দেশজুড়ে

স্বর্ণালীও ‘মুক্তামণি’র রোগে আক্রান্ত

‘মুক্তামণি’র মতো বিরল রোগে আক্রান্ত রাজশাহীর পবার কিশোরী মেহেরিন আক্তার স্বর্ণালী (১২)। তার ডান হাতে দেখা দিয়েছে বিরল রোগ। জন্মের সময় ছোট কালো দাগ থেকে ছড়িয়েছে পুরো হাতেই। চিকিৎসা নেই ভেবে এতোদিন চিকিৎসকের শরণাপন্নও হয়নি তার বাবা-মা।

Advertisement

সম্প্রতি গণমাধ্যমে মুক্তামণির বিরল রোগ ও চিকিৎসার খবর প্রকাশের পর আশার আলো দেখছে স্বর্ণালীর বাবা-মা। এনিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেও আর্থিক অসঙ্গতির কারণে থেমে গেছে চিকিৎসা।

স্বর্ণালী উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের টেগাটাপাড়ার আবদুল মান্নানের মেয়ে। সে নোনামাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী।

তার বাবা আব্দুল মান্নান দুর্গাপুরের দাওকান্দি কলেজের পিওন। তার মা রুমা বেগম গৃহীণি। তাদের ঘরে দ্বাদশ শ্রেণি পড়ুয়া একজন ছেলে সন্তানও রয়েছে। মেয়ের চিকিৎসা নিয়ে মানসিকভাবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্বর্ণালীর বাবা-মা।

Advertisement

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে স্বর্ণালীর বাবা আব্দুল মান্নান জানান, মুক্তামণির হাতে যে বিরল রোগ, তার মেয়ের হাতেও একই রোগ বাসা বেধেছে। ক্রমেই হাত মোটা ও ভারি হয়ে যাচ্ছে। হাতে ছোট ছোট গুটি ও মাংসপিন্ডর মত বেড়ে উঠছে ক্রমেই। ডান হাতের পুরোটা এখন ছড়িয়ে পড়েছে। নিচের অংশে ঝুলছে চামড়া। মাঝে মাঝে পুঁজ বের হয়। তখন ব্যথায় কাতর হয়ে উঠে স্বর্ণালী।

আব্দুল মান্নান আরও জানান, মেয়ের হাতের রোগ নিয়ে তারা চরম বিপাকে রয়েছেন। তিনি নিজে কলেজের পিওন পদে চাকরি করেন। এ থেকে সংসার চালানোর পাশাপাশি এক ছেলের পড়ালেখার খরচ যোগান দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় মেয়ের চিকিৎসার খরচ যোগানো কোনোভাবেই তারপক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণে তার মেয়ের চিকিৎসার জন্য সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহায়তা চেয়েছেন তিনি।

এদিকে, স্বর্ণালীর মা রুমা বেগম জানান, মেয়ের বয়স যখন চার বছর ছিল তখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোয়াজ্জেম হোসেনকে দেখান হয়েছিলো। সে সময় চিকিৎসক একটি মলম দিয়েছিলেন। সেটি লাগান হলেও কমেনি সেই রোগ। বরং ক্রমেই বাড়তে থাকে। এরপর অজ্ঞাত ও বিরল রোগ জেনে তারা আস্থা হারিয়ে ফেলেন। আর চিকিৎসক দেখান নি।

তিনি আরও জানান, সম্প্রতি গণমাধ্যমে মুক্তামণির বিরল রোগ নিয়ে খবর তাদের নজরে আসে। একই ধরনের রোগ স্বর্ণালীর হাতেও বাসা বেধেছে। এরপর তাকে রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আফরোজা নাজনীনকে দেখান। পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর তিনিও জানান এটি বিরল রোগ। অস্ত্রপচারের পরামর্শ দেন ওই চিকিৎসক।

Advertisement

কিন্তু অস্ত্রপচারে যে টাকা ব্যয় হবে তা মেটানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয় কোনোভাবেই। ফলে চিকিৎসা থমকে গেছে। এখন মেয়েকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। ভালো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার সামর্থও নেই তাদের।

স্বর্ণালী জানায়, স্কুলে গেলে তার পাশে অন্যরা বসতে চায় না। তাকে দেখে সহপাঠিরা হাসাহাসি করে। এজন্য প্রায় তার স্কুলে যাওয়া হয় না। শিক্ষকরা তাকে ভালোবাসলেও ক্লাশে তার ভালোলাগে না নিজের অসুস্থ হাতের জন্য।

এ বিষয়ে রাজশাহীর সিভিল সার্জন সঞ্জিত কুমার সাহা বলেন, খবর পেয়ে সোমবার সকালে আমরা স্বর্ণালীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত- এটি বিরল রোগ । নিজেদের তত্ত্বাবধানে নিয়ে শিগগিরই ওই শিশুর চিকিৎসা শুরুর কথাও জানান সিভিল সার্জন।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএএস/আরআইপি