নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এজন্য ব্যয় হবে ১৯১ কোটি টাকা। এতে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে দেয়া হবে ১৩৩ কোটি ৮৩ হাজার টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল ৫৭ কোটি ৩৫ হাজার টাকা।
Advertisement
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন। অনুমোদন পেলে সরকার বিভাগের আওতায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে চলতি বছর থেকে ২০১৯ পর্যন্ত।
জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা থেকে ১৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নারায়ণগঞ্জ শহর অবস্থিত। নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে রেল, নৌ ও সড়ক পথে দেশের অন্যান্য স্থানে সংযোগ রয়েছে। ব্রিটিশ সময়কাল থেকে এখানে রেল স্টেশন স্থাপিত, যার জন্য দেশের বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প কলকারখানা এখানে গড়ে উঠেছে। নারায়ণগঞ্জ, কদমরসুল ও সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা নিয়ে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়।
৭২.৪৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট এই মহানগরীতে ২৭টি ওয়ার্ড রয়েছে এবং জনসংখ্যা প্রায় ১৫ মিলিয়ন। এ মহানগর শিল্প কারখানার জন্য বিখ্যাত। এক সময় পাট ব্যবসার জন্য বিখ্যাত নারায়ণগঞ্জকে প্রাচ্যের ডান্ডি বলা হতো। নারায়ণগঞ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা ও শিল্প কেন্দ্র এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড। কিন্তু এখানে নগরবাসীর বিনোদনমূলক সুবিধাদি প্রদানের জন্য কোনো ইকোপার্ক নেই। এজন্য নগরবাসীর চাহিদা পূরণের জন্য পরিবেশগত দিক বিবেচনায় উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন গুরুত্বপূর্ণ।
Advertisement
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি এলাকায় কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ মহানগরীতে প্রতিদিন গড়ে প্রতিজনে প্রায় ০.৪৯ কেজি বর্জ্য ফেলে এবং প্রতিদিন শহরে ৩৫০ টন শিল্প, খাদ্য, শাকসবজি, ফল, পলিথিন কাগজ ও কাপড়ের বর্জ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের ২৯০ টন বর্জ্য সংগ্রহের সক্ষমতা রয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ৮৩ শতাংশ বর্জ্য সিটি কর্পোরেশন সংগ্রহ করে ল্যান্ডফিলে ডিসপোজাল করছে। অবশিষ্ট বর্জ্য স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করছে এবং নদী, খাল, পুকুর জলাশয়ে ফেলছে। স্থানীয়ভাবে বর্জ্য ফেলার ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে।
সিটি কর্পোরেশন অশোধিত ডাম্পিং পদ্ধতি অবলম্বন করে সলিড ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনা করছে, যা একদিকে পরিবেশ দূষিত করছে অন্যদিকে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে নির্দিষ্ট জায়গায় বর্জ্য ফেলার মাধ্যমে শহরের পরিবেশ রক্ষার জন্য নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন প্রকল্পটি প্রণয়ন করেছে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, গুরুত্ব বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের মাধ্যমে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণ, পরিবেশবান্ধব কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ, অপসারণ এবং প্রক্রিয়াকরণ, সম্পদ পুনরুদ্ধার, সহজ এবং কার্যকর কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ এবং অপসারণ ও দূষণ কমিয়ে পরিবেশের উন্নয়ন করা হবে।
Advertisement
এ প্রকল্পের আওতায় জমি ক্রয়-২৩.২৮ একর, ভূমি উন্নয়ন-৫০২১৪.৯৬ ঘন মিটার, গার্বেজ ট্রাক ক্রয়-৫টি, সাকশন ক্লিনার ট্রাক ক্রয়-১টি, যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য সরঞ্জাম-২০০টি, প্রকৌশল সরঞ্জাম ক্রয়-৩টি, অফিস বিল্ডিং নির্মাণ-৩৭১৭.৫০ বর্গমিটার, অন্যান্য বিল্ডিং নির্মাণ-৩৭১৭.৫০ বর্গমিটার, রাস্তা নির্মাণ-২১৮০.৩০ মিটার ও আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করা হবে ২.০০৫ কিলোমিটার।
এমএ/ওআর/বিএ