মুশফিকুর রহীমের ওয়ানডে সেঞ্চুরি বাদ দিলে দক্ষিণ আফ্রিকায় সব ফরম্যাটে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে এসেছে সফরে একমাত্র শতরানের ইনিংসটি। এছাড়া ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, সাব্বির রহমান, মাহমুদউল্লাহরা ছিলেন ব্যর্থতার মিছিলে।
Advertisement
এদের একজন ব্যাটসম্যানও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। কারও ব্যাটে রান ছিল না। তবে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সেই না পারার মিছিল থেকে বেরিয়ে এসেছেন সৌম্য সরকার। হাফ সেঞ্চুরি করতে না পারলেও দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে সৌম্য সরকার কিছুটা রান করেছেন।
পচেফস্ট্রমে ২৭ বলে ৪৪ আর ব্লুমফন্টেইনে ৩১ বলে ৪৭ রানের ইনিংস বেরিয়ে এসেছে এ বাঁ-হাতি ওপেনারের ব্যাট থেকে। সে কারণেই ভাবা হচ্ছে সৌম্য হারানো ফর্ম ফিরে পেয়েছেন। কথা বলে বোঝা গেল সৌম্য নিজেও বিশ্বাস করেন, ‘তার খারাপ সময় কেটে গেছে। এখন আবার তার সামর্থ্য প্রমাণের সময়। নিজেকে মেলে ধরার, বিধ্বংসী ইনিংস খেলে দলের জন্য কিছু করারও সময় চলে এসেছে।’ তাই তো দক্ষিণ আফ্রিকায় পরপর দুই ম্যাচে চল্লিশের ঘরে আউট হওয়া সৌম্য চান বড় ইনিংস খেলতে। তার চিন্তা-ভাবনায় এখন শুধুই ভালো খেলা এবং যতটা সম্ভব দীর্ঘ ইনিংস উপহার দেয়া।
আজ পড়ন্ত বিকেলে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে চিটাগং ভাইকিংসের প্র্যাকটিসে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে অনেক কথার ভিড়ে সৌম্য পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় যেভাবে খেলেছি সেটা ধরতে রাখতে চাই। তবে ৩০-৪০ করে আউট হতে চাই না। আমি চাই আরও বেশি রান করে আউট হতে। চেষ্টা করবো সে রকম কিছু করতে।’
Advertisement
সৌম্য জানেন, দলের জন্য কিছু করতে হলে বিপিএলের মতো টুর্নামেন্টে ৩০-৪০ করে আউট হওয়া চলবে না। তাই ইনিংসকে আরও দীর্ঘ করার দৃঢ় সংকল্প মনে। সৌম্যর অনুভব, ‘ওখানে (দক্ষিণ আফ্রিকায়) ৩০-৪০ করে আউট হওয়ার কারণ ছিল ম্যাচ পরিস্থিতি। কিন্তু এখানে ম্যাচ পরিস্থিতি ভিন্ন হবে। আমি পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করব।’
সৌম্য মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার ঘণ্টা দেড়েক আগে পাশের নেটে ব্যাটিং শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে লিটন দাস বলে ওঠেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় দেড় মাস থেকে তিন ফরম্যাটের সিরিজ খেলার পর নিজ দেশের কন্ডিশনেও নাকি কিছুটা অনভ্যস্ত মনে হচ্ছে।’
একই কথা সৌম্যর মুখেও, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরার পর এখানকার উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি। কারণ দেড় মাসের মতো বাইরে ছিলাম। ওখানকার উইকেটের চরিত্র ও আচরণ ভিন্ন। তাই আবার আমাদের এখানে নতুন করে অ্যাডজাস্টের চেষ্টা করছি।’
তবে সৌম্য শুধুই উইকেটের কথা বলেননি। আবহাওয়ার কারণে উইকেটের যে আচরণগত পার্থক্য আছে, সেগুলোও বিস্তারিত ভেঙে দিয়েছেন। তার কথা, ‘এখানে দুপুর ও সন্ধ্যায় উইকেট দু’রকমের আচরণ করছে। দুপুরের ম্যাচে দেখলাম স্পিনারদের বলগুলো ঘুরে। আবার সন্ধ্যায়, মানে রাতে শিশিরভেজা পিচ বদলে যায় অনেকটাই। এখন ওই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই দুই কন্ডিশনেই অনুশীলন করার চেষ্টা করছি। সব মিলিয়ে প্রস্তুতি ভালো।’
Advertisement
তার দল চিটাগাং ভাইকিংস ছাড়া সব দল অন্তত একটি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে। কাল যে কুমিল্লার সঙ্গে ম্যচে, সেই মোহাম্মদ নবি আর লিটন-ইমরুল কায়েসের দলও একটি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে মঙ্গলবার তার দলের বিপক্ষে মাঠে নামবে।
সব দলের খেলা দেখে তারপর নিজেরা মাঠে নামবেন। এটা কি এক ধরনের প্লাস পয়েন্ট? সৌম্য সরকারের কথা, ‘দেখে আর কতটুকু? অনেকে আছে, দেখে শেখে! অনেকে আছে, করে শেখে! কে কোনভাবে নিতে পারে। অবশ্য দেখে ভালো হয়েছে তারা কেমন করছেন, কেমন ব্যাটিং করে কেমন বোলিং করে। একটু হলেও পরিকল্পনা করা যাবে। পরিকল্পনা করার সুযোগ পাওয়া গেছে।’
ঘুরেফিরে বড় ইনিংস খেলার দৃঢ় সংকল্প সৌম্যর মুখে, ‘চেষ্টা করব ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেলে ইনিংসটি বড় করার। দেশি-বিদেশি বলে কোনো কথা নেই। যেহেতু আমি খেলছি, আমার একটা দায়িত্ব আছে ভালো খেলার। চেষ্টা করবো নিজে ভালো খেলে নিজেকে আবার নতুন করে ধরে রাখতে পারি।’
যেহেতু তার শেষ দুটি ভালো ইনিংসও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে, তাই বিপিএলে সৌম্য ভাল খেলতে মুখিয়ে। শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচগুলো অবশ্যই ভালো ছিল। আমি সে ভালোটা ধরে রাখতে চাই।’
এআরবি/আইএইচএস/বিএ