এক বছরের বেশি সময় আগে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের (আরএমপি) বাসভবন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবনটি বুঝে নেয়ার জন্য সেসময় পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিলেও অজ্ঞাত কারণে তা নেয়া হয়নি। নির্মাণ তত্ত্বাবধানকারী গণপূর্ত বিভাগের সহযোগিতায় আবেদন, সাক্ষাৎ ও আলোচনার পরও পুলিশ কমিশনার বাসভবন বুঝে নেননি। তবে সেই ভবনে তিনি গত ৮ মাস ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। সরকারি বাসভবনে পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও দিচ্ছেন না বাড়িভাড়া। বৈদ্যুতিক বিলসহ অন্যান্য সব খরচ দেয়া হচ্ছে আরএমপির তহবিল থেকে। সর্বশেষ গত মার্চে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার পুলিশ সদর দফতরের হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন পাঠিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কোনো ফল হয়নি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একজন প্রতিনিধি বলেন, বাসাটির নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ শেষ হয়েছে ২০১৪ সালের মার্চে। আমরা পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভবনটি বুঝে নেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কমিশনার সাড়া দেননি। কিন্তু তিনি ভবনে পরিবারের সদস্যদের নিয়েই বসবাস করছেন। তিনি আরো বলেন, আগের পুলিশ কমিশনারও এ বাসায় ৯ মাস পরিবার নিয়ে বাস করেছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আরএমপির প্রশাসনিক অফিসার আবদুল লতিফ জাগো নিউজকে বলেন, বাসভবনের কিছু বৈদ্যুতিক কাজ এখনো শেষ হয়নি বলে ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেয়া হয়নি। ছোটখাটো আরো কিছু কাজ বাকি আছে। তবে বর্তমান কমিশনার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করছেন। সাবেক কমিশনারও পরিবার নিয়ে ৯ মাস ছিলেন এই বাসভবনে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি বলেছেন, বাসভবনের কোনো কাজই এখন অসম্পন্ন নেই। কাজ বাকি থাকলে পুলিশ কমিশনার পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন কীভাবে?সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বোয়ালিয়া ক্লাব এলাকায় পদ্মার ধারে তিনতলা বিশিষ্ট পুলিশ কমিশনারের বাসবভন গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে। ভবনটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আনুষঙ্গিক সব কাজ শেষে ওই বছরের ২০ মার্চ বাসভবনে পরিবার নিয়ে উঠেন আরএমপির সাবেক পুলিশ কমিশনার ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান। ২০১৪ সালের ২১ নভেম্বর তিনি বদলি হয়ে গেলে ২৩ নভেম্বর ডুপ্লেক্স এ ভবনে পরিবার নিয়ে উঠেন বর্তমান পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন। সেই থেকে অদ্যাবধি তিনি বাসভবনটিতে পরিবার নিয়েই বসবাস করছেন। পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া অভিযোগে জানা গেছে, ভবনটি বুঝে না নিলেও আবাসিক ভবনের সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কমিশনার বাসভবনে বসবাস করছেন। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি বাসবভনে বসবাস করলে মূল বেতনের শতকরা ৪৫ ভাগ বাড়িভাড়া কর্তনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু কমিশনারের বেতন থেকে বাড়িভাড়া কর্তন করা হয় না। অন্যদিকে, বাসভবনের বিদ্যুৎ বিল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ব্যক্তিগত খাত থেকে পরিশোধের নিয়ম থাকলেও কমিশনারের বাসভবনের বিদ্যুৎ বিল দেয়া হচ্ছে আরএমপির তহবিল থেকে। এ বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ মাস ভেদে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।অভিযোগে আরো জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২০ মার্চ থেকে বাসভবনটির বিদ্যুৎ বিল বাবদ ২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা আরএমপির তহবিল থেকে পরিশোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে সাবেক ও বর্তমান কমিশনারসহ দুই কমিশনারের বেতন থেকে ভাড়া কর্তন না করায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৫১ হাজার টাকা। বাসভবনের বসবাসের পরও বাড়িভাড়া না দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আরএমপির বিল অনুমোদনকারী কর্মকর্তা উপকমিশনার (সদর) তানভীর হায়দার চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, তিনি জানেন না কমিশনারের বেতন থেকে বাড়িভাড়া কর্তন করা হয় কী না। আর বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ কোথা থেকে হচ্ছে সেটাও তিনি জানেন না। তবে তিনি নিশ্চিত করেন, বাসভবনটি আরএমপির কাছে হস্তান্তর হয়নি। এজন্য ভবনটির কোনো দায়ও আরএমপির কাঁধে এখন পর্যন্ত নেই।এদিকে কমিশনার সরকারি বাসভবনে ভাড়ামুক্তভাবে বসবাস করার ঘটনার পাশাপাশি বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশের সহকারি কমিশনার (এসি) এসএম মাহমুদ হাসান রাজশাহী বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের (আরএমও) জন্য বরাদ্দ করা বাসবভনে থাকছেন পরিবার নিয়ে। কয়েক মাস আগে এসি মাহমুদকে বাসাটি বরাদ্দ করেন আরএমপির সংশ্লিষ্ট বিভাগ। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে হাসপাতাল অঙ্গণে সার্বক্ষণিক অবস্থানের প্রয়োজনেই দুই ইউনিটের বাসাটির একটি পুলিশ হাসপাতালের আরএমও ডা. নজরুল ইসলামের নামে বরাদ্দ করা হয়। তিনি পরিবার নিয়ে কিছুদিন এই বাসায় বসবাস করলেও পরে চলে যান হাসপাতাল ক্যাম্পাসের বাইরে নগরীর লক্ষীপুরে। বর্তমানে এসি মাহমুদ এই হাসপাতাল ক্যাম্পাসের আরএমওর বাসাতেই বসবাস করছেন। তবে সরকারি বাসভবনে বসবাস করলেও এসির বেতন থেকে বাড়িভাড়া কাটা হয় কী না তা নিশ্চিত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী পুলিশ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুমায়ুন কবীর স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, আরএমওকে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে থাকতে হয় সার্বক্ষণিক দায়িত্বে। এজন্যই তাকে সরকারি বাসা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু আরএমও ক্যাম্পাসের বাইরে চলে যাওয়ায় বাসাটি একজন পুলিশ কর্মকর্তার নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শাহরিয়ার অনতু/এমজেড/এমএস
Advertisement