আন্তর্জাতিক

আইএসমুক্ত রাকায় বিয়েতে নাচ-গান-লিপস্টিক

আইএসের দখলমুক্ত হওয়ার পর সিরিয়া যেন একটু একটু করে বদলে যেতে শুরু করেছে। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে রাকার একটি বাড়িতে। সেখানে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে নাচ-গানে এক সঙ্গে অংশ নিয়েছেন নারী-পুরুষরা। খবর এএফপির।

Advertisement

মাত্র এক মাস আগেও এমন ঘটনা কল্পনাও করা যেত না। কারণ যখন আইএস ওই এলাকার দখল নিয়েছিল তখন থেকেই নাচ, গান, মেয়েদের সাজসজ্জার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল।

রাকার পশ্চিমাঞ্চলীয় যাজরা এলাকার বাসিন্দারা এএফপিকে জানিয়েছেন, শুক্রবার আহমেদ এবং হেবা নামে রাকার দুই বাসিন্দার বিয়ে হয়েছে। চলতি মাসের ১৭ তারিখে আইএসের হাত থেকে ওই এলাকা দখল করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স।

আইএসমুক্ত হওয়ার পর এটা ওই শহরের প্রথম বিয়ে। বিয়ের আনন্দে নারী, পুরুষরা একসঙ্গে নাচ গান করেছেন। হেবাকে বউ হিসেবে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আগে তো বিয়েতেও মেয়েরা সাজসজ্জা করতে পারতেন না এবং পুরুষদের সামনেও আসতে পারতেন না।

Advertisement

আইএসের তিন বছরের শাসনে সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ কঠোর নিয়ম আর শাসনের মধ্যে ছিলেন। সেখানে বর্বর অত্যাচার চালিয়েছে আইএস। নাচ-গান, পোশাক, মেয়েদের সাজসজ্জা, নারী-পুরুষদের এক সঙ্গে চলাফেরার ওপর কঠোর নিয়ম জারি করে তারা। জঙ্গিদের আতঙ্কে লোকজন স্বাভাবিক কাজকর্ম করতেও ভয় পেত।

বরের পরিবার অন্যদের মতো জঙ্গিদের ভয়ে নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। পরে শহরটি আইএসের হাত থেকে মুক্ত হওয়ার পর তারা আবার ফিরে আসে। এরপরেই তারা নাচ-গান আর আনন্দের মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে। আইএসের হাত থেকে প্রথম মুক্ত হয়েছিল রাকার যাজরা জেলা।

অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানোর সময় আহমেদের বাবা উথমান ইব্রাহিম বলেন, আমরা খুব খুশি। জিহাদিরা এই এলাকা ছাড়ার পর এটাই প্রথম বিয়ে।

তিনি এএফপিকে বলেন, আইএস আসার আগে আমাদের এখানে বিয়ের সময় নাচ-গান এবং আরো অনেক ঐতিহ্য ছিল। কিন্তু আইএস সব কিছু বন্ধ করে দেয়। এখানে আর কোনো অনুষ্ঠানই হয়নি। আনন্দের সঙ্গেই তিনি বলেন, আজ এখানে আনন্দ ফিরে এসেছে।

Advertisement

যেসব নারীরা এতদিন আইএসের ভয়ে বোরকা এবং নিকাবের আড়ালে চেহারা ঢেকে রাখতেন তারাও এই বিয়েতে নিজেদের মতো করে সেজেছেন এমনকি লাল লিপস্টিকও দিয়েছেন যেটা আইএস থাকাকালীন চিন্তা করতেও ভয় পেতেন তারা।

বিয়েতে আসা এক অতিথি বলেন, আমরা আবারও জীবনকে উপভোগ করছি। বহু বছর ধরে আমরা আনন্দ, নাচ, গান কিছুই করি না। আইএস নারীদের ওপর কালো পোশাক চাপিয়ে দিয়েছিল এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিয়েতে সব কিছু কালো হলে আনন্দের কিছু কি আর থাকে? বহুদিন পর আনন্দ করতে পারছেন তারা। ওই অতিথি বলেন, আমরা এমন সময়ের জন্যই এতদিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম। আজ সব কিছুই সাদা।

আইএসের হাত থেকে শহর দখলের লড়াইয়ে বহু মানুষ নিহত হয়েছে। এখনও অনেক পরিবারের সদস্যরাই নিখোঁজ রয়েছেন। কিন্তু এই বিয়ের অনুষ্ঠান আগত অতিথিদের জন্য ভবিষ্যতের আশার আলো হিসেবে দেখা দিয়েছে।

বরের চাচী বলেন, রাকা আবারও হাসিখুশির শহরে ফিরে যাবে। ত্রিশ বছর বয়সী এই নারী বলেন, কেউ আমাদের নাচ-গানে বাধা দিতে পারবে না। আমরা নিজেদের ইচ্ছামত পার্টি দিতে পারব।

টিটিএন/আইআই