ধর্ম

সন্তানকে তাওহিদের শিক্ষা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা

তাওহিদ মানে আল্লাহর একত্ববাদ। আল্লাহ তাআলা এক ও অদ্বিতীয়; তাঁর কোনো শরিক নেই। তাওহিদের স্বীকৃতি হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত কোনো ইলাহ নেই তা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা। তাওহিদের স্বীকৃতি বাক্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পাশাপাশি সন্তানকে তাওহিদের পরিপূর্ণ শিক্ষা দেয়া অত্যন্ত জরুরি।

Advertisement

প্রত্যেক মুসলমান তার সন্তানের বিবেক-বুদ্ধি বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে দ্বীন সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকে। তাওহিদের কালেমা শিক্ষা দেয়। সন্তান যখন আধো আধো কথা বলা শুরু করে বা তারও আগে বাবা মা সন্তানকে আল্লাহ-আল্লাহ, আব্বু, আম্মু ইত্যাদি শব্দ সম্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে আদর-সোহাগ করতে থাকে। তখন থেকেই সন্তান এগুলো শিখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এটা হলো সন্তানের জন্য বাবা-মার প্রাথমিক বুনিয়াদি শিক্ষা।

সন্তানকে তার পরিবার কালেমা, নামাজ, রোজাসহ ইত্যাদি ইবাদতে পরিচিত ও আগ্রহী করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করে। কিন্তু যে কাজটি সবচেয়ে বেশি জরুরি তা হলো তাওহিদের পরিপূর্ণ শিক্ষা, শিরকমুক্ত ঈমানের শিক্ষা এবং তাওহিদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলোর ধারণা দেয়া। যা অনেকেই করে না।

যার ফলে তাওহিদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত সন্তান মনের অজান্তে তাওহিদের পরিপন্থী কাজ করে থাকে। বড় হওয়ার পর এ সব বিষয়ে ওই সন্তানের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে, হয় সে এটা অপমান হিসেবে দেখেন; নতুবা শিশু বেলার শিক্ষা তথা পারিবারিক শিক্ষার কথা বলে তা থেকে বিরত থাকেন।

Advertisement

কিন্তু প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবাদের শিক্ষার চিত্র ছিল কত সুন্দর! তাঁরা বুদ্ধির উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গেই শিশুকে তাওহিদ শেখাতেন। ঈমানের শিক্ষাকে তাঁরা ইলম ও আমলের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতেন। ইলম ও আমলের আগে মানুষের ঈমান গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।

হজরত জুনদুব বিন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল।লাম বলেছেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে থাকতাম। তখন আমরা টগবগে যুবক ছিলাম। সে সময় আমরা কুরআন শেখার আগে ঈমানের শিক্ষা লাভ করি। অতঃপর আমরা কুরআন শিখি। এতে করে আমাদের ঈমান বহুগুণে বেড়ে যায়। (ইবনে মাজাহ)

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে কুরআন শেখার আগে ঈমানের বুনিয়াদি শিক্ষা গ্রহণের তাগিদ দেন। হাদিসে এসেছে

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ঈমানের সত্তরেরও বেশি অথবা (বর্ণনাকারীর মতে) ষাটের কিছু বেশি শাখা-প্রশাখা রয়েছে। এসবের সর্বোচ্চটি হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা এবং সর্বনিম্নটি হলো ‘পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া’ আর লজ্জা ঈমানেরই একটি অংশ।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

Advertisement

সুতরাং মানুষের উচিত তাওহিদের মর্ম উপলব্ধি করে এর মহত্ম্য ও মর্যাদা সম্পর্কে অবগত হয়ে নিজেদের মধ্যে ধারণ করার পাশাপাশি নিজেদের সন্তানদেরকে তাওহিদের শিক্ষা দেয়া। বারবার শিশু সন্তানের সঙ্গে তাওহিদের কালেমা উচ্চারণ করা।

হজরত নুহ আলাইহিস সালাম মৃত্যুর সময় তাঁর সন্তানকে উদ্দেশ্য করে যে নসিহত পেশ করেছিলেন তা মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক জরুরি।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নুহ আলাইহিস সালামের যখন মৃত্যু উপস্থিত হল, তখণ তিনি তার সন্তানের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘আমি তোমাকে সংক্ষেপে অসিয়ত করছি। তোমাকে দুটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি এবং দুটি বিষয় থেকে নিষেধ করছি। তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর। কেননা সাত আসমান আর সাত জমিনকে যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কে রাখা হয় আরেক পাল্লায় তবে সাত আসমান ও জমিনের চেয়ে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-র পাল্লাই ভারী হবে। যদি সাত আসমান আর সাত জমিন কোনো হেয়ালিপূর্ণ বৃত্ত ধারণ করে তবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তাও ভেদ করে চলে যাবে। (মুসনাদে আহমাদ, আদাবুল মুফরাদ)

পরিশেষে...উল্লেখিত বিষয়গুলো থেকে সুস্পষ্ট যে, শিশু সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই তাওহিদের শিক্ষা দেয়া জরুরি। ছোট বেলার শিক্ষাই তাঁকে পরবর্তী জীবনের সঠিক বুঝ ও সঠিক পথে পরিচালিত করবে।

তাই শিশু সন্তান যখন আধো আধো ভাষায় কথা বলতে শুরু করে; যখন তার বাকপ্রতিভার প্রথম অভিষেক ঘটে; তখন ঈমানের শাখাগুলোর মধ্যে প্রথম ও সর্বোচ্চ কথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং রেসালাতের বাণী ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’-এর মাধ্যমেই শুরু করার অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

সন্তানের বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাওহিদ, রেসালাত ও আখেরাতের পরিপূর্ণ ধারণা দেয়া এবং তাওহিদের সঙ্গে সাংর্ঘষিক সব বিষয়েরও সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া। আল্লাহর নাফরমানির বিষয়গুলোর সঠিক ধারণা দেয়া। শিরকমুক্ত ঈমানের বিষয়ে সঠিক ধারণা দেয়া।

আল্লাহ তা্আলা মুসলিম উম্মাহর সব শিশুসন্তানকে এবং তাদের নিজেদেরকে শিরকমুক্ত ঈমানদার ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঠিক অনুসারী হিসেবে গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম