আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(আমার এ কথা) ঘোষণা করে দাও; হে আমার ইবাদতকারীগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছ; তারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু।’ (সুরা যুমার : আয়াত ৫৩)
Advertisement
আল্লাহ তাআলা উল্লেখিত আয়াতে কারিমায় তাঁর বিশাল ক্ষমা ও রহমতের কথা বর্ণনা করেছেন। পাপ বা গোনাহের আধিক্য যত বেশিই হোক না কেন। মানুষ যাতে আল্লাহর সীমাহীন রহমত থেকে নিরাশ না হয়।
ঈমান গ্রহণের আগে অথবা গোনাহ করার পর তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুভূতি সৃষ্টি হওয়ার আগে মানুষ যেন এ ধারণা পোষণ না করে যে, আমিতো অনেক বড় অপরাধী বা গোনাহগার। আমাকে আল্লাহ কিভাবে ক্ষমা করবেন?
অথচ কুরআনের ঘোষণা হলো কোনো ব্যক্তি যদি সত্য হৃদয়ে ঈমান গ্রহণ করে বা নিষ্ঠার সঙ্গে গোনাহমুক্ত থাকার তাওবা করে; তবে মহান আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির সব গোনাহ বা পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তাদের উদ্দেশ্যে
Advertisement
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’
আল্লাহ তাআলার রহমত থেকে নিরাশ না হতে সতর্ক করতে গিয়ে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর ক্ষমা ও দয়ার বিশালতা তুলে ধরেছেন-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, বনি ইসরাইলদের মধ্যে ২ সহধর্মী ছিল। যাদের একজন ছিল ইবাদতকারী।ইবাদতকারী ব্যক্তি গোনাহকারী ব্যক্তিকে সব সময় পাপ কাজ করতে দেখতো এবং তাকে পাপ কাজ ছেড়ে দেয়ার জন্য্ উপদেশ দিত- ‘তুমি পাপ কাজ ছেড়ে দাও।’
তখন গোনাহকারী ব্যক্তি বলল, ‘আমাকে আমার প্রভুর সঙ্গে বুঝাপড়া করতে দাও; তোমাকে কি আমার পাহারাদার হিসেবে পাঠানো হয়েছে নাকি!
Advertisement
তখন ইবাদতকারী ব্যক্তি বলল, ‘আল্লাহর শপথ করে বলছি! আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না অথবা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না।’ তারা উভয়ে যখন মারা গেল, তখন তাদেরকে বিশ্বপ্রভুর সামনে হাজির করা হলো।আল্লাহ তাআলা ইবাদতকারী বান্দাকে বললেন, ‘তুমি কি আমার সম্বন্ধে জানতে? নাকি আমার ক্ষমতা তোমার হাতে ছিল?
তারপর পাপী ব্যক্তিকে বললেন, ‘যাও, আমার রহমতের গুণে জান্নাতে প্রবেশ কর। আর অপর জনের (ইবাদতকারী) উদ্দেশ্যে (ফেরেশতাদেরকে) বললেন, একে জাহান্নামে নিয়ে যাও।’ (আবু দাউদ)
হাদিসটি বর্ণনা করার পর হজরত আবু হুরায়রা (শপথ করে) বলেন, ‘যে সত্তার হাতে আমার জীবন তার শপথ করে বলছি ঐ কথাটিই ইবাদতকারী ব্যক্তির দুনিয়া ও পরকালকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
মনে রাখতে হবে
আল্লাহ তাআলার রহমত পাওয়ার আশা করার অর্থ এই নয় যে, রহমতের আশায় ধারাবাহিকভাবে জীবনভর পাপ কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। তাঁর যাবতীয় ফরজ বিধি-বিধান ও কার্যাদির ব্যাপারে কোনোই পরোয়া না করা এবং আল্লাহর তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত সীমা ও নিয়ম-নীতি নিষ্ঠুরতার সঙ্গে অমান্য করে যাওয়া।
একইভাবে আল্লাহ তাআলার ক্রোধ ও প্রতিশোধকে আহ্বান জানিয়ে তাঁর রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার আশা করা একেবারেই বোকামি আর খামখেয়ালী ছাড়া কিছুই নয়। তাহলো নিম ফলের বীজ লাগিয়ে আঙ্গুর ফল আহরণের আশা পোষণ করার মতো।
সুতরাং মানুষের স্মরণ রাখা উচিত আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য যেমন ‘গাফুরুর রাহিম’; আবার তিনি অবাধ্যদের জন্য ‘আযিযুন জুংতিক্বাম’।
আরও পড়ুন
যেভাবে রহমত ও ক্ষমা চাইতে বলেছেন আল্লাহ যে দোয়ায় সব সময় আল্লাহর রহমত নাজিল হয়আল্লাহ তাআলা বান্দাকে স্মরণ করে দেয়ার জন্য অন্য আয়াতে ঘোষণা করেছেন, ‘আমার বান্দাদেরকে বলে দাও, নিশ্চয়ই আমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু এবং আমার শাস্তিই হলো অতি মর্মন্তুদ শাস্তি।’ (সুরা হিজর : আয়াত ৪৯-৫০)
পরিশেষে...
আলোচ্য আয়াত ও হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ রহমতের বিশালতা অনেক বেশি। যা মানুষের জ্ঞানে বুঝে আসার কথা নয়। তাই আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ না হওয়াই মুসলিম উম্মাহর ঈমানের একান্ত দাবি। আবার তাঁর বিধান বাস্তবায়ন ও তা লংঘনের শাস্তি সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে।
আবার কেউ জান্নাতে যাবে এ দাবি যেমন করা ঠিক নয়; তেমনি কেউ জাহান্নামে যাবে এ রকম মন্তব্য করাও ঠিক নয়। কারণ সর্ব শক্তিমান আল্লাহ তাআলাই বান্দার সব কাজের ফয়সালা করার জন্য যথেষ্ট।
মুসলিম উম্মাহর উচিত, ‘আল্লাহর নাফরমানি না করে তাওহিদে পরিপূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে শিরকমুক্ত জীবন যাপন করার পাশাপাশি সব ধরনের পাপ ও গোনাহের কাজ পরিত্যাগ করা। এমন কোনো কথা না বলা, যে কথা আল্লাহর কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে বসে।
সর্বোপরি মানুষের জীবনের সুখে-দুঃখে কোনো অবস্থাতেই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়া। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর দয়ার বিশালতা ও রহমত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর