মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন তিন লাখ ছাড়িয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত গত দেড় মাসে তিন লাখ ১৪ হাজার রোহিঙ্গা নিবন্ধনের আওতায় এসেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মতো নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা সঙ্গে সঙ্গে ছবি সম্বলিত একটি পরিচিতি কার্ড পাচ্ছেন। তবে আইওএম’র হিসাব মতে দেশে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের মাঝে এখনো নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে আরও তিন লাখ রোহিঙ্গা। যা স্থানীয় পরিসংখ্যানে আরও বেশি বলে মনে করছেন সীমান্তবাসী।
উখিয়া উপজেলার কুতুপালং-১ কুতুপালং-২ নোয়াপাড়া, থাইংখালী-১, থাইংখালী-২ বালুখালী ও টেকনাফ উপজেলার লেদা এই ৭টি ক্যাম্পে নিবন্ধনের কাজ চলছে। পাসপোর্ট অ্যান্ড ইমিগ্রেশনের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয় গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা এ কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করছেন।
পাসপোর্ট অ্যান্ড ইমিগ্রেশনের উপ-পরিচালক আবু নোমান মোহাম্মদ জাগির জানান, এখন প্রতিদিন গড়ে ১১ হাজরের বেশি রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হচ্ছেন। নিবন্ধন কেন্দ্রে ভিড় অনেক বেড়েছে। দিনভর ছবি তুলে ও তাদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিবন্ধন কর্মীদের। সেনাবাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গাদের ছবি তুলছেন, তাদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করছেন এবং একই সঙ্গে তাদেরকে একটি করে ছবি সম্বলিত নিবন্ধন কার্ড ধরিয়ে দিচ্ছেন। অনেকটা ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মত।
Advertisement
স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মংডুর ফকিরাবাজারের আবদুল আলিম জানান, আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার আমাদের জন্য অনেক করছে। খাদ্য, ওষুধ, থাকার ব্যবস্থাসহ নিরাপত্তার জন্য পাহারাও দিচ্ছে। নিবন্ধনের আওতায় না আসলে নাকি কোনো ত্রাণ পাব না। আমাদের ক্যাম্পে নিবন্ধিতরা যেভাবে সহযোগিতা পাচ্ছেন অনিবন্ধিতরা সেভাবে পাচ্ছেন না। এটি দেখেই নিজেদের সুবিধার জন্য নিবন্ধিত হতে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এসেছি।
এদিকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) তথ্য অনুযায়ী- গত ২৫ আগস্টের পর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের নাগরিকের সংখ্যা ছয় লাখ চার হাজার। বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়িয়েছে। সরকারি হিসাবে ধরলে আরও প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা এখনও নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে। আর বেসরকারি হিসাবে তা পাঁচ লাখ।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের হয়ে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন পর্যবেক্ষণকারী সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একেএম লুৎফুর রহমান বলেন, আশ্রিত সব রোহিঙ্গাকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে নিবন্ধন কাজ অব্যাহত রয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার নিবন্ধন করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অসচেতনতার কারণে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়ে উঠছে না। এরপরও যথা সম্ভব সব অনুপ্রবেশকারীকে সহসাই নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/আইআই
Advertisement