আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আস্থা ও জনপ্রিয়তার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে। দেশের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে দল দুটির গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের পর তাদের মুখোমুখি হতে হবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার কঠিন পরীক্ষায়। তাই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল দুটির ভেতরে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
Advertisement
বসে নেই নির্বাচন কমিশনও। দায়িত্ব গ্রহণের পর বর্তমান কমিশনের অধীনে প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে ইসি কতটুকু আন্তরিক, মাঠ পর্যায়ে তাদের প্রভাব কতটুকু, তাও যাচাই হবে এই নির্বাচনে। তাই সবার দৃষ্টি এখন ছয় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিকে।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর প্রথম সভা থেকে কর্পোরেশনের মেয়াদ শুরু হয়। পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ছয় মাসের মধ্যে যেকোনো দিন ভোট গ্রহণ করা যায়। রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে। প্রথমে অনুষ্ঠিত হবে রংপুর সিটির নির্বাচন। ২৮ ডিসেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেছে ইসি। আগামী মাসে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
এছাড়া আগামী বছরের ১৩ মার্চ থেকে ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিলেট, ৯ এপ্রিল থেকে ৫ অক্টোবরের মধ্যে রাজশাহী, ২৭ এপ্রিল থেকে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে বরিশাল, ৩০ মার্চ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে খুলনা এবং ৮ মার্চ থেকে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন করতে হবে। আগামী বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর মে-জুনে এসব নির্বাচন হতে পারে। রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও সিলেট, এই চার সিটির নির্বাচন একই দিনে করার চিন্তা আছে ইসির।
Advertisement
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বৃহস্পতিবার জাগো নিউজকে বলেন, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করে ইসি কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও সামনে কঠিন সময় আসছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ছয় সিটির নির্বাচন সকলের জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় সবাই উত্তীর্ণ হতে চাইবে।
‘ইসি চাইবে আস্থা ধরে রাখতে। আওয়ামী লীগ চাইবে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে। আর বিএনপি তাদের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে ক্ষমতায় আসতে চাইবে। এটা আসলে একটি এসিড টেস্ট হিসেবে কাজ করবে সবার জন্য।
মাঠে নির্বাচনী গরম হাওয়াছয় সিটি কর্পোরশেন নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কিন্তু থেমে নেই প্রার্থীরা। জাগো নিউজের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ওই সব এলাকায় হালকা শীতের হাওয়ায় সরগরম এখন ভোটের মাঠও। মেয়র থেকে শুরু করে কাউন্সিলর প্রার্থীরাও জনসংযোগ শুরু করেছেন। নানাভাবে প্রচার চালাচ্ছেন তারা। দলীয় মনোনয়ন পেতে শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপও।
চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ
Advertisement
ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দলের ভেতরে প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে নেতারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনাও করেছেন।
আগামী ১ নভেম্বর রাজশাহী, ৮ নভেম্বর রংপুর, ১১ নভেম্বর গাজীপুর ও ২৫ নভেম্বর খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় দলের সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
এ ক্ষেত্রে ছয় সিটির সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করবেন চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ছয় সাংগঠনিক সম্পাদক। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ সিলেটে, ডা. দীপু মনি গাজীপুরে, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক রাজশাহী ও রংপুরে, আবদুর রহমান বরিশাল ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে থাকবেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অন্যান্য নির্বাচনের মতো এটিও আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।
চাঙ্গা হচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরাও
বিএনপির সূত্রগুলো জানিয়েছে, দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরেছেন। ফলে নেতাকর্মীরা এখন বেশ চাঙ্গা। এছাড়া বিএনপি যে জনপ্রিয় দল তা প্রমাণ করতে ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে দলটি। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে এনিয়ে তেমন কার্যক্রম না চললেও মাঠের চিত্র ভিন্ন।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের মতো বিএনপির প্রার্থীরাও মাঠ সরগরম করে রাখছেন। ঘরোয়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভোট চাইছেন তারা। এছাড়া দলের মনোনয়ন পেতে লবিং বেড়ে গেছে। চেয়াপারসনের গুলশানের অফিস এখন প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, বিএনপি মাঠে থাকার দল। সবসময় সংগ্রাম আন্দোলনে থাকে। দলটির নেতাকর্মীরা সব সময় চাঙ্গা। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতাদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিবে কি না, তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। সব কিছু নির্ভর করছে পরিবেশের ওপর।
আস্থা ধরে রাখতে চায় ইসি
জাতীয় নির্বাচনের আগে ছয় সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হবে ইসির প্রথম পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চায় ইসি। ইসির মাঠ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, সবার কাছে বার্তা একটাই, যেকোনো মূল্যে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সব নির্বাচনই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই ছয় সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হলে পুরো পরিবেশ পাল্টে যাবে। জনগণ নির্বাচনমুখী হবে। সংসদ নির্বাচনে সবাই স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নেবেন।
এইচএস/এমএআর/বিএ