দেশজুড়ে

ঈদে রেশম পল্লীতে বেড়েছে ব্যস্ততা : বিক্রিও বেশ ভালো

ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহীর রেশম পল্লীতে বেড়েছে ব্যস্ততা, আর শো-রুমগুলোতে বেড়েছে রেশম প্রেমিকদের ভিড়। অন্যান্য বস্ত্রের পাশাপাশি এ বছর রেশম বস্ত্রেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। আবহাওয়া ও সব বয়সী ক্রেতাদের রুচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে রেশম কারখানাগুলোতে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রঙ ও ডিজাইনের পোশাক। আর তাই রাজশাহীর রেশম পল্লীর কারিগরদের যেন এখন দম ফেলারও ফুরসত নেই। পলু থেকে গুটির উৎপাদন আর তা থেকে সুতা তৈরি, বুনন, কাটিং, সেলাই ও হাতের কাজ নিয়ে ব্যস্ত কারিগররা। এবারের ঈদ বর্ষা মৌসুমে হওয়ায় রেশমের পাশাপাশি সুতি পোষাকও তৈরি হচ্ছে কারখানাগুলোতে। দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকায় রেশমের তৈরি এসব বাহারি রং ও ডিজাইনের শাড়ি থ্রি-প্রিস মন কেড়েছে সব শ্রেণির ক্রেতাদের। আর শিশু ও বয়স্ক নারীদের জন্যও এবারের ঈদে রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ।সোমবার সকালে সরেজমিনে রাজশাহী মহানগরীর বিসিক রেশম শিল্পের বিভিন্ন কারখানা ও শো-রুমগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে এমনই চিত্র।  ঈদে নতুন কী ধরনের পোষাক শো-রুমগুলোতে শোভা পাচ্ছে তা জানতে কথা হয় সপুরা সিল্কের শোরুম-ইনচার্জ সাইদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে জানান, এবারের ঈদে মসলিন অ্যাম্ব্রয়ডারি ম্যাচিং ডিজাইনের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৩৮০০ থেকে ১০৮০০ টাকা পর্যন্ত। সফ্ট সিল্কের শাড়ি সাড়ে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত, স্কিন প্রিন্ট দেড় হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা, অ্যান্ডি থান ধুপিয়ান স্টাইপের উপর শাড়ি ৩ হাজার ৯শ থেকে ৫ হাজার ২শ টাকা। বলাকা সিল্কের নতুন ডিজাইনের শাড়ি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, অ্যান্ডির আর্ট প্রিন্টের উপর শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৭৫০ টাকায়, স্পট সিল্ক আর্ট প্রিন্টের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৩৬৫০ থেকে ৩৮৫০ টাকায়, সিল্কের উপর বিভিন্ন হাতের কাজ ও ডিজাইনের থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকায়। ওড়না বিক্রি হচ্ছে তিনশ থেকে চারশ টাকা পর্যন্ত। আর ছেলেদের বিভিন্ন রং, হাতের কাজ, অ্যাম্ব্রয়ডারি, ব্লক, অ্যাপ্লিকের উপর ডিজাইন করা পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকায়। সিল্কের শার্ট রেডিমেট বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৬৫০ টাকায়। জিন্স প্যান্ট রকম ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ২৭০০ টাকার মধ্যে। আর শিশুদের জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের ফতুয়া, পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩ হাজার টাকায়।  নগরীর সপুরা সিল্কের শোরুমে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মৌসুমি নামের এক ক্রেতা জাগো নিউজকে জানান, তিনি কয়েকটি সিল্কের শো-রুম ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। তবে সপুরা সিল্কে নিজস্ব কারখানায় সিল্কের শাড়ি ও থ্রি-পিস তৈরি করে বলে এখানে নানা রং ও ডিজাইনের পোষাক পাওয়া যায়। তিনি অ্যান্ডির আর্ট প্রিন্টের উপর শাড়ি কিনেছেন। আর এখানে দামটাও সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা মধ্যে বলে জানান তিনি। এ মার্কেটে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মার্কেট করতে আসা সেনাবাহিনীর মেজর ফেরদৌস জাগো নিউজকে জানান, এই শো-রুমে সব ধরনের পোষাক পাওয়ার জন্য কম সময়ের মধ্যে পরিবারের সকলের জন্য পোষাক কিনতে এসেছেন। তবে এখানে পোষাকের দাম অনেক সস্তা বলে জানান ওই সেনা কর্মকর্তা। তবে সরকারি সহযোগিতার অভাব আর অলাভজনক ফসল হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন এ পেশা থেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে জানালেন সপুরা সিল্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব সদর আলী। তিনি জাগো নিউজকে আরো জানান, রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে দরকার সরকারি সহযোগিতা। এই এলাকায় আগে আরো সিল্কের কারখানা ছিল। বর্তমানে তিনি নিজেই পুরনো পেশা বলে এই শিল্পকে ধরে রেখেছেন। নিজস্ব জায়গায় গুটি উৎপাদন করে কারখানায় রেশমের পোশাক তৈরী করে শো-রুমের বিক্রি করেন তারা। বাইরের কোনো পণ্য তিনি তার শো-রুমে বিক্রি করেন না। অলাভজনক ব্যবসা হওয়ার পরেও এবারের ঈদে বিভিন্ন বয়সী ক্রেতাদের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন ডিজাইনের ও রঙয়ের সিল্কের পোশাক তৈরি করা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ক্রেতা কিছুটা কম হওয়ায় আগামী দিনগুলোতে ব্যবসা আরো ভালো হবে বলে প্রত্যাশা করছেন ওই ব্যবসায়ী। শাহরিয়ার অনতু/এমজেড/এমএস

Advertisement