নড়াইলের হাড়িভাঙ্গা খালের স্লুইচগেটটি বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল। গেটটি বন্ধ করায় বিলের পানি খাল দিয়ে বের হতে পারছে না। ফলে ১০ গ্রামের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানকাটা ব্যাহত হচ্ছে এবং রবিশষ্য ও বোরো আবাদ পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
Advertisement
সদরের কলোড়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য ও তরুলতা পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি শিশির বিশ্বাস জানান, কৃষকের কথা ভেবে এবছর এপ্রিল মাসে বোরো ধান ওঠার আগে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ব্যায় করে গেটের দুইপাশে সংস্কার কাজ করানো হয়। এর দু’মাস পর নড়াইল পানি উন্ননয় বোর্ড নড়াইল এলজিইডির অনাপত্তি পত্রের প্রেক্ষিতে টেন্ডারের মাধ্যমে প্রায় ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে খালটির ভেঙ্গে যাওয়া অংশ পুনঃসংস্কার করে।
সংস্কারের পর নদী-খালের পানি বিলে প্রবেশ করতে না পারায় বর্তমানে মাঠে আউস এবং আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু গ্রাম্য দলাদলি এবং স্বার্থান্বেষী মহল বৃহস্পতিবার দুপুরে গেট বন্ধ করে উত্তর খলিসাখালী গ্রামের হরিচাঁদ বিশ্বাসের কাছ থেকে চাবি নিয়ে গেছে। খাল দিয়ে পানি নামতে না পারলে কৃষকের চরম ক্ষতি হবে।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বীড়গ্রামে মিটিং করা হলেও কোনো সমাধান হয়নি। গেট ছাড়া না হলে আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না বলে জানান এ জনপ্রতিনিধি।
Advertisement
জানা গেছে, সদর উপজেলার গোবরা থেকে বাহিরগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার হাড়ভাঙ্গা খালের মধ্যবর্তী গোয়াইলবাড়ী গ্রামে প্রয়োজনের সময় পানি প্রবেশ এবং পানি অপসারণের জন্য এলজিইডি বিভাগ ৯ বছর আগে ৩ রেগুলেটরের একটি স্লুইচগেট নির্মাণ করে। কিন্তু এটি নির্মাণের ৩ বছর পর থেকে পানির চাপে গেটটির দুই পাশের মাটি সরে যায়। এতে সময়-অসময়ে বিলে পানি প্রবেশ করায় ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কৃষক আউস এবং আমন ধান ঘরে নিতে পারেনি। এলজিইডি বিভাগ মাঝে মধ্যে কিছু অর্থ বরাদ্দ দিয়ে মাটি সংস্কারের কাজ করলেও কোনো লাভ হয়নি।
বেতবাড়িয়া কলমিলতা পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সায়েদ আলী শান্ত বলেন, দ্রুত এই গেট ছাড়া না হলে নড়াইল পৌরসভার উজিরপুর, বিজয়পুর, বেতবাড়িয়া, মুলিয়া ইউনিয়নের সাতঘোরিয়া, বড়েন্দার, ননীক্ষীর এবং কলোড়া ইউনিয়নের গোয়াইলবাড়ি, বীড়গ্রাম ও মুশুড়ি গ্রামের কৃষকদের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ঘরে তুলতে দেরি হবে এবং রবি ও বোরো আবাদ পিছিয়ে যাবে।
বীড়গ্রামের কৃষক রেবেন্ত বিশ্বাস বলেন, রবিশষ্য বোনার সময় পার হয়ে যাচ্ছে। এমতেই মাঠে পানি বেশি। এখনই পানি অপসারণ না করলে কৃষকের ভীষণ ক্ষতি হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা সেলিম জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। তবে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
Advertisement
নড়াইল কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক আমিনুল হক বলেন, বিষয়টি আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনছি। বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানাবেন বলে জানান।
হাফিজূল নিলু/এফএ/পিআর