‘মানুষের প্রতিটি কাজই নিয়তের ওপর নির্ভর করে। ওই ব্যক্তি তা-ই পায়; যা সে নিয়ত কবে বা কামনা করে’- এটি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণা। ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ বুখারি এ হাদিসের মাধ্যমেই শুরু করেছেন।
Advertisement
আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন, ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব অর্পণ করেন না। যে ভালো উপার্জন (কাজ) করবে, সে তার প্রতিদান পাবে; এবং যে মন্দ উপার্জন (কাজ) করবে, সে তার প্রতিফল পাবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৮৬)
কোনো ব্যক্তি যদি ভালো কাজ করে সে ভালো কাজের বিনিময় লাভ করবে। আর যদি অন্যায় কাজ করে তবে অন্যায় কাজের পরিণতি ভোগ করবে। তবে আল্লাহ তাআলা বিনিময় প্রদানে হেকমত অবলম্বন করেছেন।
মানুষের কল্যাণে ভালো কাজের বিনিময় দেন অনেকগুণ। আর মন্দ কাজের বিনিময় তা-ই দেন; যা সে করে থাকে। মন্দ কাজের বিনিময়ে কোনো বেশি-কম করেন না।
Advertisement
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে ভালো কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হাদিসে পাকে ইরশাদ করেন-
হজরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি একটি কল্যাণমূলক কাজ করবে তার জন্য রয়েছে অনুরূপ ১০টি কল্যাণমূলক পুরস্কার; এমনকি আমি তা বাড়িয়ে দেব।
আর যে ব্যক্তি একটি মন্দ কাজ করবে তার জন্য রয়েছে অনুরূপ একটি মন্দ প্রতিদান অথবা আমি তাকে ক্ষমা করে দেব (যদি সে অনুতপ্ত হয়ে আমার কাছে ক্ষমা চায় ও ভবিষ্যতে অন্যায় কাজ না করার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে)আর যে ব্যক্তি আমার (আনুগত্যের) দিকে এক বিঘত (আধা হাত) এগিয়ে আসবে আমি তার (কল্যাণে) প্রতি এক হাত এগিয়ে আসব।
আর যে ব্যক্তি আমার (আনুগত্যের) দিকে এক হাত এগিয়ে আসবে আমি তার (কল্যাণে) প্রতি এক বাহু (দুই বাহু সমান) এগিয়ে আসব।
Advertisement
আর যে ব্যক্তি আমার (আনুগত্যের) দিকে হেঁটে আসবে; আমি তার (কল্যাণের) দিকে দৌড়ে যাব।
আর যদি কেউ আমর সঙ্গে শিরক না করে (আমার সঙ্গে শরিক বা অংশদার সাব্যস্ত না করে) পৃথিবীসম গোনাহ (পাপ) নিয়ে আমার সামনে হাজির হয় (আমার কাছে ক্ষমা চায় ও তাওবা করে) তবে আমিও তার সামনে অনুরূপ (পৃথিবীসম) বিশাল ক্ষমা নিয়ে হাজির হব।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ)
কল্যাণের কাজের প্রতিদান প্রদানে আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি যে বিশাল অনুগ্রহ ও মেহেরবানী করবেন তার প্রমাণ আলোচ্য হাদিসে কুদসি থেকেই অনুমিত হয়।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য হাদিসে বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের আকৃতি ও ধন-সম্পদের দিকে তাকাবেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কর্মের দিকে খেয়াল করবেন।’ (মুসলিম)
এ কারণেই বান্দা যেন সব সময় আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করতে পারে। তার বিধি বিধান যথাযথ পালন করতে পারে সে জন্য আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ কামনা করা উচিত।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বান্দাকে কল্যাণের কাজের পাশাপাশি আল্লাহর নাফরমানি থেকে মুক্ত থাকতে তাওবার নির্দেশ দিয়ে থাকেন। যে নির্দেশ পালনে আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি আরো বেশি কল্যাণ দিয়ে থাকেন।
প্রিয়নবি তার উম্মতকে লক্ষ্য করেন বলেন, ‘হে মানুষ সকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর; ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আমি প্রতিদিন আল্লাহ তাআলার কাছে একশত বার তাওবা করি।’ (মুসলিম)
প্রিয় নবী ছিলেন নিষ্পাপ, মাসুম। তার জীবনে কোনো গোনাহ ছিল না। আল্লাহ তাআলা তার জীবনের আগের এবং পরের সব গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে কোরআনের আয়াত নাজিল করেছেন।
উল্লেখিত কোরআনের আয়াত ও প্রিয় নবীর হাদিস দ্বারা মানুষকে নসিহত প্রদান এবং তা কাজে বাস্তবায়নের তাগিদই দেওয়া হয়েছে। যা মানুষকে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা দান করবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কল্যাণ ও নৈকট্য লাভে ভালো কাজ করার নিয়ত ও তা কাজে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। অন্যায় ও মন্দ কাজ থেকে হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম