সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও যথাযথ ব্যবস্থা নিলে নলডাঙ্গা মন্দিরগুলো হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। প্রায় ৫শ’ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে পারবেন দর্শনার্থীরা।
Advertisement
ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় ৫শ’ বছর আগে রাজবংশের আদিপুরুষ ভট্টরায়ণের এক উত্তরসুরী বিঞ্চুদাস হাজরা নলডাঙ্গার রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। বৃদ্ধ বয়সে বিষ্ণুদাস ধর্মের প্রতি বিশেষ অনুরাগী হয়ে সন্ন্যাসী হন এবং বেগবতী নদীর তীরে এক জঙ্গলে তপস্যা শুরু করেন। ১৫৯০ সালে মোঘল সুবেদার মানসিংহ বঙ্গ বিজয়ের পর নৌকাযোগে বেগবতী নদী দিয়ে রাজধানী রাজমহলে যাচ্ছিলেন। তার সৈন্যরা পথিমধ্যে রসদ সংগ্রহের অনুসন্ধানে বের হয়ে বিঞ্চুদাস সন্ন্যাসীকে তপস্যারত অবস্থায় দেখতে পান।
এসময় বিঞ্চুদাস সৈন্যদের খুব দ্রুত রসদ সংগ্রহ করে দেন। এতে সুবেদার মানসিংহ খুশি হয়ে সন্ন্যাসী পার্শ্ববর্তী পাঁচটি গ্রাম দান করে যান। গ্রামগুলোর সমন্বয়ে প্রথমে হাজরাহাটি জমিদারী এবং ক্রমান্বয়ে তা নলডাঙ্গা রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন এলাকাটি নল নটায় পরিপূর্ণ ছিল, তাই স্থানটি নলডাঙ্গা নামেই অভিহিত হয়।
আরও পড়ুন- গোকর্ণ গ্রামে আনন্দ ভ্রমণ
Advertisement
এরপর প্রায় তিনশ’ বছর এ বংশের বিভিন্ন শাসক বিভিন্ন সময়ে এই রাজবংশের শাসন করেন। বিভিন্ন শাসক বিভিন্ন সময়ে বিলুপ্তপ্রায় মন্দিরগুলো প্রতিষ্ঠা করেন।
এরপর ১৮৭০ সালে রাজা ইন্দু ভূষণ যক্ষ্মা রোগে মারা গেলে তার নাবালক দত্তক পুত্র রাজা বাহাদুর প্রথম ভূষণ দেবরায় রাজ্যের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এই বিলুপ্তপ্রায় কয়েকটি মন্দির; যা কালের সাক্ষী হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বেগবতী নদীর তীরে।
প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে লোকজন এই রাজবাড়ী দেখতে আসেন। মন্দির দেখতে আসা রুপা ঘোষ, তারাপদ বিশ্বাস এবং সুনীল কুমার জানান, মন্দিরগুলো ঝিনাইদহের বিরাট সম্পদ হতে পারে। কিন্তু দরকার সরকারের আন্তরিকতা। একটু পৃষ্ঠপোষকতা পেলেই হাজার হাজার মানুষ আসবে দেখতে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো, তবে দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা।
মন্দির সংস্কার কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রশান্ত অধিকারী জানান, মূলত তার ভাই অতুল অধিকারী ২০০৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে পাওয়া প্রায় দেড় কাটি টাকা ব্যয়ে রাজার ৪টি মন্দির সংস্কার করা হয়েছে। ১টি মন্দির সংস্কার অর্ধেক হয়েছে, ২য় তলার কাজ পুরো বাকি। আর বাকি ২টি মন্দির এখনো সংস্কার করা যায়নি।
Advertisement
আরও পড়ুন- শেরে বাংলার স্মৃতিধন্য সাতুরিয়া জমিদার বাড়ি
তিনি জানান, স্থানীয়দের ভাষায় এটি নলডাঙ্গা মঠ বা নলডাঙ্গা রাজবাড়ী বলে পরিচিত। কালীগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে এই প্রাচীন রাজবাড়ীর অবস্থান। বেগবতী নদীর ধারে বহুকাল ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কালীমাতা মন্দির, লক্ষ্মী মন্দির, গণেশ মন্দির, দুর্গা মন্দির, তারামণি মন্দির, বিঞ্চু মন্দির, রাজেশ্বরী মন্দিরসহ সুদৃশ্য ৭টি মন্দির। স্থানীয় লোকজন ১৬৫৬ সালে নিজেদের টাকায় প্রতিষ্ঠিত মন্দিরগুলো সংস্কার করেন।
আহমেদ নাসিম আনসারী/এসইউ/এমএস