‘আচ্ছা, ব্লুমফন্টেইনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ হঠাৎ চার পেসার নিয়ে মাঠে নামলো কেন ? শেষ পর্যন্ত কি ঐ চার পেসার খেলানোই কাল হলো ? ভক্ত-সমর্থক সবার প্রশ্ন। শুধু সমর্থকদের কথা বলা কেন , ক্রিকেট বোদ্ধা-বিশ্লেষক সবাই একমত, শেষ পর্যন্ত চার পেসার নিয়ে মাঠে নামাই হয়েছে কাল।
Advertisement
খুব বেশী ক্রিকেট পন্ডিত হবার দরকার নেই। একটি ছোট্ট পরিসংখ্যানই বলে দিবে অতগুলো পেসার খেলানোর কুফল কি হয়েছে। সবার জানা বাংলাদেশ হেরেছে ২০ রানে। শুনলে অবাক হবেন চার পেসার মিলে ১০ ওভারে রান দিয়েছেন ১০৮। আর তিন স্পিনারের ১০ ওভারের কোটায় রান উঠেছে ৮২। ১০৮ থেকে ৮২ বিয়োগ করুন। ব্যবধান ২৬। তার মানে পেসারদের দেয়া ২৬ রানই হারের মূল কারণ।
যদিও খালি চোখে মনে হচ্ছে ওপেনার সৌম্য সরকারের ঝড়ো উইলোবাজির সাথে মিডল অর্ডারে আর কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারেনি , তাই হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু একটু খুটিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে , মিডল অর্ডারের ব্যর্থতার চেয়ে বড় হলো পেসারদের বেশী রান দিয়ে ফেলা। পেসাররা অত রান না দিলে কোনভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকার রান ১৯৫ পর্যন্ত যায় না। ১৭০-১৮০’র ভিতরে থাকে। তখন বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা থাকতো যথেষ্ট।
টার্গেট ১৮০’র মধ্যে থাকলে সৌম্যর ঝড়ো ইনিংসটিই ছিল যথেষ্ট। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, সৌম্যর ব্যাট থেকে এসেছে ৩১ বলে ৪৭। আরেক ওপেনার ইমরুল করেছেন ১০। সাকিব আর মুশফিক আউট হয়েছেন ১৩ রান করে। সাব্বিরের ব্যাট থেকে এসেছে ১৯। মাহমুদউল্লাহর সংগ্রহ ছিল ৩। আর শেষ দিকে তরুণ পেস বোলিং অলরাউন্ডার সাইফউদ্দীন ২৭ বলে ৩৯ রানের ঝড়ো ইনিংস ও মিরাজ ১২ বলে ১৪ করায় বাংলাদেশ গিয়ে থেমেছে ১৭৫’এ।
Advertisement
এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে শুরু থেকেই নানা অপরিকল্পনা , অদূরদর্শিতা। একটা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ম্যাচে চার চার জন পেস বোলার খেলানোর পক্ষে কিইবা যুক্তি থাকতে পারে ? এটা টেস্ট হলে মানা যেত। কিংবা দ্রুত গতির ফাস্ট ও বাউন্সি পিচ হলেও কথা ছিল। তখন বলা যেত, নাহ , উইকেট দ্রুত গতির, বাউন্স আর ম্যুভমেন্ট বেশী। তাই বাড়তি পেসার নিয়ে খেলতে নামা।
কিন্তু ব্লুমফন্টেইনের পিচ তো আর ফাস্ট বোলিং ফ্রেন্ডলি ছিলনা। একদম নির্ভেজাল ব্যাটিং ট্র্যাক। সেখানে তিনজন পুরোদস্তুর পেসার রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদের সাথে পেসার কাম লেট অর্ডার সাইফউদ্দীনকে খেলানোর যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না কেউই।
