অর্থনীতি

তিন মাসে মোট লক্ষ্যমাত্রার ৪৩ শতাংশ সঞ্চয়পত্র বিক্রি

বিনিয়োগে খরা, ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা, ব্যাংক আমানতের সুদহার কম ও পুঁজিবাজারে আস্থাহীনতাসহ নানা কারণে এখন সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মোট লক্ষ্যমাত্রার ৪৩ শতাংশ।

Advertisement

জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতরের সর্বশেষ হাল নাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (জুলাই- সেপ্টেম্বর) প্রথম তিন মাসের সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট আয় দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে নিট আয় ছিল ১১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। ফলে তিন মাসের একত্রিত হিসেবে এক বছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে ৯ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা।

এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই সঞ্চয়পত্র বিক্রির মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪৩ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে নিট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।

Advertisement

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট আয় গত বছরের তুলনায় বাড়লেও একক মাস হিসেবে সেপ্টেম্বরে কমেছে। গত মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট আয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই মাসে যা ছিল ৩ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। আলোচ্য মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে ৫ শতাংশ।

তবে তার আগের মাস অর্থাৎ আগস্টে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট আয় হয়েছে ৩ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই মাসে ছিল ৪ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে সাড়ে ৪৪ শতাংশ। এ সময় ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের জুলাইয়ে ছিল ৩ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধের পর যে পরিমাণ অর্থ অবশিষ্ট থাকে তাকে বলা হয় নিট বিনিয়োগ। ওই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা থাকে এবং তা সরকার বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যয় করে।

Advertisement

বিনিময়ে সঞ্চয়পত্র গ্রাহকদের প্রতিমাসে মুনাফা দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনিয়ম আর কারসাজির কারণে দেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কম। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যও তেমন ভালো যাচ্ছে না। একই সঙ্গে চলছে বিনিয়োগ মন্দা। ফলে ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার পাহাড় জমে গেছে। এতে ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়েই আমানতে সুদহার কমিয়েছে। অন্যদিকে এখন সঞ্চয়পত্রে সুদহার ব্যাংকের চেয়ে বেশি। যার কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানোর জন্য অনেকেই ব্যাংক থেকে আমানত তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন।

তবে সঞ্চয়পত্রের এ ঋণের টাকা সরকারকে সঠিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন এ অর্থনীতি বিশ্লেষক। তা না হলে এই ঋণ বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করতে হয়।

উল্লেখ্য, সঞ্চয়পত্রগুলোর মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

অপরদিকে বর্তমানে তিন বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এবং তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

এসআই/এমএমজেড/জেআইএম