জাতীয়

এক বছরে ৭১৯ কেজি চোরাচালানকৃত স্বর্ণ জব্দ : অর্থমন্ত্রী

২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট ৭১৯.২৪৬ কোটি টাকার চোরাচালানকৃত স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। শনিবার সকালে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য এম এ হান্নানের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এই তথ্য জানান। সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।  তিনি বলেন, জব্দকৃত স্বর্ণের মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর কর্তৃক ৫২টি মামলার বিপরীতে ৩২৪.২৯৬ কেজি এবং ঢাকা কাস্টমস হাউজ কর্তৃক ৪৭টি মামলার বিপরীতে ১৬৬.৫৭ কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়। এছাড়া, ৪১টি বিভাগীয় মামলার মাধ্যমে মোট ২২৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকার সোনা জব্দ করা হয়। মন্ত্রী আরো জানান, বিগত ৫ বছরে জব্দকৃত মোট ১৭৯৩.৭২ কেজি স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করা হয়। স্বর্ণ চোরাচালন বৃদ্ধির সম্ভাবনার কয়েকটি কারণ হিসেবে অর্থমন্ত্রী বলেন, পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে স্বর্ণ আমদানির শঙ্কা বেশি হওয়ায় বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে চোরাচালানের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করতে পারে। বিদেশে স্বর্ণের দাম কম থাকা, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারে মনিটরিং জোরদার হওয়ায় ব্লাকমানি স্বর্ণ চোরাচালানে ব্যবহার করতে পারে।অভ্যন্তরীণ আংশিক চাহিদা পূরণ, স্বর্ণ মূল্যবান দ্রব্য এবং সহজে বহনযোগ্য হওয়ার কারণেও এই চোরাচালান বৃদ্ধি পেতে পারে। ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ : নুরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২২ হাজার ৬৫৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের ৪১১৬ কোটি ২০ লাখ টাকা, বেসিক ব্যাংকের ৫০৭৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংকের ৩৮৮৭ কেটি ৫৯ লাখ টাকা, রুপালী ব্যাংকের ১২৪৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, সোনালী ব্যাংকের ৮৩২৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।  মন্ত্রী আরো জানান,  বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমুহের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২২ হাজার ৭৪৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বিদেশি ব্যাংকসমূহের এক হাজার ৮৩৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা, বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকের ৫৪ হাজার ৬৫৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। তিন কর্মকর্তা বেসিক ব্যাংকের অর্থ লুটে জড়িত : মো. রুস্তম আলী ফরাজীর এ সংক্রান্ত লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের সিলেট জিন্দাবাজার শাখা থেকে ভুয়া এফডিআর এর মাধ্যমে দুই কোটি ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ব্যাংকটির সাবেক তিন কর্মকর্তা জড়িত।  তিন ব্যাংক কর্মকর্তা হলেন সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক পারবান চৌধুরী, সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মোস্তফা কামাল এবং সাবেক ব্যবস্থাপক সালেহ আহমেদ চৌধুরী। জালিয়াত চক্রের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট শাখায় কর্মরত থাকা অবস্থায় পরস্পরের যোগসাজসে প্রতারণার মাধ্যমে দুই কোটি ৯ লাখ টাকা সুকৌশলে আত্মসাৎ করেন, যা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় উদঘাটিত হয়েছে। তবে এই চক্রের প্রত্যেকে পৃথকভাবে কত টাকা নিয়েছেন তা ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় আলাদাভাবে উল্লেখ নেই।মন্ত্রী বলেন, জালিয়াত চক্রের বিরেুদ্ধে ২০০৯ সালের ২ জুলাই অর্থঋণ মামলা করা হয়েছে। যার মামলা নং ১০/০৯। মামলার সর্বশেষ শুনানি হয়েছে ২০১৫ সালের ৩১ মে। পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৯ জুলাই। অপর ফৌজদারি মামলা নং ৩৫/২০১০ এর সর্বশেষ শুনানি হয় ২০১৫ সালের ২৫ মে এবং পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ জুলাই। অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংক হতে সংঘবদ্ধ জালিয়াতি চক্র ভুয়া এফডিআর এর বিপরীতে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও বাংলাদেশে ব্যাংকের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন : আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন,  ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশসহ মোট ২০টি ব্যাংক কর্তৃক ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট লেনদেনের পরিমাণ ৭৮ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মোট লেনদেনের পরিমাণ এক লাখ তিন হাজার ১১৯ কোটি টাকা। এআইআইবি নামে আঞ্চলিক ব্যাংক : মো. তাজুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) নামে একটি আঞ্চলিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।  ব্যাংকটির পরিশোধিত মুলধন ধরা হয়েছে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এআইআআইবি হচ্ছে বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান যার মূল উদ্দেশ্য হবে এশীয় দেশসমুহের অবকাঠামো উন্নয়নে অর্থ সংস্থান করা। এ পর্যন্ত ২১টি এশীয় দেশ এ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সাড়ে ৮ লাখ অডিট আপত্তি : হাজী সেলিমের এক প্রশ্নের  জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ৫৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বিপরীতে অনিষ্পত্তিকৃত অডিট আপত্তির সংখ্যা ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৩১৪টি যার সংশ্লিষ্ট অর্থের মোট পরিমাণ ৬ লাখ ১৫ হাজার ৬০৬ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা। উপজেলা পর্যায়ে কর কার্যালয় স্থাপনমুহিবুর রহমান মানিকের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জানান, আয়করের পরিধি ও আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধির স্বার্থে করনেট বৃদ্ধিকল্পে দেশের গুরুত্বপুর্ণ উপজেলায় কর কার্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের ৮৬টি রাজস্ব সম্ভাবনাময় উপজেলায় কর কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। শিগগিরই অবশিষ্ট উপজেলাগুলোতে পর্যায়ক্রমে কর কার্যারয় স্থাপন করা হবে। করদাতার সংখ্যা ৩০ লাখে উন্নীত করার উদ্যোগবেগম মাহজাবিন খালেদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী  বলেন, করনেট সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে আগামী ২০১৮-১৮ অর্থবছরের মধ্যে দেশে সক্রিয় করদাতার সংখ্যা ৩০ লাখে উন্নীত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আধুনিকায়নের মাধ্যমে একটি যুগোপযোগী ও সেবাধর্মী কর বিভাগ সৃষ্টিতে যথাযথ আইন প্রণনয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এইচএস/এসকেডি/এমএস

Advertisement