জাতীয়

ঈদকে ঘিরে আবারো সক্রিয় হচ্ছে অজ্ঞান পার্টি

রোজা ও ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে প্রতিবছরই বাড়ে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য। ঈদে ঘরমুখো মানুষকে নিঃস্ব করার জন্য ওঁৎ পেতে থাকে তারা। নগদ অর্থ, মোবাইলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয় চক্রটি। গত ৮-১০ বছরে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য অনেকাংশে বেড়েছে।ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের হিসেব অনুযায়ী, গত এক বছরে ঈদ-উল-আযহায় এই চক্রের খপ্পরে পড়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৮৪ জন। আর মারা গেছেন ২ জন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী এই সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪শ’।তবে এর প্রধান কারণ হিসেবে সাধারণ মানুষকেই দায়ী করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের দাবি, সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাব আর অজ্ঞানপার্টির সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা না করায় পার পেয়ে যাচ্ছে তারা।মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানায়, গত বছর অজ্ঞান পার্টির কবলে পরে যাত্রাবাড়ীর এক কলেজছাত্র এবং একজন ট্রেন চালক মারা গেছে। তবে এত করুণ পরিণতির পরেও কোন পরিবারই মামলা করেনি। আর এতেই পার পায় আসামিরা।ডিবি পুলিশের পূর্ব জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, অজ্ঞান পার্টির কবলে পরা ব্যক্তিরা সুস্থ হয়ে থানায় মামলা না করেই বাড়ি চলে যান। তাদের স্বজনেরাও মামলা করেন না। আর এতে আসামিদের ধরে গ্রেফতার দেখানো মুশকিল হয় পুলিশের। তাই এদের বিরুদ্ধে তেমন তদন্তও হয় না।প্রায়ই পুলিশ অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের গ্রেফতার করে নিজেই বাদী হয়ে মামলা করে। তবে তাদের ব্যস্ততার কারণে সেগুলোর তদন্ত ঠিকমতো হচ্ছে না। ফলে আদালতে গিয়ে খুব সহজেই জামিনে বেড়িয়ে পড়ছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা।গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির মাত্র ২ টি পেশাদার চক্র রয়েছে। চক্র দুটির গডফাদার কালা বাবুল নামের একজন। যদিও এযাবৎকালে একবারো তাকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এবছরের রোজার শুরু থেকেই তৎপর হয়েছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। জুন মাসের ১৮ তারিখে এই চক্রের ২১ জন সদস্যকে আটক করেছে ডিবি। তবে আসামিরা দ্রুত জামিনে বের হয়ে আবারো একই ধরণের অপরাধে জড়ায় বলে জানায় পুলিশ।গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এ বছরের শুরুর দিকে রাজধানীর প্রায় শতাধিক অজ্ঞান পার্টির সদস্যকে আটক করা হয়েছে। তবে এদের মধ্যে সবাই দুই থেকে তিনদিন বা সর্বোচ্চ ৭ দিনের মধ্যে জামিন নিয়ে পুনরায় একই অপরাধ সংগঠন করছে। একমাত্র সঠিক মামলা ও সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে।এই চক্রের গ্রেফতারকৃতরা রিমান্ডের জিজ্ঞাবাদে জামিন পেয়ে পুনরায় অপরাধে জড়ানোর কথা স্বীকার করেছে বলে জানান- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু আসামি ধরতে পারি, জামিনের বিষয়ে কিছু করতে পারি না। আদালত যা ভালো বুঝে তাই করে।’এদিকে ডিএমপির মিডিয়া এবং পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য কমাতে সর্বপ্রথম জনগণকে সচেতন হতে হবে। ডিএমপি’র পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ১ লাখ লিফলেট, পোস্টার ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে এ বছর অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য অনেক কম।এআর/এসএইচএস/আরআইপি

Advertisement