ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ব্যয় কমাতে ভ্যাটমুক্ত করার ঘোষণা আসতে পারে। এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। সম্প্রতি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী এমন ইঙ্গিত দেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
Advertisement
সূত্র জানায়, গত ৩০ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব ও একজন যুগ্ম সচিবের সঙ্গে তিনটি এজেন্ডা নিয়ে বৈঠক হয় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ওনার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের। বৈঠকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভ্যাট আরোপের ফলে বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন স্কুল প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ভর্তি, টিউশন ফিসহ অন্যান্য ব্যয়ে সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট আরোপ করায় শিক্ষা ব্যবস্থায় কীরূপ বৈষম্য হচ্ছে তাও তুলে ধরেন তারা।
এছাড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পরিচালনা সংশোধনী নীতিমালায় শিক্ষক নিয়োগ এবং অভিভাবক-শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের যে রূপরেখা দেয়া হয়েছে তার নেতিবাচক কিছু দিক তুলে ধরা হয়।
বৈঠকে প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসিস্টেন্ড ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুলের প্রিন্সিপাল মো. মোর্শেদুল ইসলাম।
Advertisement
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভ্যাট আরোপ করায় বাংলা ও ইংলিশ শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। ভর্তি ও টিউশন ফি-তে ভ্যাটযুক্ত হওয়ায় পড়ালেখায় ব্যয় বেড়ে গেছে, যা শিক্ষা ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
‘ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের মালিক সমিতির দুটি সংগঠনের নেত্রীবৃন্দ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বর্তমান পরিস্থিতি আমরা অর্থমন্ত্রীকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। ভ্যাট বাতিলে দ্রুত ইতিবাচক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন’-বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সভায় ভ্যাট মওকুফ ছাড়া আরও দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তা হলো- সংশোধনী নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগে জটিলতা এবং স্কুল পরিচালনায় অভিভাবক ও শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন প্রক্রিয়া।
‘সংশোধনী নীতিমালায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়াসহ বাংলা মাধ্যমের সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এতে নিয়োগে সময়ক্ষেপণসহ নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া স্কুল অভিভাবক ও শিক্ষক প্রতিনিধি গঠনের কথা বলা হলেও কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা উল্লেখ করা হয়নি।’
Advertisement
মোর্শেদুল ইসলাম বলেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পরিচালনায় সরকারি কোনো সহায়তা দেয়া হয় না। সেক্ষেত্রে বাংলা মিডিয়ামের আদলে আমাদের পরিচালনা করা কতটা যৌক্তিক তা তুলে ধরা হয় বৈঠকে। বিষয়গুলো সহজীকরণে অর্থমন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিয়েছেন। দ্রুত এসব বিষয়ে সহজীকরণ করা হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সভায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব জাগো নিউজকে বলেন, সভায় তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে অরোপিত সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট মওকুফের বিষয়টি মূল বিষয় হিসেবে উত্থাপিত হয়। অর্থমন্ত্রী ভ্যাট মওকুফের ইঙ্গিত দিয়েছেন। দ্রুত এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হবে বলেও মন্ত্রী ইংলিশ মিডিয়াম ওনার সমিতির প্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, শিক্ষক নিয়োগ সহজীকরণ ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটি গঠনে গাইডলাইন চাওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষক নিয়োগে একটি প্যানেল তৈরি ও কমিটি গঠনে নতুনভাবে দিকনির্দেশনা দেয়া হবে বলে তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে সাত শতাংশ ভ্যাট থেকে বাড়িয়ে সাড়ে সাত শতাংশ আরোপ করা হয়। এ নিয়ে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সানিডেল ও সানবিম স্কুলের দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকের করা রিটের শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের টিউশন ফির ওপর আরোপিত সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। এরপর দুই মাস ভ্যাট দিতে হয়নি অভিভাবকদের।
তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৪ অক্টোবর আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত করেন। ফলে নভেম্বর মাসে থেকে স্কুলগুলোকে আবার ভ্যাট দেয়া শুরু করতে হয়।
এমএইচএম/জেডএ/এমএআর/বিএ