ক্যাম্পাস

তারুণ্যের মিলনমেলায় টিএসসির আনন্দঘন ইফতার

ঘড়ির কাঁটায় বিকেল সাড়ে ৫টা পার হলেই যেন বেড়ে যায় তাদের ব্যস্ততা। মনে হয় এখন আর তাদের হাতে মিনিট খানেকও সময় নেই। একে একে আসতে থাকে হাজারও তরুণ-তরুণী। খণ্ডখণ্ড ভাগে বিভক্ত হয়ে পত্রিকা সাঁটিয়ে বসেন নিজেদের পছন্দমত জায়গায়। দিনভর না খাওয়ার কষ্ট, তৃষ্ণায় খানিকটা ছটফটানিই তাদের মুখে ফুটে তুলছে ক্লান্তির ছাপ।এছাড়াও রয়েছে মা-বাবা, ভাই-বোন কিংবা অন্য কোন আপনজন থেকে দূরে থাকারও কষ্ট। এতকিছুর মাঝে রয়েছে তাদের আনন্দঘন মুহূর্তের শেষ অপেক্ষার প্রহর। কারণ আর কিছুক্ষণ পরেই তো বন্ধুদের সাথে ইফতার আনন্দে মেতে ওঠার সুযোগ। তাইতো শেষ সময়ে এসেও নিজেদের মধ্যে খুনসুটিতে মেতে উঠে যেন আনন্দের মাত্রাটা একটু বাড়ানোর চেষ্টা থাকে সবার।আবার এমন আনন্দঘন সময়ে নিজের প্রিয় মানুষটি বাদ যাবে তা কি হয়। তাইতো কেউ কেউ বসছেন জুটি বেঁধে। হ্যাঁ বলছিলাম, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইফতার আনন্দের কথা। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) রমজানের ইফতার আনন্দ তাদের কাছে অন্য সবার থেকে একটু বেশিই আলাদা।ইফতারের মেন্যুতে যা-ই থাকুক না কেন, আনন্দটা তাদের ষোলো আনাই চাই। আর এ কারণেই প্রতিদিন ইফতারের আগ  মুহূর্তে টিএসসি পরিণত হয় এক মনোরম উৎসবস্থলে। তারুণ্যের মিলনমেলায় রূপ নেয় এই আঙ্গিণা।টিএসসির অডিটোরিয়াম, মাঠের সবুজ ঘাস কিংবা টিএসসি সাইবার সেন্টার থেকে শুরু হয়ে এক দিকে অতিথি কক্ষ অন্যদিকে অডিটোরিয়াম পেরিয়ে একে বারেই মূল ফটক পর্যন্ত বারান্দায় রয়েছে গ্রুপে গ্রুপে বসে ইফতার আয়োজন। বর্ষা হওয়ায় এবার মাঠের সবুজ ঘাসে বসে ইফতার করার সুযোগটা থাকছেনা। তবুও অপেক্ষার প্রহর যতই কমতে থাকে ততই বাড়ে এই আঙ্গিণায় ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড়। প্রত্যেকের হাতে খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল এবং বসার জন্য খবরের কাগজ। উপলক্ষ ইফতার।শুরু হয় খবরের কাগজ সাঁটিয়ে বসা এবং প্যাকেট খুলে মাঝখানে ইফতার সাজানোর ব্যস্ততা। ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, পিঁয়াজু, ডিম চপ, খেজুর, জিলাপি, বুন্দিয়াসহ নানা ধরেনের আইটেম রয়েছে এতে। সারা দিনের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য আছে লেবুর শরবত কিংবা আমের জুস অথবা লাচ্ছি। নানা ধরণের ফলও রয়েছে। ইফতারি সাজিয়ে আজানের জন্য অপেক্ষা। সময় যেন কাটে না। বন্ধুদের সঙ্গে কথার ফাঁকে চোখ চলে যায় ঘড়ির কাঁটায়। সময় হলেই শুরু হয় ইফতার আনন্দ।কথা হয় টিএসসির মাঠে ইফতার করতে আসা মার্কেটিং বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র মোহাম্মাদ ফারুক নিলয়। তিনি জাগো নিউজকে জানান, ‘খুবই ভালো লাগতেছে নিরিবিলি পরিবেশে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করতে পেরে। সারাদিন রোজা রেখে বন্ধুদের সাথে ইফতার করার মজাটাই আলাদা। আর টিএসসির এমন একটি পরিবেশকে মিস করতে চায় কে।’প্রতিদিন বাবা মায়ের সঙ্গে ইফতার করলেও বন্ধুদের সঙ্গে ইফতারের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে মৌচাক থেকে এসেছেন একই বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী উম্মে সালমা জাহান। তিনি বলেন, সব সময়তো আব্বু-আম্মুর সাথে ইফতার করি। তবে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করতে না পারায় যেন রমজানের আনন্দের পূর্ণতা পাচ্ছেনা। তাই আজ বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করার আনন্দের মজাটা আর মিস করতে চাইনি।’বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করলেও যেন নিজের প্রিয়তমার সাথে ইফতারটা একটু বেশিই করা চাই। তাইতো ভিন্নভাবে বসা টিএসসির ক্যাফেটেরিয়ার সামনে মাঠে দুই তরুণ-তরুণী। কথা হয় তাদের সঙ্গে। ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী আরিফা রহমান একটু হেসেই বললেন, ‘আমরা দুই জন চেষ্টা করি এক সাথেই ইফতার করতে। কারণ অন্য বন্ধু-বন্ধবদের সাথে ইফতার করা আর তার (বয় ফ্রেন্ড) ইফতারের মজাটা একটু আলাদা। তাই চেষ্টা করি বাড়িতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার (বয় ফ্রেন্ড) সাথেই ইফতার করতে।’এমএইচ/এসএইচএস/আরআই

Advertisement