এটা আইপিএল নয় যে, শুরু থেকে প্রায় সব শীর্ষ, নামী-দামি তারকার দেখা মিলবে। ভারতের সাড়া জাগানো ওই ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি আসরে অর্থের ছড়াছড়ি। শত শত কোটি রুপির ব্যাপার-স্যাপার।
Advertisement
আইপিএল খেলতে বিশ্বের সব বড় বড় তারকা মুখিয়ে থাকেন। জাতীয় দল ও বিভিন্ন দলে খেলে তারা সারা বছরে যত আয় করেন, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ মেলে আইপিএলে। খুব স্বাভাবিকভাবেই সবাই আইপিএল খেলতে চান। দলগুলোর সাথেও বিশ্বের সব বড় বড় তারকার চুক্তি হয় পুরো আসরের জন্য।
কিন্তু বিপিএলে অত টাকা নেই। যে কারণে ক্রিস গেইল-ব্রেন্ডন ম্যাককালামের মত বিশ্ব মানের তারকাদের পুরো আসরের জন্য পাওয়া কঠিন। তারা এবারো আসবেন একটু দেরি করে।
শুধু ওই দু’জন বড় তারকাই নন। এবারের বিপিএলে একঝাঁক পাকিস্তানি ক্রিকেটারেরও খেলার কথা। তারা ঘরের ক্রিকেটে ব্যস্ত। ১৭ নভেম্বরের আগে বর্তমান পাকিস্তান জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটারেরও দেখা মিলবে না।
Advertisement
মোট কথা, যদিও এবার থেকে এক ম্যাচে সর্বাধিক পাঁচ বিদেশি ক্রিকেটার খেলানোর নতুন নিয়ম চালু হতে যাচ্ছে, তারপরও কোন দলই শুরু থেকে তাদের সম্ভাব্য সেরা বিদেশিকে পাবে না।
অর্থাৎ আগামীকাল থেকে বিপিএলের ব্যাট ও বলের লড়াই শুরু হলেও পছন্দের সব বিদেশি ক্রিকেটার নিয়ে কোন দলই পূর্ণ শক্তিতে মাঠে নামতে পারবে না। কাজেই সব দল আসর শুরুর আগে প্রহর গুনছে, কখন তাদের সম্ভাব্য সেরা বিদেশি ক্রিকেটাররা এসে যোগ দেবেন। এখন সেই আসার অপেক্ষার পালা।
তাই এখনই বলা কঠিন, বিপিএলের এবারের আসরে কে হাসবে শেষ হাসি? ওই প্রশ্নের জবাব সময়ের ওপর ছেড়ে দেয়াই হবে যুক্তিযুক্ত। তারপরও স্থানীয় বোদ্ধা ও বিশেষজ্ঞের কেউই কোন দলকে এককভাবে ফেবারিট মানতে নারাজ। তাদের কথা, যেহেতু বিদেশি ক্রিকেটাররাই আসল পার্থক্য গড়ে দেন, তাই সব দলের পছন্দের সেরা বিদেশিরা আসার আগে কোন দল সম্পর্কেই আগাম মন্তব্য করা যুক্তিযুক্ত নয়।
তারপরও শুরুর আগে তিন দলকে কম-বেশি সবাই এগিয়ে রাখছেন। বিশেষজ্ঞদের চোখে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, রংপুর রাইডার্স ও ঢাকা ডায়নামাইটস অন্য চার দলের চেয়ে এগিয়ে। রাজশাহী কিংস ও খুলনা টাইটান্সকে ডার্ক হর্স ভাবা হচ্ছে।
Advertisement
সিলেট সিক্সার্স ও চিটাগাং ভাইকিংসকে খালি চোখে তুলনামুলক কমজোরি ভাবা হলেও খেলাটি মাত্র ২০ ওভারের। অনিশ্চয়তায় ভরা ক্রিকেটে এমনিতেই শেষ বা সম্ভব-অসম্ভব বলে কোন কথা নেই। সেখানে এ ছোট্ট পরিসরের আসর আরও অনিশ্চয়তায় ভরা।
কাজেই নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই যে, ওই দলই ফেবারিট আর অমুক দল আন্ডারডগ। সবচেয়ে বড় কথা, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট হচ্ছে ছন্দের খেলা। কাগজে কলমে দূর্বল ও কমজোরি কোন দলও যদি একবার ছন্দ ফিরে পায় তাহলে দুর্দমনীয় হয়ে ওঠে।
