টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টির পর রোববার সকাল থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। শনিবার রাত ও রোববার সকাল থেকে বর্ষণ বন্ধ থাকায় বন্যার পানি ক্রমশ কমছে। বন্যার পানি কমার সাথে সাথে ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতচিহ্ন। এতে বাড়ছে জনদুর্ভোগ।কক্সবাজারে সপ্তাহ ধরে চলা টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সদর, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া উপজেলার প্রায় ৪০টি ইউনিয়নের দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৭ লাখ মানুষ। প্রশাসন ও নিজস্ব উদ্যোগে বন্যা কবলিতরা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।শনিবার রাত থেকে বৃষ্টি কম হওয়ায় রোববার সকাল থেকে নামতে থাকে বন্যার পানি। এতে পরিস্থিতি উন্নতি হতে থাকে। রোববার দুপুর পর্যন্ত বন্যা কবলিত ৪ উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নে পানি নেমে গেছে বলে জানা গেছে। বাকি ১২টি ইউনিয়নে এখনো ৪/৫ ফুট পর্যন্ত পানি রয়ে গেছে।চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাফর আলম জানিয়েছেন, চকরিয়ায় রোববার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে দুর্গত এলাকার মানুষের বাড়ি ফিরতে সময় লাগবে। বন্যা কবলিত মানুষগুলো এখনো আশ্রয় কেন্দ্র ও উঁচু স্থানে অবস্থান করছে। বন্যার পানিতে ভেসে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এ পর্যন্ত ৯ জন মারা গেছেন। মৃতদেহগুলো শনিবার রাতেই উদ্ধার করা হয়েছে।চকরিয়ার ফাসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী জানান, ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের হিন্দুপাড়া গ্রামে বাড়ির ভেতর বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে সুর্বণা দাশ (৩০) নামের এক গৃহবধূ মারা গেছেন। শনিবার বিকেলে বিদ্যুৎস্পষ্ট হলে পরিবারের সদস্যরা তাকে স্থানীয় জমজম হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে বিকেল ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়। সুর্বণা দাশ ওই গ্রামের মনোতোষ দাশের স্ত্রী।চকরিয়া ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রহিম জানান, ইউনিয়নের মালুমঘাট ডুমখালীস্থ মিঠাছড়ি এলাকায় শনিবার দুপুরে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে কামাল উদ্দিন (৩৫) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন।পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু বলেন, পেকুয়া সদর, মগনামা, শিলখালী ইউনিয়নে বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার সহস্রাধিক বাড়িঘর এখনো পানির নিচে রয়েছে। এখনো অন্তত ৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। দুর্গত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রিয়াজুল আলম জানিয়েছেন, বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বাড়ছে দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ।রামু রাজারকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম জানান, বন্যার ফলে রামুর রাজারকুলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রধান সড়ক ভাঙনের পাশাপাশি ধসে গেছে একাধিক ব্রিজ।এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছে এ সব অঞ্চলের মানুষ।রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন জানান, ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের চেষ্টা চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত ও মারা যাওয়া পরিবারে সহায়তা দেয়া হচ্ছে।কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু তালেব জানিয়েছেন, সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী, খরুলিয়া, ঈদগাঁও, ইসলামপুর, পোকখালী, বাংলাবাজার ও ভারুয়াখালী এলাকায় বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ।সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএএম রহিমুল্লাহ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার যাতায়াত স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চলছে। দুর্গতদের খাদ্য সহায়তা দিতে উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে ।কক্সবাজার বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি শামশুল হুদা টাইটেল জানিয়েছেন, কক্সবাজার-টেকনাফ যান চলাচল এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তবে ঝুঁকি নিয়ে কিছু বড় যানবাহন চলাচল শুরু করেছে। রামুর চেইন্দা এলাকায় মহাসড়কে এখনো পানি চলাচল করছে।কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা জানিয়েছেন, সরকারি ১৪১ আশ্রয় কেন্দ্রে ৬৫ হাজার দুইশত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। অনেক এলাকায় মানুষ নিজ উদ্যোগে আত্মীয়স্বজনের বাসা ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়। দুর্গত মানুষদের ১৪৫ মেট্রিক টন চাল, ৯৫ বস্তা চিড়া, ৯০ বস্তা গুড় ও নগদ ১১ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি মৃত ব্যক্তির পরিবারে ২০ হাজার টাকা নগদ সাহায্য দেয়া হচ্ছে।উল্লেখ্য, গত ৫ দিনে জেলায় বন্যার পানিতে ভেসে, পাহাড় ও দেয়াল ধসে, গাছ চাপায় এ পর্যন্ত ২৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।সায়ীদ আলমগীর/এসএস/আরআই
Advertisement