জাতীয়

শুধু হাত নয় হৃদয়ও ভেঙেছে ডাক্তার শামীমের

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক রোগীর মৃত্যু নিয়ে রোববার ডাক্তারদের সঙ্গে স্বজনদের হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনায় আহত হন শামীমুর রহমান শামীমসহ পাঁচজন ডাক্তার ও একজন আনসার সদস্য। গুরুতর আহত ডা. শামীম বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৫ নং কেবিনে ভর্তি। তার হাত ভেঙে গেছে।

Advertisement

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ডা. শামীম এই প্রতিবেদককে বলেন, সব রোগীকে সমান গুরুত্ব দিয়ে সেবা করি। কারণ রোগীদের সেবা করাই আমাদের কাজ। যে রোগীকে বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করলাম, দফায় দফায় রোগীর পরিবার ও স্বজনদের ব্রিফ করলাম তারাই আমাকে মারলেন, আমার হাতটা ভেঙে দিলেন। এর আগে কখনও এভাবে অপদস্ত হয়নি। শুধু হাত নয় ভাই, হৃদয়টাও ভেঙে গেছে। চোখ ভিজে আসে ডাক্তার শামীমের।

রোববার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা হাত নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাঁতরাচ্ছেন ডা. শামীম। তার স্বজনরা দেখতে আসছেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের পরামর্শে তার সেবা চলছে।

দুই বছর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন ডা. শামীমুর রহমান শামীম। গতকালও রুটিনমাফিক দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। ঘটনা সম্পর্কে ডা. শামীম, গতকালও আমি কয়েক দফায় রোগীর স্বজনদের রোগীর সর্বশেষ অবস্থা ব্রিফ করেছি। রোগীর অবস্থা এখানে ভর্তির আগেই খারাপ ছিল। হার্ট অ্যাটাকের তিন দিন পর এখানে আনা হয়। হার্ট অ্যাটাকের সিরিয়াস স্টেজে ছিলেন ওই রোগী।

Advertisement

‘বাঁচা-কিংবা মারার ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া কোনো ডাক্তারের নেই। ডাক্তাররা সুস্থতার জন্য সেবা দেন, যথাযথ চিকিৎসাপত্র দেন। একজন রোগীকে বাঁচিয়ে তোলায় সহযোগী তো ভাই আমরাই। তবে কেন এমন অপমান?’ বলেন ডা. শামীম।

ডা. শামীম বলেন, তারা কিছু বুঝে উঠার আগে মারধর শুরু করে। নারী ডাক্তারদের উপর চেয়ার ছুঁড়ে মারে। সিসিইউতে ভাঙচুর চালিয়েছে তারা। আনসার সদস্যদেরও মারধর করেছেন। এর কোনোটাই মানার মতো নয়। কারণ রোগীর অবস্থা আগেই আমরা ব্রিফ করেছি।

‘আমার হাত ভেঙে গেছে।, হাতের হাড়ে ফ্র্যাকচার ধরা পড়েছে। এখন চিকিৎসা সেবায় থাকা তো দূরের কথা হাঁটা-চলাও বন্ধ হয়ে গেলো। হাতের সঙ্গে আমার হৃদয়টাও ভেঙে গেছে ভাই।’

ডা. শামীমের বাবা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ড. মো. মেহেদি মাসুদ ছেলেকে দেখতে এসে বলেন, সিরিয়াস রোগী মারা গেলে ডাক্তারদের দোষ কী? আমার আরও এক ছেলে ডাক্তার। এই ঢামেক থেকেই পাস করেছে । শামীমও বিসিএস দিয়ে ডাক্তারই হয়েছে। ওর ইচ্ছে মানুষের সেবা করবে। এই যদি হয় ডাক্তারের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা তবে এ পেশা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। ভীষণ খারাপ লেগেছে। এটা মানা যায় না।

Advertisement

উল্লেখ্য, গতকালের ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করেছে ঢামেক কর্তৃপক্ষ। রোববার রাত ৮টার দিকে ঢামেকের করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলা নং ৩৪। শাহবাগ থানার ইন্সিপেক্টর (তদন্ত) মো. জাফর আলী বিশ্বাস মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জেইউ/এআরএস/জেআইএম