্যক্তির সমমর্যাদার হবে যে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করে। এটি সবর তথা ধৈর্যের মাস, আর ধৈর্যের এমন এক গুণ যায়েছে যার প্রতিদান হলো জান্নাত। এটি পারস্পরিক সহানুভূতির মাস। এটি সেই মাস যাতে মুমিন বান্দার রিজিক বাড়িয়ে দেয়া হয়। এটি এমন এক মাস যার প্রথম অংশ রহমতের, দ্বিতীয় অংশ মাগফিরাতের বা ক্ষমার এবং শেষাংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তির। যে ব্যক্তি এই মাসে নিজের অধীনস্থদের কাজ-কর্মকে হালকা করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তাকে মাফ করে দেবেন এবং পরিশেষে তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন। (বায়হাকি)সুতরাং উপরোক্ত কুরআন হাদিস মোতাবেক আমরা এই মাগফেরাতের দশকে আল্লাহর অধিক নিকর্টবর্তী হয়ে নিজেদেরকে তার প্রিয় বান্দা হয়ে রমজানের কল্যাণ, বরকত, মাগফেরাত ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লাভ করব। আল্লাহ আমাদেরকে মাগফেরাতের দশকে পরিপূর্ণ আমল করার তৌফিক দিন। আমীন।তথ্যসূত্র : কুরআন, ইবনে কাছীর, তাফহীম, বায়হাকি।জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদীস মোতাবেক আমলী জিন্দেগী যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন।এইচএন/পিআর
Advertisement