রাখাইনে নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানের সময় ‘অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ’র অভিযোগে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পরিকল্পনা করছে বলে গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে জানা যায়।
Advertisement
ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি একটি নথি পেয়েছে। ওই নথিতে দেখা যায়, গত ১৬ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত একটি চুক্তিতে সই করেছেন। চুক্তিতে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো অনুষ্ঠানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান ও জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানাবে না ইইউ। একই সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সব ধরনের বাস্তব প্রতিরক্ষা সহযোগিতা পর্যালোচনা চলছে।
নথিতে বলা হয়, রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ইইউ আরো কঠোর পদক্ষেপের কথা চিন্তা করবে। এমনকি তা হতে পারে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও।
উত্তর রাখাইনের মানবিক সঙ্কট নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের শুনানিতেও আলোচনা হয়েছে। এ দুই বৈঠকেই স্বীকার করা হয়েছে যে, মিয়ানমারের শাসন ক্ষমতা সমান্তরালভাবে পরিচালনা করছে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি ও সেনাবাহিনী।
Advertisement
রাখাইনের সঙ্কট সমাধানে এবং মিয়ানমারে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উন্নয়নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞায় কৌশলগত সঠিক কোনো সমাধান হবে কী? মিয়ানমারের ইংরেজি ভাষার দৈনিক ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমারের এক প্রতিবেদনে এ প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং জ্যেষ্ঠ সেনাকর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইইউর পরিকল্পিত এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার বলছে, মিয়ানমারের সেনাশাসনের সময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সম্পর্কে প্রথমে আমাদের ভাবা দরকার। ২০১১ সালে গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু হওয়ার আগে দেশটির সেনা সরকার ছিল কুখ্যাত; বিশ্বের সবচেয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের অন্যতম। সামরিক জান্তার শাসন ছিল ভয় আর বলপ্রয়োগের।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯০ সালে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরে ২০১৩ এবং ২০১৬ সালে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তবে এ নিষেধাজ্ঞা সেনা সরকারের ওপর খুব সামান্যই প্রভাব ফেলে।
ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার বলছে, উপনিবেশিক শাসিত অনেক দেশই রাখাইনের মতো একই ধরনের সমস্যার মুখোমুুুখি হয়েছে। অনেক দেশই সমাঝোতা, প্রজ্ঞা এবং দুরদৃষ্টি সম্পন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে সমম্যার সমাধানও করেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীকেও সেসব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত।
Advertisement
‘গত ২৫ আগস্ট এবং গত বছরের ৯ অক্টোবর উত্তর রাখাইনে চরমপন্থীদের হামলার জবাবে সেনাবাহিনীর কঠোর অভিযানের ব্যাপক নিন্দার ঝড় উঠেছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। সেনাবাহিনীর কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং ভুলগুলো খুঁজে বের করা উচিত।’
রাখাইনের ঘটনা তদন্তে লে. জেনারেল আয়ে উইনের নেতৃত্বে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো উচিত। সেনাপ্রধান মিং অং হ্লেইং ১৩ অক্টোবর কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ২৫ আগস্টের পর সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় সামরিক আচরণবিধি মানা হয়েছে কি-না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। কমিটির পূর্ণাঙ্গ তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।
সেনাবাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, বিশ্বকে দেখানো যে তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ মোকাবিলায় তারা কাজ শুরু করেছে। তবে বিপদের বিষয় হলো, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তার জবাব আসবে অত্যন্ত কঠোর উপায়ে; যা মিয়ানমার এবং রাখাইনের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর হবে।
এসআইএস/আরআইপি