একটানা ক্লাস করতে যখন একঘেয়েমি লাগে; সবাই তখন দূরে কোথাও ঘুরে আসার কথা ভাবছিলো। আর সেই সুযোগও এসে গেল। কারণ বৃহস্পতিবার ছুটি থাকায় শুক্র ও শনিবারসহ একটানা তিন দিনের ছুটি। তাই সিদ্ধান্ত হলো এবার ভ্রমণ হবে। গন্তব্যস্থল নাপিত্তাছড়া পাহাড়ি ঝরনা ও বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত। মোট আঠারো জন প্রস্তুত ভ্রমণে যাওয়ার জন্য। এদের মধ্যে জেসমিন, জুঁই, সানি ও ডালিয়ার আগ্রহ যেন একটু বেশি!
Advertisement
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর মাইক্রোযোগে আমরা ষোলো জন কমলাপুর রেল স্টেশনে পৌঁছলাম। সেখানে জায়েদ ও রায়হান দলভুক্ত হলো। চট্টগ্রামগামী ট্রেন ছাড়তে অনেক দেরী হবে। প্ল্যাটফর্মে তাওফিক তার ক্যামেরা নিয়ে সবার গ্রুপ ফটো তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পরে সবাই পার্শ্ববর্তী রেস্টুরেন্ট থেকে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। ট্রেন ছাড়ল রাত সাড়ে দশটায়। তখন সবার মাঝে অন্যরকম অনুভূতি বিরাজ করছে।
যাওয়ার পথে অনেক মজা হলো। ট্যুরে না গেলে হয়তো অনেক কিছুই মিস করতে হতো! এমন সুন্দর পাহাড়-ঝরনা-সাগর দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতাম।
> আরও পড়ুন- ঘুরে আসুন প্রকৃতিকন্যা বাকৃবি : শেষ পর্ব
Advertisement
সারারাত ঘুমানোর সুযোগ হলো না। খুব ভোরে ফেনী স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম। সবাই হাত-মুখ ধুয়ে সকালের নাস্তা করে নিলাম। সেখান থেকে ডেমু ট্রেনের মাধ্যমে আমরা পৌঁছলাম বড়তাকিয়া স্টেশনে। ওখান থেকে খানিকটা জায়গা বাসে চড়ে বাকি রাস্তা হেঁটে গিয়ে আমরা পৌঁছলাম নাপিত্তাছড়ায়। রাস্তার আশেপাশে কিছু ছোটখাটো রেস্টুরেন্ট আছে। যাওয়ার পথে অর্ডার দিয়ে গেলে তারা খাবার প্রস্তুত করে রাখবে। খাবারের দামও তুলনামূলক কম। এমনকি যাত্রীদের ব্যাগ বা মালামাল সযত্নে রাখার ব্যবস্থাও তারা করে দেয়। যাওয়ার পথে অবশ্যই প্রত্যেককে একটি করে লাঠি নিয়ে যেতে হবে। কারণ লাঠিটা আত্মরক্ষার কাজ করবে। আর অবশ্যই আগেভাগে একজোড়া জুতো নিয়ে যেতে হবে, যা পানিতে ভেজানো যাবে নির্বিঘ্নে এবং পাহাড়ি রাস্তায় ওঠানামা করতে সাহায্য করবে।
কাছের একটি রেস্টুরেন্টে অতিরিক্ত মালপত্র রেখে, খাবারের অর্ডার দিয়ে পোশাক পরিবর্তন করে মূল জার্নিতে নেমে পড়লাম। গাইড আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল। অঙ্কন, রিপন, রতন, নাসিম, জহিরুলসহ সবাই মোবাইল ক্যামেরা দিয়েই সেফলি বা ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এদিকে কাইজার তার ডিএসএলআর ক্যামেরার মাধ্যমে একের পর এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবি তুলতে তুলতে যেন আত্মহারা হয়ে গেল!
কয়েক মাইল দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা হেঁটেই আমরা বিভিন্ন ঝরনা পরিদর্শন করলাম। ওপর থেকে ঝরনার পানি পড়ার দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। অনেকেই ঝরনার পানি নিয়ে মেতে উঠল। শত শত ফুট উঁচু পাহাড় ডিঙিয়েও সবাই সতেজ মনোভাব নিয়ে এগিয়ে চলল।
> আরও পড়ুন- পাহাড়-ঝরনাকে বাঁচতে দিন!
Advertisement
অবশেষে পাহাড়-ঝরনা পরিদর্শন শেষে আবার ফিরে এলাম ছোট্ট রেস্টুরেন্টে। পোশাক পাল্টে, দুপুরের খাবার সেরে তৈরি হয়ে সবাই চললাম আরেক গন্তব্যস্থল বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকতের উদ্দেশে। সিএনজিতে সেখানে পৌঁছতে প্রায় বিকেল হয়ে গেল। আবার সবাই সাগর তীরে আনন্দে মেতে উঠল। লোভ সামলাতে না পেরে কাইজার, সবুজ ও আমি নেমে পড়লাম সাগরে সাঁতার কাটতে। আমাদের দেখাদেখি আরও অনেকেই নামল। কেউ কেউ তীরের অল্প পানিতে পা ভিজিয়ে হাঁটাহাঁটি করতে লাগল। সেইসঙ্গে ক্যামেরায় ক্লিক কিন্তু চলতে লাগলো অবিরাম!
সাগর তীরে সূর্যাস্তের দৃশ্য সবাইকেই বিমোহিত করে। সূর্যাস্তের পর আমাদের চেতনা ফিরলো, ঢাকায় ফিরতে হবে। আবার সিএনজিযোগে বাঁশবাড়িয়া বাজারে পৌঁছলাম আমরা। সেখান থেকে বাসযোগে ফেনী পৌঁছলাম। নাপিত্তাছড়া ও বাঁশবাড়িয়া চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত। ফেনী থেকে ঢাকাগামী বাসে চড়ে ফিরে এলাম। আসার সময় গল্প, হৈ-হুল্লোড় করতে ভুল হলো না। বাস থামল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেটের সামনে।
সবাই নিরাপদে ক্যাম্পাসে ঢুকলাম রাত প্রায় সাড়ে চারটার দিকে। সবাই কিছুক্ষণ গল্প করে, বাইরের দোকান থেকে নাস্তা সেরে ভোরে বিদায় নিয়ে যার যার গন্তব্যে চলে গেল। এই অল্প সময়ে আমরা অনেক কিছুই উপভোগ করলাম, যা সবার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আবারও এমন ভ্রমণের প্রত্যাশা রয়ে গেল সবার!
এসইউ/পিআর