জাতীয়

মামলা করবে ঢামেক হাসপাতাল

যারা চিকিৎসকদের মারধর করেছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন।

Advertisement

তিনি বলেছেন, আমরা কাউকে জিম্মি করিনি। বরং চিকিৎসকদের ওপর হামলা হয়েছে। তাদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এমন ঘটনায় তো একটা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হবেই। প্রত্যেকটি কমিউনিটির একটা সেন্টিমেন্ট আছে। সেটাই এখানে হয়েছে। সেজন্যই কিছু সময় জরুরি বিভাগ বন্ধ ছিল। এই সময় আমরা সবার সঙ্গে আলোচনায় বসেছি। আগামীতে ডাক্তারদের নিরাপত্তার বিষয়টি কী হবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

কিছু হলেই কেন জরুরি বিভাগ বন্ধ করে দেয়া হয়? জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতাল পরিচালক এসব কথা বলেন, সেইসঙ্গে মামলা করার কথা জানান।

রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক-আনসার সদস্যদের ওপর স্বজনেরা হামলা চালানোয় ৩ ঘণ্টা জরুরি বিভাগ বন্ধ থাকার পর রোববার বিকেল ৫টায় জরুরি বিভাগের সামনে সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, চিকিৎসাসেবায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রোগীরা এখানে আসেন। তাদের সুস্থতায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকি। দক্ষ চিকিৎসকদের দিয়ে এত দ্রুত চিকিৎসাসেবা খুব কম হাসপাতালে দেয়া হয়। কিন্তু এরপরও চিকিৎসকদের মারধর, লাঞ্ছিতের ঘটনা মানা যায় না।

Advertisement

তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমি হাসপাতালেই ছিলাম। বহিরাগত রোগীর স্বজনরা আমাদের চিকিৎসক ও আনসারদের যেভাবে মারধর করেছে তা কল্পনাতীত। চিকিৎসকের হাত ভেঙে দিয়েছেন তারা।

যে রোগী মারা গেছেন তাকে গতকাল (শনিবার) এখানে ভর্তি করা হয় জানিয়েছে তিনি বলেন, গত তিনদিন আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হন ওই রোগী। তিনদিন উনি বাইরে ছিলেন। এখানে মুমূর্ষু অবস্থায় আনা হয়। তবু্ও সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়। ডাক্তাররা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে রোগীর অবস্থা খারাপ হয় ও বাস্তবতা হলো রোগী মারা যান। এ ঘটনার পরপরই রোগীর স্বজনরা চিকিৎসকদের ওপর চড়াও হন। যে ডাক্তাররা আপ্রাণ চেষ্টা করলেন রোগীকে বাঁচানোর জন্য তাদের ওপর হাত দেয়া হলো, লাঞ্ছিত করা হলো। এটা মানা যায় না। অন্য যেসব ডাক্তার খবর পেয়ে আসেন তাদেরও মারধর করা হয়।

করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) প্রধান অধ্যাপক ডা. ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, পাশে বসে ২০ মিনিট ধরে আমি স্বজনদের বলেছি কেন রোগীর অবস্থা খারাপ। এরপর আমি রাউন্ড শেষে ক্লাসে যাই। পরে এসে আজব কথা শুনতে পাচ্ছি। চিকিৎসকদের কোনো ভুল ছিল না। ম্যানেজমেন্টেরও কোনো ভুল ছিল না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রিন্সিপাল অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, রোগী যখন মারা গেলেন তখন প্রথমে আনসারদের মারধর করা হলো। কারণ কী জানতে চাইলে তারা বললেন রোগীর চিকিৎসার সময় কেন ভেতরে ঢুকতে দেয়া হলো না? যে ডাক্তার এত চেষ্টা করল তাদের ওপর হাত দিল আনসারদের মারধরে বাধা দেয়ায়।

Advertisement

তিনি বলেন, নিশ্চয় এখানকার ডাক্তারা ভালো চিকিৎসা দেন বলেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ আসেন। দক্ষ ডাক্তারদের সফলতা ছোট্ট ঘটনায় ম্লান করে দেয়। এটা ঠিক না। এখানে চিকিৎসকদের কোনো ভুল ছিল না।

রোববার দেড়টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন নওশাদ নামে এক রোগীর মৃত্যু ঘটনায় ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ তুলেন রোগীর স্বজনরা।

এ নিয়ে চিকিৎসক ও আনসার সদস্যদের ওপর চড়াও হন রোগীর স্বজনরা। এ ঘটনায় বিকেল পৌনে ৩টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেট ও চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন চিকিৎসকরা। বিপাকে পড়েন বিভিন্ন জেলা শহর থেকে আসা সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনরা। এরপর বিকেল ৫টার দিকে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়।

জেইউ/জেডএ/জেআইএম