‘গরমে তো অসহ্য লাগছে। বিদ্যুৎ আসব কখন?’ রাজধানীর আগারগাঁওয়ের সরকারি জাতীয় অর্থোপেডিক (পঙ্গু) হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় সি-ডি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ৭২ বছর বয়সী রোগী মরিয়ম বেগম শুক্রবার রাত ৮টায় বেডে শুয়ে ছটফট করতে করতে মেয়েকে উদ্দেশ করে এ কথা বলছিলেন।
Advertisement
ওই রোগীর মেয়ে রোকেয়া বেগম বৃদ্ধা মাকে সান্ত্বনা দিয়ে জানালেন, এইতো কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে। মেয়ের কথা শুনে রাগত সুরে মরিয়ম বেগম বলে উঠলেন, এই কথা তো বিকেল থেকেই বলছিস।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রোকেয়া বেগম জানান, বিকেল ৩টা থেকে পঙ্গু হাসপাতালে বিদ্যুৎ নেই। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে জরুরি বিভাগ ছাড়া গোটা হাসপাতাল অন্ধকারে ডুবে আছে। পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় যাবত বিদ্যুৎ না থাকায় রোগীরা ঘুটঘুটে অন্ধকার আর গরমে ছটফট করছেন।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাসিন্দা রোকেয়া বেগম জানান, তার মা মরিয়ম বেগমের কোমর ভেঙে যাওয়ায় গত এক সপ্তাহ যাবত তিনি এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একে তো ভাঙা কোমরের ব্যথা তার উপর বিদ্যুৎহীন অন্ধকার পরিবেশে তার মা রীতিমতো প্রলাপ বকছেন। বিদ্যুৎ কখন আসবে তা অভ্যর্থনাকারীদের কাছে জানতে চেয়ে সদুত্তরও পাচ্ছেন না।
Advertisement
বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে শুধু মরিয়ম বেগম একাই নন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কয়েকশ রোগী নিদারুণ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। গোটা হাসপাতাল অন্ধকারে ডুবে থাকায় ডাক্তার ও নার্সরা যেন উধাও হয়ে গেছেন। রোগীরা যন্ত্রণায় ছটফট করলেও তাদের দেখা পাচ্ছেন না।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার মাহন্দার শেখ গ্রামের বাসিন্দা জোসনা বেগম জানান, গত এক মাসেরও বেশি সময় যাবত ভর্তি আছেন, কখনও এতো দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎহীন থাকেনি। বিকেল তিনটা থেকে হাসপাতালে বিদ্যুৎ নেই বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানান, পঙ্গু হাসপাতালের ওয়ার্ডে যে সকল রোগী থাকেন বিদ্যুৎ না থাকলে তারা গরমে কষ্ট পাবেন কিন্তু ভয়ঙ্কর কোন বিপদ হবে না। তবে সড়কসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ না থাকলে ডাক্তাররা মোমবাতি জ্বালিয়ে কোনভাবে ম্যানেজ করেন।
বিদ্যুৎ না থাকার ব্যাপারে জানতে পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবদুল গণি মোল্লার সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।
Advertisement
এমইউ/ওআর/আইআই