অপহরণের ৯ দিনের মাথায় অবশেষে দেশে ফিরেলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নায়েক আব্দুর রাজ্জাক। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিজিবি প্রতিনিধি দল নায়েক রাজ্জাককে নিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরে পৌঁছান বলে জানিয়েছেন বিজিবি কক্সবাজার সেক্টর`র অতিরিক্ত পরিচালক (অপারেশন) মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম।এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া তিনটার দিকে মিয়ানমারের মংডুতে পতাকা বৈঠকে শেষে তাকে বিজিবি প্রতিনিধিদলের কাছে হস্তান্তর করে বিজিপি।মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম জানান, তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে টেকনাফ ৪২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আবু জার আল জাহিদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল মিয়ানমারের মংডুর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ছিলেন স্টাফ অফিসার মেজর মাহবুব সাবের, মেডিকেল অফিসার মেজর মো. শাহ আলম। বিজিবি প্রতিনিধিদল মংডু পৌঁছানোর পর মিয়ানমার এন্ট্রি-এক্সিট পয়েন্ট-১ এর `দেওয়ান নান্দি হল` এ ৪২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন এবং মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ দুই নম্বর ব্রাঞ্চ এর মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পতাকা বৈঠকে মিয়ানমার বিজিপি ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ২ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চ অধিনায়ক লে. কর্নেল থি হান।বৈঠক শেষে অস্ত্র (এসএমজি), ম্যাগজিন ও গোলাবারুদসহ অপহৃত রাজ্জাককে বিকেল সোয়া তিনটার দিকে ফেরত দেয় বিজিপি। পতাকা বৈঠকে রাজ্জাক অপহরণের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয় বলে জানান বিজিবির ওই কর্মকর্তা। সব প্রক্রিয়া শেষে মিয়ানমারের মংডু থেকে রাজ্জাককে নিয়ে বেলা পৌনে ৪টার দিকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় বিজিবি প্রতিনিধি দলটি। কিন্তু বৈরী আবহওয়ার কারণে বিজিবি প্রতিনিধিদলের বেগ পেতে হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে রাজ্জাকসহ প্রতিনিধিদল টেকনাফ স্থলবন্দরে এসে পৌঁছান। দেশের মাটিতে পা রাখা নায়েক রাজ্জাক কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সুস্থ্ আছি। নিজ ভূমিতে ফিরতে পেরে কি যে আনন্দ হচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।এছাড়া দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ বিজিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি।প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গাদের নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে গত ১৭ জুন বুধবার কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে নাফ নদীতে গোলাগুলির পর বিজিবি সদস্য রাজ্জাককে ধরে নিয়ে যায় বিজিপি। ওই ঘটনায় সিপাহী বিপ্লব নামে আরেক বিজিবি সদস্য গুলিবিদ্ধ হন।রাজ্জাককে ধরে নেওয়ার পরদিন ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। অপহৃত বিজিবি সদস্যকে দ্রুত ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয় তাকে।অন্যদিকে রাজ্জাককে ফেরাতে বিজিবির পক্ষ থেকে কয়েকদফা পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হলেও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাড়া না পাওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে বিষয়টি ঝুলে থাকে। বিজিপির ফেইসবুক পেইজে এরই মধ্যে নায়েক রাজ্জাকের দুটো ছবি প্রকাশ করা হয়, যাতে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাতকড়া হাতে দেখা যায়।একপর্যায়ে রাজ্জাককে ফেরত দিতে বাংলাদেশ সরকারকে শর্তও দেয় মিয়ানমার। তারা দাবি করে, মিয়ানমার উপকূলে পাচারকারীদের নৌকা থেকে উদ্ধার ৫৫৫ জনকেও বিজিবি সদস্য রাজ্জাকের সঙ্গে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গত মঙ্গলবার বলেন, মিয়ানমার `অতিরিক্ত` করছে। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বিজিপির পতাকা বৈঠকের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।# মিয়ানমারের অভিযোগ মিথ্যা : বিজিবি মহাপরিচালকসায়ীদ আলমগীর/এআরএ/আরআইপি
Advertisement