শুরু দেখে মনে হচ্ছিল, অনেকদূর যাবে চিটাগং ভাইকিংস। সবার খেলা দেখে, সব দলের শক্তি ও সামর্থ্য সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা নিয়ে মাঠে নামা চিটাগং ওপেনার লুক রঞ্চি আর সৌম্য সরকার প্রথম ৫ ওভার যেভাবে ব্যাট করলেন, তা দেখে মনে হচ্ছিল ২০০'র কাছাকাছি যাবে মিসবাহ-উল-হকের দল।
Advertisement
কিন্তু হায়! প্রথম ৫ ওভারে যে দলের রান বিনা উইকেটে ৫৪, আর ইনিংসের মাঝামাঝি যাদের স্কোর শতরানের খুব কাছে (এক উইকেটে ৯১), সেই দল কিনা গিয়ে থামলো মাত্র ১৪৩ রানে।
উইকেট ব্যাটিং স্বর্গ নয়। আবার মন্দও নয়। একটু স্লো। তবে দেখে খেললে রান করা কঠিন না। তাই সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এটা মোটেই লড়িয়ে স্কোর নয়। কম রান।
আগের চার ম্যাচে কোন দলই ১৪০'র আশপাশে থেকে ম্যাচ জিততে পারেনি। আজ মিসবাহ-উল-হকের হকের দলও পারলো না। বাটলার, স্যামুয়েলস ও ইমরুল কায়েসের চওড়া ব্যাটে অনায়াসে হেসে খেলে এ রান টপকে ৮ উইকেটের বড় জয়ে মাঠ ছাড়লো মোহাম্মদ নবির কুমিল্লা। খেলা শেষ হলো ১৬ বল আগে।
Advertisement
এবারের বিপিএলে শুরু ভাল হয়নি। প্রথম দিন মাঠে নেমে স্বাগতিক সিলেট সিক্সার্সের উজ্জীবীত ও অনুপ্রাণিত নৈপুন্যের সামনে কুলিয়ে উঠতে পারেনি কুমিল্লা। তবে আজ ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে বেশ গোছানো ক্রিকেট খেলেছে মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের শিষ্যরা।
দুই মিডিয়াম পেসার সাইফুদ্দিন আর ডোয়েন ব্রাভো বুদ্ধি খাটিয়ে বল করে আসলে কুমিল্লাকে খেলায় ফিরিয়েছেন। যদিও সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু‘টি উপহার দিয়েছেন অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি। যিনি উইকেটের চারিদিকে ইচ্ছেমত চার ও ছক্কার হাঁকিয়ে কুমিল্লার বোলিংকে তছনচ করে দিচ্ছিলেন, সেই লুক রঞ্চির উত্তাল উইলোবাজি থামলো নবির অফস্পিনে।
এরপর সাইফউদ্দিন আর ক্যারিবীয় পেসার ডোয়েন ব্রাভো দু দিক থেকে চেপে ধরলেন। সবাই জানেন জোরের ওপর বল করার চেয়ে ডোয়েন ব্রাভো সব সময়ই উইকেটের চরিত্র বুঝে বলের কারুকাজ আর গতিতে বৈচিত্র এনে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করায় খুব পারদর্শি। আজও ব্রাভো ঠিক সে কাজটিই করেছেন। তার সাথে একই কাজটি দারুণ দক্ষতার সাথে করে দেখিয়েছেন তরুণ সাইফুদ্দিনও।
অযথা বাড়তি গতিতে বল সঞ্চারের বদলে কখনো ফুল পেসে আবার কোন সময় গতি কমিয়ে স্লোয়ারে ব্যাটসম্যানকে বিব্রত করেছেন সাইফুদ্দিন। আর তাতেই ধরা খেয়েছেন চিটাগাং ভাইকিংস ব্যাটসম্যানরা। সাইফুদ্দিন আর ব্রাভোর ৮ ওভারে রান ওঠে মাত্র ৫৩। আর পতন ঘটে ৫ উইকেটের। তাতেই খেলার নিয়ন্ত্রণ চলে আসে কুমিল্লার হাতের মুঠোয়। এরপর জস বাটলার (৪২ বলে ৪৮), ইমরুল কায়েস (৩১ বলে ৩৩*) ও মারলন স্যামুয়েলস (১৮ বলে ৩৫*) স্বচ্ছন্দে খেললে সহজ জয় ধরা দেয় কুমিল্লার। ষষ্ঠ ওভারে (৫.৫ ওভারে ৬৩ ) উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গার পর থেকেই চিটাগং ইনিংসের চালচিত্র পাল্টে গেল। নিউজিল্যান্ডের ৩৬ বছর বয়সী লুক রঞ্চি ২১ বলে ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দিয়ে ফেরার পর ছন্দপতন চট্টগ্রামের। লুক রঞ্চি ফেরার পর যিনি চট্টগ্রামের হাল ধরতে পারতেন, সেই সৌম্য ভুল পথে হেঁটে দলের সর্বনাশ ডেকে আনলেন আরও।
Advertisement
এ ম্যাচের আগে কাল সোমবার বিকেলে প্র্যাকটিসে সৌম্য বেশ আস্থার সাথে বলেছিলেন, ‘এবার আর ৩০-৪০ এর ঘরে আউট হতে চাই না। লম্বা ইনিংস খেলতে চাই।' এক সময় মনে হচ্ছিল, সত্যি সত্যি কথা রাখছেন সৌম্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর কথা রক্ষা হয় নি।
প্রথম উইকেটে শক্ত ও মজবুত ভীত গড়ে ওঠার পর রঞ্চি সাজঘরে ফেরার পরও সৌম্য উইকেটে ছিলেন। তিনি একদিক আগলে রাখলেই হয়ে যেত। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের চিরায়ত সমস্যা যেটা, আজ সেই রোগে ভুগেই ফিরলেন সৌম্য। তিরিশের ঘরে গিয়ে কোথায় শেষ বল পর্যন্ত উইকেটে কাটিয়ে দলকে একটা সন্মানজনক ও লড়িয়ে স্কোর গড়ে সাজঘরে ফিরবেন, তা না; মনগড়া শট খেলতে গেলেন।
২৮ বলে ৩৬ রান করে সৌম্য গেলেন অযথা প্যাডেল সুইপ করতে। সাইফুদ্দিনের উইকেট সোজা ডেলিভারি ভেঙ্গে দিল স্টাম্প। এরপর ব্যর্থতার মিছিল চিটাগং ভাইকিংসের। দিলশান মুনাবিরা ২২ বলে ২১, সিকান্দার রাজা ১৩ বলে ১৮*, এনামুল হক ৬ বলে ৩ , মিসবাহ ১১ বলে ৬, রিস ৯ বলে ৯ আর সোহরাওয়ার্দী শুভ ৩ বলে ৪ রান করে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করলেন। এমন ভুল করেননি কুমিল্লার ব্যাটসম্যানরা। লিটন দাস (১৪ বলে ২৩) আর বাটলার (৪২ বলে ৪৮) শক্ত ভীত গড়ে বিদায় নিলেও মারলন স্যামুয়েলস (১৮ বলে ৩৫) আর ইমরুল কায়েস (৩১ বলে ৩৫) আস্থার সাথে দল জিতিয়েই বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়লেন। আর তাতেই এবার দ্বিতীয় ম্যাচে এসে জয়ের দেখা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স শিবিরে।
এআরবি/এমএমআর/আরআইপি