আসুন দেখে নেই চার পেসারের কে কত ওভারে , কত রান দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় তথ্য হলো , চার পেসার খেললেও তার মধ্যে একজন ছাড়া আর কেউ ৪ ওভারের কোটা পূর্ন করতে পারেননি। রুবেল একা শুধু চার ওভার পুরো বল করেছেন। তার ঐ চার ওভারে রান উঠেছে ৩৪। এছাড়া আর একজন পেসারও দুই ওভারের বেশী বোলিং করতে পারেননি। তাসকিন দুই ওভারে ২১ রান দিয়ে বসেছেন। শফিউল দুই ওভারে বেদম মার খেয়েছেন। তার ঐ দুই ওভারে রান উঠেছে ৩৩।
সেখানে তিন স্পিনার সাকিব (৩-০- ২৮- ১) , মিরাজ (৪- ০- ৩১- ২), মাহমুদউল্লাহ ( ৩- ০- ২৩- ০) অনেক সুনিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন। তাদের বলে রানও উঠেছে তুলনামূলক কম।
Advertisement
প্রশ্ন উঠেছে, যদি চার পেসার খেলানো হলো, তাহলে তাদের মাত্র একজনকে দিয়ে চার ওভারের বোলিং কোটা পূর্ন করা কেন ? বাকি তিনজনকে কেন দুই ওভার করে বোলিং করানো ? অনেকেরই মত, এ ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশ সাজানোয় ছিল বড় ধরনের ত্রুটি ও অদূরদর্শিতা।
পেস বোলার অলরাউন্ডার সাইফউদ্দীনকে ধরে আর দুই পেসার খেলানোই ছিল যথেষ্ট। সেক্ষেত্রে বাড়তি একজন ব্যাটসম্যানকে নেয়া যেত। নাসির হোসেন হতে পারতেন সম্ভাব্য সেরা বিকল্প। একজন পেসারের বদলে নাসির খেললে দুটি কাজ হতো। এক জন বাড়তি ব্যাটসম্যান আর একজন স্পিনার দুই-ই মিলতো।
নাসির যদি দুই ওভারও বল করতেন, তাহলেও প্রোটিয়াদের রান ১৯৫ তে গিয়ে ঠেকতো না। শফিউল ২ ওভারে ৩৩ রান দিয়েছেন , প্রতি ওভারে (১৬.৫০ রান) । নাসির যদি একেক ওভারে ১০ রান করেও দিতেন, তাও ১৩ রান কম হতো।
আর তিন পেসার তাসকিন ( ০) , শফিউল ( ১) আর রুবেল ( ২) ব্যাট হাতে করেছেন ৩ রান। নাসির ১০ রান করলেই হয়ে যেত। এসব কারনেই চার পেসার ফর্মুলাকে ভুল ও অদূরদর্শি ভাবা হচ্ছে।
জাতীয় দলের সাবেক উদ্বোধনী বোলার হাসিবুল হোসেন শান্ত কোনভাবেই চার পেসার খেলানোর পক্ষে নন। তার সোজা সাপটা কথা, ‘এমন ব্যাটিং সহায় পিচে চার পেসার খেলানোর কোন কারণ খুঁজে পাইনা। আমার মনে হয় পেস বোলিং অররাউন্ডার সাইফউদ্দীনকে ধরে তিন পেসারই ছিল যথেষ্ট। বরং একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলানো যেত। ’
জাতীয় দলের সাবেক প্রশিক্ষক সারোয়ার ইমরান ভাবতেই পারছেন না চার পেসার নিয়ে মাঠে নামার পরও কেন সাকিব ও মিরাজ বোলিং উদ্বোধন করলেন? সারোয়ার ইমরানের জিজ্ঞাসা , ‘চার পেসার নিয়ে মাঠে নামার পরও বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আর অফস্পিনার মিরাজকে দিয়ে বোলিং সূচনার কোনই কারণ খুঁজে পাই না আমি।’
এআরবি/এমএমআর/আইআই