বিশেষ প্রতিবেদন

এনার্জি ড্রিংকসে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন

রাজধানীসহ সারাদেশে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইনমিশ্রিত বিভিন্ন ধরনের এনার্জি ড্রিংকস অবাধে বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে ৭টি কোম্পানির উৎপাদিত এনার্জি ড্রিংকস সংগ্রহ করে রাজধানীর তিনটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠায়।

Advertisement

জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও পরীক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ল্যাবরেটরির একাধিক নির্ভরযোগ্য দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে- পরীক্ষায় ৭টি কোম্পানির সাতটি ড্রিংকসেই মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এর নিয়মানুসারে যে কোনো পানীয়তে ক্যাফেইনের মাত্রা ২০০ পর্যন্ত স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। কিন্তু দেশের তিন ল্যাবরেটরির পরীক্ষাতেই এই ৭টি এনার্জি ড্রিংকসে ক্যাফেইনের মাত্রা ৭০০ এর কাছাকাছি পাওয়া গেছে। এ কারণে খুব শিগগিরই নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আটঘাট বেঁধে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে বলে ওই সূত্র জানায়।

সোমবার সকালে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদককে জানান, ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় সাতটি ড্রিংকসে তিনগুণের বেশি ক্যাফেইনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে কোম্পানিগুলোর নাম প্রকাশ করতেও তিনি এ মুহূর্তে রাজি হননি।

Advertisement

ওই কর্মকর্তা বলেন, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেপরোয়া বাজারজাতকরণ নীতি ও সুকৌশলে নির্মিত বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এসব পানীয় পান করছেন।

তিনি আরও বলেন, গ্রাম-গঞ্জের ছোট টং দোকান ও হাট-বাজার থেকে শুরু করে শহরের বড় বড় শপিং মল ও ফুড কোর্টে অন্যান্য কোমল পানীয়ের চেয়ে অতিরিক্ত ক্যাফেইন মিশ্রিত এনার্জি ড্রিংকস বিক্রি দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি জন্মদিনের অনুষ্ঠানেও এনার্জি ড্রিংকস খাওয়ানোর নতুন ধারা চালু হয়েছে। এছাড়া গ্রামেগঞ্জে শিশুদের মধ্যেও এসব ড্রিংকসের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।

রাজধানীর আজিমপুর এলাকার একজন কনফেকশনারি ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে জানান, তার দোকানের আশেপাশেই স্বর্ণ তৈরির কারখানা রয়েছে। এ সব কারখানার শ্রমিকরা রাত জেগে কাজ করেন। ফলে তিনি গভীর রাত পর্য়ন্ত দোকান খোলা রাখেন।

তিনি বলেন, রাত ১২টার পর স্বর্ণ কারখানার শ্রমিকরা দলবেঁধে এসে একটি বিশেষ কোম্পানির এনার্জি ড্রিংকস পান করেন। ঘণ্টা দুয়েক বিরতিতে তারা ফের এসে আরেক দফা ওই ড্রিংকস পান করেন। ওই ব্যবসায়ী শ্রমিকদের কাছে ওই এনার্জি ড্রিংকস নিয়মিত পান করার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, ওই ড্রিংকস পান করলে ঘুম আসে না। একটা ভালো লাগার অনুভূতিও কাজ করে বলে তারা জানান।

Advertisement

অপর এক দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এসব এনার্জি ড্রিংকস এখন বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা ঘুমের ওষুধের সঙ্গে মিশিয়ে খায় বলেও শুনেছেন তিনি। এটা নাকি এক প্রকার নেশা!

এদিকে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সাময়িকীতে দেখা গেছে, অতিরিক্ত ক্যাফেইন লিভারে চর্বি জমা করে। হৃদপিণ্ডেরর রক্ত সরবরাহকারী ধমনীতে রক্ত চলাচল ধীর করে দেয়। এছাড়া বুক ধরফরানি, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, উচ্চরক্তচাপ, ঘুমের ব্যঘাত, শরীরে অ্যাড্রেনালিন নামক হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে টানটান উত্তেজনা বৃদ্ধি ও কর্মক্ষমতা হ্রাস করে।

দিনের পর দিন অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে প্রবেশের ফলে অসুখ সারাতে ব্যবহৃত ওষুধও কাজ করে না বলে স্বাস্থ্য সাময়িকী থেকে জানা যায়।

মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইনমিশ্রিত বিভিন্ন ধরনের এনার্জি ড্রিংকস নেশার জগতে নীরব সংযোজন বলেও অনেক সমাজবিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। তাদের মতে বিভিন্ন নেশাজাত দ্রব্য মাদকাসক্তরা গোপনে সেবন করলেও এনার্জি ড্রিংকস আসক্তি বাড়ছে প্রকাশ্যেই।

এমইউ/এসএইচএস/আইআই