খেলাধুলা

শেষটা ভালো হবে তো টাইগারদের!

কথায় বলে ‘সব ভালো তার, শেষ ভালো যার’। এটা অনেক প্রচলিত প্রবচন। যার মূল ভাব হচ্ছে, শেষটা ভালো হলেই ধরে নেওয়া যায় সবই ভালো হয়েছে। সবার জানা, বাংলাদেশের কোটি ক্রিকেট অনুরাগী টেলিভিশন সেটের সামনে বসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টাইগারদের ব্যর্থতার ঘানি টানতে দেখেছেন। পুরো সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ আর তিন ম্যাচের ওয়ানডে মিশনে শুধু ব্যর্থতা আর ব্যর্থতা। পাঁচ খেলায় জয় ‘সোনার হরিণ’ হয়েই ছিল। জেতা তো বহুদুরে, জেতার মত অবস্থাও তৈরি হয়নি।

Advertisement

ম্যাচ জেতার জন্য যে উদগ্র বাসনা, ভাল খেলার দুর্নিবার আকাঙ্খা এবং ব্যাট ও বলে দ্যুতি ছড়ানো নৈপুন্য দরকার- তার ছিঁটেফোটাও দেখানো সম্ভব হয়নি। টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজে এমন একটি সেশন বা অংশ ছিল না- যেখানে টাইগাররা ব্যাট ও বলে প্রোটিয়াদের সাথে সমানতালে পাল্লা দিয়ে লড়াই করেছেন।

মোট কথা, টেস্ট আর ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা শুধু ব্যর্থতার ঘানি টেনেছেন। তারপরও সফরের একদম শেষভাগে এসে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে সে অন্ধকার ও কালো আকাশে হঠাৎ রাঙ্গা আলোর ঝলকানি। ব্লুমফন্টেইনে গত ২৬ অক্টোবর প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ তুলনামুলক ভাল খেলেছে। শেষ পর্যন্ত ২০ রানের হার মানলেও সফরের অন্য খেলাগুলোর তুলনায় নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের পারফরমেন্স ভাল হয়েছে এই ম্যাচে।

লক্ষ্য-পরিকল্পনা ঠিক থাকলে, একাদশ সাজানোয় আরও একটু দুরদর্শিতা দেখাতে পারলে এবং সর্বোপরি অ্যাপ্রোচ ও অ্যাপ্লিকেশনটা সময়োপযোগি হলেও ওই ম্যাচে জেতাও অসম্ভব ছিল না। যাই হোক, নিষ্ঠুর সত্য হলো- সে ম্যাচ এখন অতীত। সেটা শুধু ভিডিও ক্লিপ্স আর ইতিহাস-পরিসংখ্যানেই পাওয়া যাবে।

Advertisement

এখন সামনে আর একটি মাত্র ম্যাচ বাকি। বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকরা সেই ম্যাচের দিকেই তাকিয়ে। প্রিয় জাতীয় দল আর পছন্দের ক্রিকেটারদের কাছে তাদের আশা, শেষ ম্যাচে ভাল পারফরমেন্স ও ইতিবাচক ফল । আগামীকাল পচেফস্ট্রমের সেনউইজ মাঠে সেই খেলা।

এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টাইগারদের এটাই শেষ ম্যাচ। পুরো সফরে জয় অধরা। ৪৮ ঘন্টা আগে ব্লুমফন্টেইনে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বাদ দিলে পারফরমেন্সও মোটেই ভালো নয়। তারপরও ভাবা হচ্ছে যদি রোববার শেষ ম্যাচের পারফরমেন্স ও ফল ভালো হয়, তাহলে অন্তত শেষটা ভাল হবে। আর সেটাই হবে সান্ত্বনা। পুরো সফরে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ন করার পরও বলা যাবে, যাক শেষটা তো ভালো হয়েছে!

সবার বেশ ভালোই জানা, বাংলাদেশ টেস্টের মতো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও খুব ভালো দল নয়। টাইগারদের অ্যাপ্রোচ-অ্যাপ্লিকেশন আর পারফরমেন্স ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট পরিসরের সঙ্গে ঠিক মানানসই নয়। অতীত রেকর্ডও ভালো না। যে ফরম্যাটে টাইগারদের ট্র্যাক রেকর্ড সবচেয়ে ভালো, যে ওয়ানডেতে মাশরাফির দল গত তিন চার বছরে বিশ্বের প্রায় সব বড় বড় দলকে হারিয়েছে- সেই ৫০ ওভারের সিরিজেই ভরাডুবি ঘটেছে। কাজেই টি-টোয়েন্টিতে আর বেশি আশা করে কি হবে?

