বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে রয়েছেন উখিয়ার পথে। শনিবার বেলা ১১টার দিকে গুলশানের বাসভবন থেকে যাত্রা শুরুর পর রাতে চট্টগ্রাম পৌঁছান বেগম জিয়া। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে রাত থেকে রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন তিনি।
Advertisement
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে মহাসড়কের দুই পাশে দাঁড় করানো হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও। স্কুলের নির্ধারিত পোশাক পরিয়েই তাদের দাঁড় করানো হয়েছে।
রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
পটিয়ার গাছবাড়িয়া এলাকায় আবদুস সামাদ রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের এবং পটিয়া সরকারি কলেজের সামনে প্রতিষ্ঠান দু’টির শিক্ষার্থীরা ইউনিফর্ম পরে সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়েছিল। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি হাতে নিয়ে দলীয় স্লোগানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তাদের উচ্ছাস করতেও দেখা গেছে।
Advertisement
কেউ কেউ আবার খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে নানা স্লোগান দিয়ে সহপাঠীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছে।
শিক্ষক ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা তাদের সুশৃঙ্খলভাবে রাস্তায় দাঁড়াতে সহযোগিতা করেছেন।
পটিয়ার পর চন্দনাইশ এলাকাতেও একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে গাছবাড়িয়া নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পরেই খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষা করছিল। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরাও দাঁড়িয়েছিলেন রাস্তায়।
গাছবাড়িয়া নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান রিয়াদ জানায়, পৌনে দুই ঘণ্টা ধরে বিএনপি চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানাতে সড়কে অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে।
Advertisement
ক্লাস বন্ধ রেখে কেন অভ্যর্থনা জানাতে রাস্তায় এসেছ- এমন প্রশ্ন শুনে মুচকি হেসে চলে যায় রিয়াদ।
প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষক অবশ্য দাবি করেছেন, বাচ্চারা স্বতস্ফুর্তভাবে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে।
রোববার দুপুর সোয়া ১২টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন খালেদা জিয়া।
প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের অভ্যর্থনা জানাতে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করার চিত্র পুরনো। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা থাকলেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষামন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারি করে; যেখানে নির্দেশ দেয়া হয়, বিশিষ্ট ব্যক্তি বা জনপ্রতিনিধিদের সংবর্ধনা দিতে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করানো যাবে না।
পরিপত্রে বলা হয়েছিল, ছাত্রছাত্রীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখলে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খালেদার সঙ্গে গাড়িবহরে দলের শীর্ষ নেতা ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতারাও রয়েছেন।
রোববার চট্টগ্রাম থেকে খালেদার যাত্রা শুরুর পর দেখা গেছে, সেখানকার সার্কিট হাউজ থেকে আমানত শাহ সেতু পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে নেতাকর্মীদের ঢল। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি উৎসুক জনতাও খালেদা জিয়াকে দেখতে রাস্তার দু’পাশে জড়ো হয়েছিলেন।
রাস্তা দখল করে বিএনপি নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে পথচারীরা দুর্ভোগেও পড়েন। পায়ে হেঁটেই তারা গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন। আমানত শাহ সেতুর আগে দলের হাজারও নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে প্রায় দু’ঘন্টা ওই রুটে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের খালেদার এই যাত্রার বিষয়ে প্রশ্ন রেখেছিলেন, তিনি কেন হেলিকপ্টারে যাননি?
খালেদা জিয়া দুপুর সোয়া ১২টায় সার্কিট হাউস বের হলেও সকাল ৯টা থেকেই রাস্তার দু’পাশে অসংখ্য নেতাকর্মী অবস্থান নেন। বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন হাতে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রাখেন এলাকা।
সন্ধ্যার মধ্যে কক্সবাজারে পৌঁছে সার্কিট হাউজে রাতে থাকবেন খালেদা জিয়া। আগামীকাল উখিয়াতে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন তিনি। সেখানে দলের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণও করবেন।
গতকালের যাত্রায় ফেনীর মহিপালের পর সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়েও হামলার মুখে পড়ে খালেদার গাড়িবহর। এই হামলার জন্য বিএনপিকেই দুষছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বড় নিউজ সৃষ্টির জন্য বিএনপিই সুপরিকল্পিত নিজেদের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে সরকার তার গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে।
এমএম/এনএফ/এমএস