তখন সে দলকে আটকে রাখা কঠিন। কাজেই শুরুর আগেই জের টানা সত্যিই কঠিন। তারপরও মাশরাফি বিন মর্তুজার রংপুর রাইডার্স, তামিম ইকবালের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবং সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটসের সম্ভাবনা বেশি ভাবা হচ্ছে।
একদিনের সীমিত ওভারের ফরম্যাটে যাদের ব্যাট সবচেয়ে ধারালো, সেই ক্রিস গেইল-ব্রেন্ডন ম্যাককালাম রংপুরের সবচেয়ে বড় সম্পদ ও সেরা ব্যাটিং অস্ত্র। যে কোন ম্যাচ একা বদলে দেয়ার পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে দু’জনারই। এরই মধ্যে গেইল হচ্ছেন একমাত্র ক্রিকেটার যিনি বিপিএল খেলতে আসার অর্থ, ব্যাটে ঝড় তুলে সেঞ্চুরি করা। এ আসরে সর্বাধিক তিন সেঞ্চুরির মালিক গেইল।
তারা আসার আগের লাইনআপও বেশ ভাল রংপুরের। বিপিএলে সর্বাধীক তিনবারের চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়কত্ব করা মাশরাফি বিন মর্তুজা রংপুরের অন্যতম চালিকশক্তি। এছাড়া শাাহরিয়ার নাফীস আর মোহাম্মদ মিঠুনের মত অভিজ্ঞ উইলোবাজ আছেন। সাথে শ্রীলঙ্কান কুশল পেরেরা, জনসন চার্লস, ইংলিশ স্পেশালিস্ট রবি বোপারা, ডেভিড উইলি।
মাঝখানে থিসারা পেরেরা আর জিয়াউর রহমানের মত হার্ডহিটার কাম পেসার। মাশরাফি মর্তুজার সাথে-রুবেল হোসেনও আছেন পেস ডিপার্টমেন্টে। স্পিন আক্রমণও বেশ ধারালো। সোহাগ গাজী, আব্দুর রাজ্জাক ও স্যামুয়েল বদ্রি আছেন ওই ডিপার্টমেন্টে। ক্রিস গেইল আর ব্রেন্ডন ম্যাককালাম যুক্ত হলে এ দলকে হারানো হবে খুব কঠিন।
শুধু ক্রিকেটারদের কথা বলা কেন, রংপুরের কোচও এ আসরের অন্যতম সেরা আকর্ষণ। এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে কুশলী ও ক্রিকেট বোধ-বুদ্ধিসম্পœ টম মুডি এবার রংপুরের কোচ।
কাফ ইনজুরির কারণে শেষ মুহুর্তে দল থেকে ছিটকে পড়েছেন অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন। তারপরও ঢাকার কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন নির্ভার। কারণ, তার আছে শহিদ আফ্রিদি, সুনিল নারিন, এভিন লুইস ও কুমারা সাঙ্গাকারার মত অভিজ্ঞ এবং দারুণ কার্যকর পারফরমার।
পেস আক্রমণে মোহাম্মদ আমির, কেভিন কুপার ও মোহাম্মদ শহীদ। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান দলটির মূল চালিকাশক্তি। রভম্যান পাওয়েল, কাইরণ পোলার্ড ও নাদিফ চৌধুরী এবং মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও ঢাকার লাইন আপকে করেছেন সমৃদ্ধ।
আগেরবার ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সাথে অধিনায়ক মাশরাফির বনিবনা ভাল হয়নি। তাই শিরোপা ধরে রাখাও সম্ভব হয়নি। এবার কুমিল্লা মাঠে নামছে এ মুহুর্তে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের কোচিংয়ে। সবার আগে সিলেটে এসে ট্রেনিংও করছে কুমিল্লা।