এ ভেবে সমর্থকরা চুপচাপ বসেছিলেন। তেমন প্রত্যশা ছিল না। তারা ধরেই নিয়েছিলেন সফরের অন্য সব ম্যাচের মতই হবে; কিন্তু মাঠের চালচিত্র ছিল একদম বিপরীত। পারফরমেন্সও ছিল ভাল। চার পেসার নিয়ে মাঠে না নেমে এক পেসার কমিয়ে নাসিরকে দলে রেখে একাদশ সাজাতে পারলে আর সৌম্য সরকারের সাথে আর একজন অন্তত ৩০ রানের একটি সহায়ক ইনিংস উপহার দিতে পারলে ম্যাচটা জিতে যাওয়াও অসম্ভব ছিল না।

Advertisement

সে কারণেই শেষ ম্যাচ ঘিরে এখন ভালো‘র স্বপ্ন নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এখন আর ভালো পারফরমেন্স, লড়াই-সংগ্রাম ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলা আকাশ কুসুম কল্পনা নয়। বরং মনে হচ্ছে, গত ম্যাচের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে মাঠে নামতে পারলে শেষ ম্যাচে জয় ধরাও দিতে পারে।

আগের খেলায়ই প্রমাণ হয়েছে অযথা চার পেসার খেলানোর কোনই দরকার নেই। রুবেল হোসেন ছাড়া বাকি দুই স্পেশালিস্ট পেসার শফিউল (২ ওভারে ৩৩) আর তাসকিন (২ ওভারে ২১) কিছুই করতে পারেননি। তাদের আলগা বোলিংয়ের কারণে অধিনায়ক সাকিব কাউকে চার ওভারের কোটা পূর্ণ করানোর সাহস পাননি। কি করে পাবেন?

এ দু’জনের চার ওভারেই রান উঠেছে ৫৪। ওভার প্রতি ১৩.৫০ রান করে। পেস বোলিং অলরাউন্ডার সাইফউদ্দীনও ২ ওভারে দিয়েছেন ২০ রান। রুবেল হোসেনের ৪ ওভরে উঠেছে ৩৪। মোট কথা, চার পেসার ১০ ওভারে দিয়েছিলেন ১০৮ রান। কাজেই ধরেই নেয়া যায় টিম ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিয়ই এ ম্যাচে আর চার পেসার খেলানোর ঝুঁকি নেবেন না। একজন পেসার কমিয়ে নাসিরকে দলে নিলে দলটা গোছানো হবে। শক্তির ভারসাম্যও বাড়বে। তারওপর ম্যাচটা পচেফস্ট্রমে। যেখানে পুরোপুরি ব্যাটিং উইকেট। অন্তত প্রথম টেস্টে সেটা দেখা গেছে।

ক্রিকেট সব সম্ভবের খেলা। নিশ্চিত বলে কিছু নেই। তারপরও আশা করা যায় নাসির বল করলে পেসারদের মত অত মার খাবেন না। শতভাগ ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে সারা বছর খেলে অভ্যস্ত প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা পেসার শফিউলের বলে ইচ্ছেমত রান তুলেছেন। তার বদলে নাসির, সাকিব ও মিরাজের ব্যাকআপ স্পিনার হিসেবে খেললে প্রোটিয়াদের অমন উত্তাল উইলোবাজি করা তত সহজ হবে না। ওই ম্যাচে প্রমাণ হয়েছে টার্গেট ১৭৫‘র আশপাশে থাকলে বাংলাদেশের পক্ষে টপকে যাওয়া সম্ভব ছিল।

তারপরও সৌম্য আর শেষ দিকে তরুণ সাইফউদ্দীন ছাড়া আর কারো ব্যাট কথা বলেনি। বেশ কিছু দিন খারাপ সময় কাটানো সৌম্য সে ম্যাচে প্রমাণ করেছেন, তিনি হেলা ফেলার পাত্র নন। তার সামর্থ্য আছে, ভালো খেলার। ভিতরে বারুদ আছে। তবে সামর্থ্যরে স্ফুরণ ঘটে কালেভদ্রে। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে তার নিজের পাশাপাশি দলের জন্যও মঙ্গল।

সাকিব-মুশফিক আগের ম্যাচে একসঙ্গে খারাপ করেছেন। এমন কম হয়। তারা দু’জনই বড় খেলোয়াড়। বিগ ম্যাচে জ্বলে ওঠার সব সামর্থ্য আছে তাদের। আশা করা যায় রোববার অন্তত একজনের ব্যাট কথা বলবে।

এর বাইরে সাব্বির-মাহমুদউল্লাহর ভাল খেলা জরুরি। দু’জনই পুরো সফরে কিছুই করতে পারেননি। সামনে দেশের মাটিতে বিপিএল। তার আগে জাতীয় দলের শেষ ম্যাচ। সেখানে পারফরমেন্স ভাল হলে আর জয়ের দেখা মিললে শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে শেষটাই ভাল হবে না, বিপিএল জমে ওঠার একটা সর্বোত্তম উপাদান-রসদও মিলবে। তা কি হবে? শেষটা কি ভালো হবে টাইগারদের?

আরআই/আইএইচএস/জেআইএম