বাংলাদেশের তিন টপ অর্ডার তামিম, ইমরুল ও লিটন দাস দলটির ফ্রন্টলাইন ব্যাটিংয়ে। সঙ্গে আরও যোগ হবেন পাকিস্তানের ফাখর জামান, জস বাটলার, কলিম মুনরো। মিডল ও লেট অর্ডার আসর সেরা। যেখানে মারলন স্যামুয়েলস, ড্যারেন ব্র্যাভো, শোয়েব মালিকের সাথে দুই স্বীকৃত অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্র্যাভো ও মোহাম্ম নবি। এছাড়া পরে যোগ দেবেন পাকিস্তানের নতুন পেস সেনসেশন হাসান আলি।
আফগানিস্তান তথা সময়ের সেরা লেগস্পিনর রশিদ খান কুমিল্লা ভিক্টেরিয়ান্সের বড় ট্রাম্পকার্ড। এ ছাড়া এই সেদিন হ্যাটট্রিক করা ফাহিম আশরাফও দ্বিতীয় পর্বে যোগ দেবেন। মাঝে অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া বাঁ-হাতি স্পিনার আরাফাত সানিও কুমিল্লার স্পিন আক্রমণে থাকবেন।
এছাড়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের খুলনা টাইটান্স ও মুশফিকুর রহীম ও ড্যারেন স্যামির রাজশাহী কিংসও যে কোন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মত পরিণত ও অভিজ্ঞ পারফরমারের সাথে পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ এবং পেসার জুনায়েদ খান যুক্ত হবেন খুলনায়। নাজমুল হোসেন শান্ত, সাইফ হাসান ও আফিফ হোসেন ধ্রুব‘র মত তিন অতি সম্ভাবনাময় তরুণও খুলনার অন্যতম চালিকাশক্তি হতে পারেন।
গতবারর অল্পের জন্য শিরোপা জিততে না পারা রাজশাহীর এবার শক্তি বেড়েছে আরও। ব্যাটিংয়ে নির্ভরতার প্রতীক মুশফিকুর রহীম এবার দল পাল্টে রাজশাহীতে। ড্যারেন স্যামির নেতৃত্বে মুশফিক ইংলিশ লুক রাইট, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান লেন্ডল সিমন্স, মুমিনুল, ম্যালকম ওয়েলার, মোহাম্মদ সামি, সামিত প্যাটেল, জেমস ফ্র্যাঙ্কলিন, রাজা আলির মত প্রতিষ্ঠিত পারফরমারের সাথে তরুণ মেহেদী হাসান ও নিহাদুজ্জামানও রাজশাহীতে।
প্রথম পর্বের স্বাগতিক সিলেট সিক্সার্স শুরুতে মূল শক্তিতে মাঠে নামতে পারছে না। দলটির অন্যতম নির্ভরতা হলেন পাকিস্তানের ইনফর্ম টপ অর্ডার বাবর আজম; কিন্তু ঘরের ক্রিকেটে ব্যস্ত থাকায় বাবর আজম আসবেন দেরিতে।
তারপরও নাসির হোসেনের নেতৃত্বে সাব্বির রহমান, লিয়াম প্লাঙ্কেট, ইমতিয়াজ হোসেন তান্না, আন্দ্রে ফ্লেচার, উপুল থারাঙ্গা, দানুসকা গুনাথিলাকার মত পারফরমার আছেন। প্লাঙ্কেট, ক্রিসমার সান্তোকি, উসমান খান ও গোলাম মোদাস্সরের গড়া পেস অ্যাটাককে হেলাফেলার কিছু নেই।
স্পিন ডিপার্টমেন্টে আছেন বাঁ-হাতি তাইজুল আর লঙ্কান লেগস্পিনার ওয়ানিদু হাসারাঙ্গা। এদের সাথে আবুল হাসান রাজু, কামরুল ইসলাম রাব্বি আর মোহাম্মদ শরীফের মত পেসারও রয়েছেন সিলেটে।
তুলনামুলক কমজোরি দল চট্টগ্রাম। জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার নুরুল আবেদিন নোবেলের প্রশিক্ষনে চট্টগ্রাম মাঠে নামবে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ-উল হকের নেতৃত্বে। লঙ্কান লুকারাচ্চি, লিয়াম ডসন, সিকান্দার রাজা, দিলশান মুনাবিরা আর নজিবুল্লাহ জাদরান ফরেন কোটায় আছেন।
চিটাগাং ভাইকিংসের দেশি লাইনআপ বেশ ভাল। এনামুল হক বিজয়, সৌম্য সরকার, তাসকিন আহমেদ, শুভাশিষ রায়, সানজামুল, তানবির হায়দার ও নাঈম হাসানের মত ভাল পারফরমার আছেন দলে।
এআরবি/আইএইচএস/আইআই